বছরের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ৬২ শতাংশই সেপ্টেম্বরে
দেশে এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগী এবং মৃত্যুর সিংহভাগই হয়েছে সেপ্টেম্বরে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার এ তথ্য জানিয়েছে।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮ টা পর্যন্ত আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সর্বমোট ১৬ হাজার ৯২ জন, যেখানে শুধু সেপ্টেম্বরের ৩০ দিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৯১১ জন। এই সংখ্যা চলতি বছরে মোট আক্রান্তের প্রায় ৬২ শতাংশ।
এছাড়া, চলতি বছরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৫৫ জন; তাদের মধ্যে ৩৪ জনেরই মৃত্যু হয়েছে সেপ্টেম্বরে, যা মোট মৃত্যুর প্রায় ৬২ শতাংশ।
শুক্রবার সকাল ৮ টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ২৪০ জন নতুন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ঢাকায় ১৫০ জন এবং ঢাকার বাইরে সারাদেশে ৯০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর তেমন উদ্যোগ নেই সরকারের। ফলে ৫০ টিরও বেশি জেলায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ ডেঙ্গু রোগীর যে হিসাব দিচ্ছে, বাস্তবে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি বলে মনে করছেন তারা।
দেশের ডেঙ্গুর পরিস্থিতি কোভিড-১৯ এর চেয়েও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এজন্য ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কর্মকৌশল প্রণয়ণ করা দরকার বলে তারা মনে করছেন।
জনস্বাস্থ্যবিদ ও সরকারের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বে–নজির আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দেশব্যাপী কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। অতীতে দেশি–বিদেশি বিশেষজ্ঞরা যেসব সুপারিশ করেছেন বা পরামর্শ দিয়েছেন, তার কোনো কিছুই বাস্তবায়ন করা হয়নি। দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে, আরও খারাপের দিকে যাবে।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গুর সংক্রমণের এ ঊর্ধ্বসীমা নভেম্বর পর্যন্ত যেতে পারে। ডেঙ্গুর সঙ্গে অপরিকল্পিত নগরায়ন জড়িত। এজন্য সারাদেশে জাতীয় কর্মকৌশল প্রণয়ণ করে কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগ দেওয়া এবং এর সঙ্গে ল্যাবরেটরি স্থাপন করে নিয়মিত গবেষণা জরুরি।
এছাড়া মশক নিয়ন্ত্রণে লার্ভিসাইড, ইনসেপটিসাইড দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বর্ষা এডিস জরিপ-২০২২-এর তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা দক্ষিণের গোপীবাগ, কমলাপুর এবং মতিঝিল এলাকায় সর্বোচ্চ ব্রেটো সূচক ৫৩.৩৩ শতাংশ এবং ঢাকা উত্তরের গুলশান, বনানী এবং কল্যাণপুর এলাকায় সর্বোচ্চ সূচক রয়েছে ৩৬.৬।
জরিপ অনুযায়ী, ঢাকা উত্তরের ৪৫.২ শতাংশ বহুতল ভবনে, ২৪.৮ শতাংশ নির্মাণাধীন ভবনে, ২০.৩ শতাংশ স্বতন্ত্র বাড়ি, ৬.৮ শতাংশ বস্তি বা আধা-পাকা বাড়ি এবং ২.৮ শতাংশ খালি প্লটে এডিস মশা উপস্থিতি পাওয়া যায়।
অন্যদিকে, ঢাকা দক্ষিণের ৩৩ শতাংশ বহুতল ভবনে, ২৭ শতাংশ স্বতন্ত্র বাড়িতে, ১২.১ শতাংশ বস্তিতে এবং ৫.১ শতাংশ খালি প্লটে এডিস মশা পাওয়া গেছে।
দেশে বর্তমানে সর্বমোট ১ হাজার ৯১৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এরমধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ১ হাজার ৪৪৮ জন এবং ঢাকার বাইরে ৪৬৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।
একই সময় সারাদেশে ছাড়প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা সর্বমোট ১৪ হাজার ১২০ জন। এরমধ্যে ঢাকায় ছাড়প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা মোট ১০ হাজার ৮০৬ জন এবং ঢাকার বাইরে সারাদেশে ছাড়প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা মোট ৩ হাজার ৩১৪ জন।