নেপাল-বাংলাদেশের পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগানো হয়নি
বাংলাদেশ ও নেপালের পর্যটন শিল্প যৌথ সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও তা যথাযথভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে না বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের।
বাংলাদেশি পর্বতারোহী এম এ মুহিত বলেন, 'আমি ২৫ বার নেপালে গিয়েছি, কিন্তু কখনও মনে হয়নি বিদেশের মাটিতে আছি। নেপালের মানুষ আমাদের বন্ধু মনে করে। তবে তারা আমাদের দেশে দেখার মতো বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার এবং বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানে না।'
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় নেপাল দূতাবাসে ট্যুরিজম নেটওয়ার্কিং রিসেপশনের আয়োজনে তিনি বলেন, 'এজন্যই বাংলাদেশে নেপালি পর্যটকের সংখ্যা এখনও নগণ্য।'
এভারেস্টজয়ী এম এ মুহিতের পরামর্শ বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্টদের উচিত বাংলাদেশের পর্যটন আকর্ষণগুলো আরও কার্যকরভাবে তুলে ধরা যাতে দেশে পর্যটকদের আগমণ বাড়ে।
নেপাল ও বাংলাদেশের বিভিন্ন ট্যুর অপারেটর ট্রাভেল এজেন্ট, কূটনীতিক এবং সাংবাদিকরা আয়োজনে অংশ নিয়ে জানান দুই প্রতিবেশীর যৌথ উদ্যোগ পর্যটন শিল্পকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।
নেপাল অ্যাসোসিয়েশন অব ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেল এজেন্ট ও নেপাল ট্যুরিজম বোর্ডের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় চলমান তিন দিনব্যাপী এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ারে আসেন। তারা নেপাল দূতাবাস ও নেপাল টুরিজম বোর্ডের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানেও অংশ নেয়।
পর্বতসহ নেপালের প্রাকৃতিক আকর্ষণ, সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য এবং নেপালের সংস্কৃতি তুলে ধরে নেপাল ট্যুরিজম বোর্ডের ম্যানেজার বিমল কান্ডেল 'ভৌগোলিকভাবে আমরা খুব কাছাকাছি কিন্তু আমাদের পর্যটন সম্ভাবনাগুলো এখনও কাজে লাগানো হয়নি।'
পর্যটন উদ্যোক্তা মহিউদ্দিন বেলাল বলেন, 'বাংলাদেশ ও নেপাল যৌথ পর্যটন প্যাকেজ তৈরি করতে পারে যাতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকরা ভ্রমণে এসে দুদেশই ঘুরে যান। এমনকি আমরা বিবিআইএন (বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল) দেশগুলোর জন্যও এই ধরনের প্যাকেজ তৈরি করতে পারি'।
'বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে সংস্কৃতিগত নানা মিল রয়েছে। আমরা এই ধরনের পরিষেবা চালু করলে নিশ্চিতভাবেই বাকি বিশ্বের পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পারব,' বলেন তিনি।
বাংলাদেশে নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারি বলেন, 'আমাদের দেশের মানষের সঙ্গে বাংলাদেশিদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। আমাদের সম্পর্কের বহুমুখী সুবিধা রয়েছে। তাই পর্যটন খাতে অন্যান্য সুযোগগুলোও আমাদের অনুসন্ধান করা উচিত।'র'বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের দুই দেশের মধ্যে ভ্রমণকারীদের এক্সচেঞ্জ বাড়ানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব আমরা,' বলেন তিনি।
নেপাল দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন কুমার রাই, ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি শিবুল আজম কুরেশি এবং নেপাল অ্যাসোসিয়েশন অব ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেল এজেন্টের সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট প্রমোদ দাহাল প্রমুখ ব্যক্তিবর্গও অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন।
২০১৯ সালে কোভিডের আগে নেপাল প্রতি বছর গড়ে ২৫ হাজার বাংলাদেশি পর্যটক পেত, যেখানে বাংলাদেশে প্রায় ৩ হাজার নেপালি পর্যটক ভ্রমণ করত। দুই দেশের পর্যটন বোর্ডের ডেটার তুলনা করলে একটি বড় ব্যবধান দেখা যায়।
নেপাল ট্যুরিজম বোর্ড বলছে হিমালয়ের দেশটি ২০১৭ সালে বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ ২৯ হাজার ৬০ জন দর্শনার্থী পায়। মহামারির কারণে ২০২০ সালে চার হাজার ৯১৭ জন এবং ২০২১ সালে পাঁচ হাজার ৪৪ জনে নেমে আসে। চলতি বছর আগস্ট পর্যন্ত নেপালে ১৪ হাজার ৮১১ বাংলাদেশি পর্যটক এসেছে।
তবে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের কাছে ২০১৯ সালের পর পর্যটকদের দেশভিত্তিক তথ্য নেই। স্বাধীনতার পর কোভিডের আগের বছর বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশ থেকে ইতিহাসের সর্বোচ্চ তিন লাখ পর্যটক পায়।
তবে এদের মধ্যে মাত্র দুই হাজার ৯৭৪ জন পর্যটক নেপাল থেকে আসেন যা পর্যটক সংখ্যার ভিত্তিতে ১১তম উৎস দেশ। বোর্ডের তথ্য অনুসারে, ওই বছর বাংলাদেশে আসা মোট পর্যটকের দুই লাখ ৭০ হাজার ২৪ জন বা ৮৯ শতাংশ ছিল ভারতীয় পর্যটক।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তৈরি ট্যুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট ২০২০ অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে দেশের বাইরে সর্বাধিক ভারতে (৬০ দশমিক ৪১ শতাংশ) এরপর যথাক্রমে সৌদি আরব (৮ দশমিক ১২ শতাংশ), মালয়েশিয়া (4৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ), থাইল্যান্ড (২ দশমিক ৫৪ শতাংশ), দুবাই (এক দশমিক ৫২ শতাংশ), আফ্রিকা (এক দশমিক ৫২ শতাংশ) এবং নেপালে (এক দশমিক ০২ শতাংশ) পর্যটক ভ্রমণ করেন।
এদিকে, বাংলাদেশ গত সোমবার কোভিড-১৯ মহামারির কারণে (২৬ সেপ্টেম্বর) বিদেশি পর্যটকদের ওপর আরোপিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে। ফলে ট্যুর অপারেটরদের জন্য শীতকালীন ভ্রমণে আগত বিদেশি পর্যটকদের কাছ থেকে বুকিং পাওয়ার পথ প্রশস্ত হয়েছে।