সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক ও তাঁর চাচার বিরুদ্ধে সাঁওতালদের জমি দখলের অভিযোগ
দিনাজপুর-৬ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক ও তাঁর চাচা দিনাজপুর জাতীয় পার্টির সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ করেছেন সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর কয়েকজন।
জমি ফেরত চাওয়ার কারণে ভয়ভীতি দেখানোসহ অনেকে বাড়ি ছাড়া বলেও সাঁওতালদের অভিযোগ।
তবে সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের দাবি এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন, রাজনৈতিক কারণে এসব হচ্ছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে 'সাঁওতালদের জমি ও জীবনরক্ষা আন্দোলন'- শীর্ষক ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ উঠে আসে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলায় স্বপ্নপুরী নামের বিনোদনকেন্দ্রে সাঁওতাল ও মাহালি সম্প্রদায়ের তিনটি কবরস্থান আছে।
একটি কবরস্থানের ওপর শিবলী সাদিক বাড়ি নির্মাণ করেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়।
স্বপ্নপুরী বিনোদনকেন্দ্রের স্বত্বাধিকারী সংসদ সদস্যের চাচা ও জেলা জাতীয় পার্টির নেতা দেলোয়ার হোসেনকে ভূমিদস্যু আখ্যা দিয়ে বলা হয়, তিনি সাঁওতালদের ৭৭ দশমিক ১১ একর জমি দখল করেছেন।
এলাকায় কোনো জমি নিয়ে জটিলতা দেখা দিলে জমির মালিক হয়ে যান দেলোয়ার হোসেন। এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত সাঁওতালদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও জানানো হয়।
প্রশাসনের অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার না পাওয়ার কথা উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অভিযোগ জানালে নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। সাঁওতালরা জীবন ও জমি রক্ষার দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলেন উকিল হেমব্রম নামের একজন বলেন, তাঁর ৩৩ শতাংশ জমির মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ টিকিয়ে রাখতে পেরেছেন। বাকি সব দখল করা হয়েছে। গ্রামে ভয়ে কেউ কথা বলতে পারে না।
স্বপ্নপু্রী বিনোদনকেন্দ্রের ময়লা সাঁওতালদের কিছু কবরস্থানের ওপর ফেলা হয় বলেও জানান তিনি। এছাড়া তিনি এক মাসের বেশি সময় ধরে বাড়ি যেতে পারছেন না বলেও অভিযোগ করেন।
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জের অধিবাসী আলতাফ আলী সংবাদ সম্মেলেনে বলেন, ২০১৯ সাল থেকে তাঁর দেড় একর জমি সংসদ সদস্যের স্বজনরা দখল করার পাঁয়তারা শুরু করেন।
করোনার সময় তাঁরা জমি দখলে নিয়ে নেন এবং ভয়ে তিনি এলাকায় যেতে পারছেন না। জীবনের নিরাপত্তা চান এবং জমি ফেরত চান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে গণেশ হেমব্রম, খুকুমিন হেমব্রম, রবেন মার্ডি, অখিল হেমব্রম, লুইস হাসদা, সলেমন মার্ডিসহ প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শিবলী সাদিক বলেন, তিনি নিজে কোনো বাড়ি করেননি এবং চাচার বাড়িতে থাকেন বলে জানান। এই সংসদ সদস্য বলেন, প্রায়ই তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হয়।কিন্তু এসব নিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট মামলাও নেই।
তিনিও এসবের তদন্ত চান উল্লেখ করে বলেন, অভিযোগ সত্য হলে তিনি নিজ উদ্যোগে জমি ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।
জমির সব কাগজপত্র এবং সাঁওতালদের দাবি সত্য নয় বলে জানান দিনাজপুর জাতীয় পার্টির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, তাঁর সব জমির কাগজপত্র আছে।
মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলেও ফোন ধরেননি শিবলি সাদিক। হোয়াটস অ্যাপে ম্যাসেজ দিলেও সিন করেননি। তবে ২৫ আগস্ট তিনি ফেসবুক লাইভে এসে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো অস্বীকার করেন।
২৯ মিনিটের ভিডিও লাইভে তাঁর বিরুদ্ধে ভূমিদস্যুতার অভিযোগ এনে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে দাবি করে শিবলী সাদিক বলেন, 'কারও জমি দখল করার প্রশ্নই আসে না। পরিবার থেকে এসব শিক্ষা পাইনি।'
জমির সব কাগজপত্র এবং সাঁওতালদের দাবি সত্য নয় বলে জানান দিনাজপুর জাতীয় পার্টির সভাপতি ও শিবলি সাদিকের চাচা দেলোয়ার হোসেন। তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, তাঁর সব জমির কাগজপত্র আছে। যদি আইনি প্রক্রিয়ায় গিয়ে কোথাও কাগজ দেখাতে বলে সেটাও করতে রাজি তিনি।
তিনি বলেন, 'এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে দিনাজপুরে ও ঢাকাতে এক মাসের মধ্যে দুইবার সংবাদ সম্মেলন করেছে তারা। আমাদের এখানে রেকর্ডেড জমি আছে ৩৫ শতকের মতো। তারা দাবি করছেন ৭৩ একর। এ জমি আমাদের পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া।'