২০২৫ সালের মধ্যে জলবায়ু অর্থায়ন দ্বিগুণ চায় বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো
বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো দাবি করেছে, ২০২৫ সাল নাগাদ জলবায়ু অর্থায়ন দ্বিগুণ করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো জাতিসংঘের চলমান জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু অর্থায়নের নতুন এই রোডম্যাপ দাবি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা।
মিশরের শারম আল শেখ শহরে ৬ নভেম্বর থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত চলমান কপ২৭ বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে শনিবার স্থানীয় সময় রাত পর্যন্ত চলে কপ সম্মেলন।
জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য ও জলবায়ু বিশেজ্ঞদের সঙ্গে শনিবার সন্ধ্যায় কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
রবিবার (১৩ নভেম্বর) কপ সম্মেলন সাপ্তাহিক ছুটি।
চলমান জলবায়ু সম্মলেনে বাংলাদেশ থেকে আগত জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা ইউএনবিকে জানিয়েছন, বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলার জন্য নতুন রোডম্যাপ দাবি করছে।
তারা এই দাবির পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে বলে, আগে অর্থায়নের যে পরিমাণ হিসাব করা হয়ছিল, বর্তমান বাস্তবতার আলোকে তা অনেক কম। ফলে বর্তমান বাস্তবতায় ২০১৯ সালে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন ছিল, ২০২৫ সালে তা দ্বিগুণ করতে হবে।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য জিয়াউল হক ইউএনবিকে বলেন, উন্নত দেশগুলোর অর্থায়ন বিষয়ে একটি রোডম্যাপ করার দাবি করা হচ্ছে। উন্নত দেশগুলোর কোন বছর কোন খাতে অর্থায়নের জন্য কী পরিমাণ অর্থায়ন করবে তা ওই রোডম্যাপে উল্লেখ থাকবে।
বিশেষ করে, জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমন কার্যক্রমে অর্থ প্রদানে উন্নত দেশগুলোকে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এই আলোচনায় বলা হয়েছে, টেকসই উন্নয়ন এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রতি বছর যথাক্রমে চার ট্রিলিয়ন ও সাত ট্রিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। যা বর্তমান অর্থায়নের চেয়ে বেশি।
তাই অর্থায়নের এই ফারাক দূর করার জন্য সব পক্ষের জোরালো আলোচনা দরকার।
জিয়াউল হক বলেন, বর্তমানে শারম আল শেখে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির আলোকে গ্লোবাল গোল অন এ্যাডাপটেশন চূড়ান্ত করার জন্য আলোচনা চলছে।
প্যারিস চুক্তিতে গ্লোবাল গোল অন এ্যাডাপটেশনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এই গোলের লক্ষ্য কি, গ্লোবাল গোল বলতে কী বুঝায়, কিভাবে এই গোল বাস্তবায়ন হবে তা বলা নেই।
এবারের সম্মেলনে সেই গোল ঠিক করার কাজ চলেছে। যা আগামী বছর আবুধাবিতে অনুষ্ঠেয় ২৮তম জলবায়ু সম্মেলনে এটি চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অভিযোজন তহবিলে প্রতিশ্রুতি বাড়ানোর জো বাইডেনের এই ঘোষণা গ্লোবাল গোল অন এ্যাডাপটেশন চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য মির্জা শওকত আলী ইউএনবিকে বলেন, বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো এবার জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে সোচ্চার। বার বার প্রতিশ্রুতি দিয়েও উন্নত দেশগুলো জলবায়ু তহবিলে কোন অর্থ প্রদান করছে না। মহামারি করোনার কারণে দ্বিপক্ষীয় অর্থায়নও সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। বিশেষ করে গত জলবায়ু সম্মেলনে অর্থায়নের ক্ষেত্রে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েও উন্নত দেশগুলো কোন অর্থই প্রদান করেনি। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়েছে। তবে প্রতিশ্রুত অর্থায়ন পেতে আলোচনা চলছে এখনও।
তিনি আরও বলেন, আলোচনার শুরুতেই নেগোসিয়েশনের টেবিলে অর্থ নিয়ে উন্নত দেশগুলো এবারও অর্থ প্রদান না করার জন্য নানা ফন্দি ফিকির করছে। তারা এবার অর্থ না দেয়ার জন্য নতুন কৌশল হিসাবে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ এবং যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশিক মন্দাকে সামনে নিয়ে এসেছে।
উন্নত দেশগুলো বলছে, বৈশ্বিক মন্দার কারণে তাদের কাছে কোন অর্থ নেই। ফলে তারা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য আগামী বছর কোন অর্থ দিতে পারবে না।
জলবাযুর ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর উদ্দেশ্যে উন্নত দেশগুলো বলছে, বৈশ্বিক মন্দার কারণে উন্নত দেশগুলোই এখন সংকটের মধ্যে পড়েছে। তাদের কাছে কোন অর্থ নেই। ফলে মন্দা কেটে না যাওয়া পর্যন্ত তাদের পক্ষে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কোন অর্থ প্রদান করা সম্ভব নয়।
তবে উন্নত দেশগুলোর এই বার্তায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো হতাশ নয়।
এটি যে তাদের নতুন কৌশল তা তারা বুঝতে পারছে। তাছাড়া খোদ আয়োজক দেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাব জলবায়ু আলোচনার অন্যতম এজেন্ডা হিসাবে অর্থায়ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা শুরু করা হয়েছে।
বাংলাদেশে থেকে আগত এক পর্যবেক্ষক আমিনুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, বাইডেনের বক্তব্য প্যারিস চুক্তির সঙ্গে মেলে না।
যুক্তরাষ্ট্র বড় অর্থনীতির দেশ, বড় কার্বন দুষণকারী। তাদের উচিত উন্নত দেশগুলো যে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার করে প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তার অংশ জলবায়ু তহবিলে প্রদান করা এবং অন্য দেশগুলোকেও বলা তাদের অংশ জলবায়ু তহবিলে প্রদানের জন্য।
বাইডেন এডহক ভিত্তিতে জলবায়ু তহবিলে অর্থ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন।
অভিযোজনের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর প্রয়োজন ৬০০ বিলিয়ন ডলার।
ওই অর্থের অংশ দেয়া উচিত যুক্তরাষ্ট্রের।