৯ শর্তে রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনার সাময়িক অনুমোদন পেলো বিএম ডিপো
গত ৪ জুনের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে শুধুমাত্র গার্মেন্টস পণ্যের রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৩ মাসের সাময়িক অনুমতি দিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।
গত ২৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার ফাইজুর রহমান সাক্ষরিত একটি অনুমতি পত্রে ৯ শর্তে রপ্তানি কার্যক্রম শুরুর এ আদেশ দেওয়া হয়।
শর্ত গুলো হলো- ডিপোতে কার্যক্রম শুরুর পূর্বে বন্দর কর্তৃপক্ষের অনাপত্তিপত্র নেওয়া; বেসরকারি অফডক স্থাপন ও পরিচালন সংক্রান্ত নীতিমালা, ২০২১ এবং বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্স বিধিমালা, ২০০৮ এ প্রযোজ্য শর্তাবলী উক্ত সময়ের মধ্যে প্রতিপালন; কেমিক্যাল পদার্থবাহী কন্টেইনার আইএমডিজি নীতিমালার আলোকে পৃথক ইয়ার্ড ও শেড এর ব্যবস্থা করা; ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর হতে অনুমোদিত ফায়ার সেফটি প্ল্যান সংগ্রহ ও অগ্নিনির্বাপনী শর্ত পরিপালন; পুরো আইসিডি সিসিটিভি'র আওতায় আনা; কাস্টমস কর্মকর্তাদের শুল্কায়ন কার্যক্রম সম্পন্নের প্রয়োজনীয় লজিস্টিকস প্রদান; আইসিডির বাহিরে একাধিক স্থানে ব্যাক-আপ স্টোরেজ স্থাপন করা এবং অফডক পরিচালনার লক্ষ্যে ব্যবহৃত নিজস্ব সফটওয়্যারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সার্বক্ষণিক প্রবেশাধিকারের ব্যবস্থা রাখা।
শর্তগুলো প্রতিপালন করা না হলে তিন মাস পর এই অনুমোদন বাতিল হয়ে যাবে বলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চিঠিতে উল্লেখ করেছে।
গত ৪ জুন বিএম ডিপোতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড থেকে দুর্ঘটনার পর অগ্নিদগ্ধ হয়ে প্রাণ হারায় ৫১ জন। আহত হয় দুই শতাধিক। এ সময় রপ্তানি পণ্যবাহী ১৫৪ কনটেইনার এবং আমদানি পণ্যবাহী দুটি কনটেইনার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দুর্ঘটনার পরদিন ৫ জুন ডিপোর সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় চট্টগ্রাম কাস্টম কর্তৃপক্ষ। কিন্তু চাহিদার তুলনায় ডিপোর সংখ্যা কম হওয়ার কারনে আমদানি রপ্তানি পণ্য স্টাফিং এবং খালাসে জটিলতা সৃষ্টি হয়।
পরে বিএম ডিপো কার্যক্রম চালুর দাবীতে চট্টগ্রাম কাস্টম কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছিলো আইসিডি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা)। এরপর গত ২২ আগষ্ট বিএম কন্টেইনার ডিপোতে শর্ত স্বাপেক্ষে খালি কন্টেইনার সংরক্ষনের অনুমতি দেয় চট্টগ্রাম কর্তৃপক্ষ।
বিএম ডিপো কন্টেইনার ডিপোর ঘটনায় কাস্টমসের গঠিত তদন্ত টিম গত ১৭ আগষ্ট তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় কাস্টমসের গঠিত তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে কমিটি বিএম ডিপোতে তাদের কার্যক্রম পরিচালনায় ১৭ টি অনিয়ম তুলে ধরে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আইএমডিজি কোড পরিপালনে ব্যর্থতার দায়ে বিএম কন্টেইনার ডিপোর লাইসেন্স কেন স্থগিত বা বাতিল করা হবে না সে বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া যেতে পারে।
এরপর গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষকে একটি কারণ দর্শানোর নেটিশ দেয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান। নোটিশে ১ মাসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয় বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষকে।
কারণ দর্শানোর নোটিশের প্রেক্ষিতে গত ৩ অক্টোবর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনারের উপস্থিতিতে শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএম ডিপোর নির্বাহী পরিচালক ক্যাপ্টেন মাইনুল আহছান সহ প্রতিষ্ঠনের কয়েকজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
বিএম ডিপোর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার নুরুল আখতার বলেন, ৩ অক্টোবর আমরা কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়েছি। এর প্রেক্ষিতে গত ২৪ অক্টোবর পোশাক খাতের রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমাদের অনুমোদন দিয়েছে।
"কাস্টমসের শর্ত অনুযায়ী এসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আজ বুধবার থেকেই ডিপোতে রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনার কাজ শুরু হবে", বলেন তিনি।
বিকডার তথ্য মতে, চট্টগ্রামে ১৯ টি বেসরকারি আইসিডি রয়েছে। এসব আইসিডির কন্টেইনার ধারণ সক্ষমতা প্রায় ৭৮ হাজার টিইইউএস।
এর মধ্যে বিএম ডিপোর কন্টেইনার ধারণ সক্ষমতা ৬ হাজার ৫ শ টিইইউএস। বিএম ডিপো প্রতি মাসে আমদানি রপ্তানি এবং খালি কন্টেইনার সহ ১০ হাজার কন্টেইনার হ্যান্ডেল করে।