সরকার কঠোর হওয়ায় সমাবেশস্থল নিয়ে নরম সুর বিএনপির
১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশের স্থান নিয়ে পুলিশ বিকল্প প্রস্তাব দিলে তা বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছে বিএনপি। যদিও দলের পক্ষ থেকে আগে বলা হয়েছিল, যেকোনো মূল্যে বিএনপি নয়াপল্টনেই রাজনৈতিক কর্মসূচির আয়োজন করতে চায়; তবে রোববার (৪ ডিসেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে পূর্বের অবস্থান থেকে খানিকটা নরম সুরে অন্যান্য বিকল্প ভেন্যু বিবেচনা করার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, "যদি আমরা বিকল্প কোনো উপযুক্ত ভেন্যু পাই, তাহলে তা বিবেচনা করব। তবে সেটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা তুরাগ নদীর তীরে হওয়া হওয়া যাবে না।"
বিভিন্ন জেলায় বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার এবং বিএনপির সমাবেশকে সামনে রেখে রাজধানীতে পুলিশের ব্লক রেইডের মধ্যেই রোববার মির্জা ফখরুল বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন।
তিনি সরকারকে অনুষ্ঠানস্থলের অনুমতি নিয়ে 'অপ্রয়োজনীয়ভাবে জটিলতা সৃষ্টি' এবং সমাবেশকে ব্যর্থ করার জন্য 'দমনমূলক ব্যবস্থা' নেওয়ার অভিযোগ করেন।
অক্টোবরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় মোট ৯টি গণসমাবেশ করেছে বিএনপি। এরমধ্যে সবশেষ সমাবেশটি ছিল রাজশাহীতে। পরবর্তী সমাবেশ আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় করতে চলেছে বিএনপি। তবে সমাবেশের স্থান ঠিক করা নিয়ে সরকার ও রাজনৈতিক বিরোধীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। এরইমধ্যে গত ১ ডিসেম্বর থেকে দেশব্যাপী ১৫ দিনের অভিযান শুরু করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার থেকে তারা ঢাকায় সর্বাত্মক তল্লাশি চালাবে; এবং ইতোমধ্যেই তাদেরকে পূর্ববর্তী (রাজনৈতিক) মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানার পরিপ্রেক্ষিতে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে বলা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার থেকে বিচারাধীন রাজনৈতিক মামলায় তল্লাশি অভিযান শুরু হওয়ার আগে পুলিশ এখন বিএনপি নেতাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, অভিযানের অংশ হিসেবে পুলিশ গত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন অভিযোগে ১ হাজার ৩৫৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক মোঃ মনজুর রহমান জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে ৩৫৮টি মামলা রয়েছে।
রোববারের সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, ৩০ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় এক হাজার ৩১ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শনিবার বিএনপির জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুসহ দুই নেতাকে রাজশাহীর কর্মসূচি থেকে ফেরার সময় গ্রেপ্তার করা হয়। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবন সংলগ্ন সড়কে ব্যারিকেড ও পুলিশি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এছাড়া, নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় ঢাকার বনানীতে ব্লক রেইড চালিয়েছে পুলিশ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি, মতিঝিল জোন) সহকারী কমিশনার গোলাম রুহানি রোববার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয়ে ৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় রোববার দুপুরে পুরান ঢাকায় লিফলেট বিতরণের সময় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, সরকার বিএনপির জনসভাকে 'ভিন্ন দিকে ঘুরানোর' চেষ্টা করছে।
শুক্রবার নয়াপল্টনে পুলিশ মোতায়েন
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে গত অক্টোবর থেকে বিভাগীয় সমাবেশ করে আসছে বিএনপি।
পরিবহন ধর্মঘট, মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটসহ অন্যান্য বাধা থাকা সত্ত্বেও বিভাগীয় কর্মসূচিগুলো ব্যাপক জনসমাগম নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবেই পরিচালিত হয়েছে।
বিভাগীয় সমাবেশে পুলিশ বাধা দেয়নি। তবে ঢাকায় সমাবেশের স্থানের জন্য পুলিশের অনুমতির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠায়, এটি এখন রাজনৈতিক উত্তেজনাকে বাড়িয়ে তুলছে।
যেকোনো মূল্যে নয়াপল্টনে কর্মসূচি পালন করবে বলে জানায় বিএনপি। কিন্তু নয়াপল্টনের পরিবর্তে ২৬ শর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে বিকল্প প্রস্তাব হিসেবে দেয় ডিএমপি। তবে পুলিশের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে বিএনপি।
শুক্রবার সকালে নয়াপল্টন এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হবে বলে ডিএমপির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, জনসাধারণের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে সেখানে কাউকে জড়ো হতে বা মিছিল করতে দেওয়া হবে না।
এছাড়া রাজধানীর প্রবেশপথের চেকপোস্টে তল্লাশি চালাবে পুলিশ।
ডিএমপির আরেক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, তারা এখনো অভিযান শুরু করেননি। বরং তারা এখন বিচারাধীন মামলার আসামি, বিএনপি নেতাদের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছেন। বৃহস্পতিবার থেকে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে বলা হয়েছে।
৯ ও ১০ ডিসেম্বরের জন্য বিক্রি হচ্ছে না বাসের অগ্রিম টিকিট
সমাবেশের আগে বাস মালিকদের পরিবহন ধর্মঘট হবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে ঢাকার অধিকাংশ বাস কাউন্টার রাজধানীতে ঢোকার এবং রাজধানী থেকে বের হওয়ার অগ্রিম বাস টিকিট বিক্রি করছে না।
মোটরস অ্যাসোসিয়েশন কুমিল্লার সভাপতি জামিল আহমেদ খন্দকার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, তারা ৯-১০ ডিসেম্বর কুমিল্লা থেকে ঢাকা পর্যন্ত কোনো টিকিট বিক্রি করছেন না।
তিনি আরও বলেন, সমাবেশের আগে দূরপাল্লার বাস চলবে কিনা, তা দুই দিনের মধ্যে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আন্তঃজেলা বাস সার্ভিসের মালিক বিজন বিহারী ঘোষ বলেন, তারা বাস চালাতে চান; কারণ যানবাহন অলস বসিয়ে রাখা মানেই ব্যবসায়িক ক্ষতি।
"তবে ধর্মঘটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলে আমরা তা মেনে নেব," যোগ করেন তিনি।
চট্টগ্রামসহ আরও কয়েকটি জেলার পরিবহন নেতারা জানিয়েছেন, তারা কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন।