গুলিস্তানকে ‘রেড জোন’ করে সহস্রাধিক হকার উচ্ছেদ
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকার রাস্তাগুলোকে লাল, হলুদ ও সবুজ এলাকায় চিহ্নিত করে হকার উচ্ছেদ কার্যক্রমের প্রথম দিনে গুলিস্তান 'রেড জোন' থেকেই সহস্রাধিক হকার উচ্ছেদ করেছে দক্ষিণ সিটির ভ্রাম্যমাণ আদালত।
রাস্তা এবং ফুটপাতের উপর অবৈধভাবে স্থাপিত দোকানপাট ও হকার উচ্ছেদের মাধ্যমে জনসাধারণের হাঁটার পথ দখলমুক্ত করতে রবিবার গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট (নুর হোসেন চত্বর) হতে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ হয়ে আহাদ পুলিশ বক্স পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মুনিরুজ্জামান।
সকাল ১১টা হতে শুরু হয়ে বেলা ৩টা পর্যন্ত এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করায় ৯ ব্যক্তিকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ এর ৯২ ধারার ৭ ও ৮ নম্বর উপধারায় এই জরিমানা আদায় করা হয়।
অভিযান প্রসঙ্গে দক্ষিণ সিটির সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মুনিরুজ্জামান বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরুর পর হতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে যান চলাচলের পরিমাণ বেড়েছে। তাই মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে যান চলাচল ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় জনসাধারণের চলাফেরা নির্বিঘ্ন করতে মেয়র মহোদয়ের নির্দেশনার আলোকে গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট হতে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ হয়ে সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্স এবং বঙ্গভবন ও মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারগামী ও ফ্লাইওভার হতে গুলিস্তান চত্ত্বর এলাকাকে 'রেড জোন' ঘোষণা করা হয়েছে। এই রেড জোন হতে সকল প্রকার হকার এবং রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে অবৈধভাবে গড়ে তোলা স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
তিনি জানান, এ এলাকায় উচ্ছেদ অভিযানের আগে ৩ দিন টানা মাইকিং করা হয়।
তিনি বলেন, আমরা এখানে কোনও হকার বসতে এবং কাউকে অবৈধভাবে দোকানপাট ও স্থাপনা নির্মাণ করতে দেবো না। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
জানা যায়, বঙ্গভবন (রাষ্ট্রপতি ভবন) থেকে সচিবালয় (জিরো পয়েন্ট) এবং মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার থেকে গুলিস্তান চত্বরে ভিভিআইপি চলাচলের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এ এলাকা হকারমুক্ত করতে দক্ষিণ সিটিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এ উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছেন। তবে এ বিষয়ে সরাসরি কিছু বলতে রাজি হয়নি ঢাকা দক্ষিণ সিটির কোনো কর্মকর্তা।
মেয়র তাপস তিনটি জোনে বিভক্তের ঘোষণা দিয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর বলেন, কেবল অতি গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো লাল চিহ্নিত করা হবে। হলুদ ও সবুজ চিহ্নিতও করা হবে। লাল চিহ্নিত এলাকায় সড়কে হাঁটার পথে আমরা আর হকার বসতে দেবো না। আগামী সপ্তাহ (এ সপ্তাহ) থেকে আমরা লাল চিহ্নিত অতি গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো হতে হকার সরানোর অভিযান শুরু করব।
রাস্তা ও পায়ে হাঁটা পথসমূহকে লাল, হলুদ ও সবুজ শ্রেণিতে চিহ্নিত করার লক্ষ্যে রবিবার সকালে দক্ষিণ সিটির প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. সিরাজুল ইসলামকে আহবায়ক করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন।
দক্ষিণ সিটির সচিব আকরামুজ্জামানের স্বাক্ষরিত এক দপ্তর আদেশে এ কমিটি গঠন করা হয়।
এ কমিটি দক্ষিণ সিটি প্রণীত মহাপরিকল্পনার সাথে সমন্বয় রেখে রাস্তা ও হাঁটার পথ যানবাহন ও মানুষ চলাচলের জন্য নির্বিঘ্ন রাখার লক্ষ্যে কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনা করবে।
লাল শ্রেণি এলাকা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং রাস্তা বিবেচনায় কখনই উক্ত রাস্তায় হকার বসতে পারবে না; হলুদ শ্রেণি এলাকা হচ্ছে দক্ষিণ সিটি কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে ও নির্ধারিত স্থানে হকার বসতে পারবে; এবং সবুজ শ্রেণি এলাকা হচ্ছে যে সকল এলাকায় প্রয়োজন অনুযায়ী আংশিক অংশে হকার বসলে পথচারী বা যান চলাচলে কোনরূপ বিঘ্ন ঘটবে না।
অফিস আদেশে বলা আছে, কমিটি প্রতিমাসে কমপক্ষে এক বার সভা করবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী একাধিকবার সভা করবে। বিশেষ করে বঙ্গভবন (রাষ্ট্রপতি ভবন) থেকে সচিবালয় (জিরো পয়েন্ট) এবং মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার থেকে গুলিস্তান চত্বর ভিভিআইপি চলাচল করে এবং একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। উক্ত সড়কগুলো হকার মুক্ত করার লক্ষ্যে উক্ত কমিটিতে পেশ করতে হবে।
কমিটির সদস্য সচিব ও দক্ষিণ সিটির সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদ কাজী নূর কাওসার টিবিএসকে বলেন, 'আজকে (রবিবার) কেবল আমাদের কমিটি হলো আমরা কয়েকটি মিটিং করেই লাল, হলুদ ও সবুজ শ্রেণি এলাকার তালিকা চূড়ান্ত করবো। এ বিষয়ে স্ব স্ব এলাকার অঞ্চল কর্মকর্তা ও কাউন্সিলরদের সাথে সমন্বয় করা হবে। আমরা এ কাজের অংশ হিসেবে গুলিস্তান এলাকা থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছি।'