সঙ্গীত, লোকজ পরিবেশ; এগিয়ে চলেছে বরিশালের প্রথম নারী উদ্যোক্তা পরিচালিত রেস্তোরাঁ
রেস্তোরাঁয় প্রবেশের সময় একজন দর্শনার্থীর মনে হতে পারে, তিনি একটি স্বপ্নময় রাজ্যে পা রেখেছেন। মৃদু আলোতে দেয়ালের মোটিফ এবং নকশাগুলো যেন অতীতের কোনো সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।
সম্প্রতি বরিশাল নগরীতে চালু হয়েছে এই রেস্তোরাঁ। আরবান ক্যাফে নামে পরিচিত রেস্তোরাঁটি এর ভালো মানের খাবার, আতিথেয়তা, সাজসজ্জা এবং কিছু নতুন প্রবর্তিত বৈশিষ্ট্য নিয়ে ইতোমধ্যেই স্থানীয় খাদ্য উত্সাহীদের জন্য একটি আকর্ষণ হয়ে উঠেছে।
দীর্ঘদিন ধরে নারীদের কাপড় ও অলঙ্কারের অনলাইন ব্যবসা করছেন উদ্যোক্তা সুস্মিতা খান। স্থানীয় উৎস থেকে সংগ্রহ করা বিভিন্ন ধরনের প্রাচীন জিনিসপত্র এবং কাঠের বর্জ্য ব্যবহার করে সেগুলো এই রেস্তোরাঁর আসবাবপত্র ও সাজসজ্জার কাজে ব্যবহার করেছেন তিনি।
সুস্মিতার আরবান ক্যাফের সবচেয়ে জনপ্রিয় বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে একটি হলো, প্রতি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি বাদ্যযন্ত্র অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় যেখানে স্থানীয় গায়কেরা অংশগ্রহণ করেন। রেস্তোরাঁয় কিছু বাদ্যযন্ত্রও রাখা আছে যা অতিথিরা ব্যবহার করতে পারেন।
রেস্তোরাঁটিতে ফটোশুটের জন্য একটি উত্সর্গীকৃত স্থান রয়েছে যা অতিথিদের জন্য আরেকটি আকর্ষণ।
সুস্মিতা বলেন, "আমার একটা রেস্তোরাঁ করার স্বপ্ন ছিল। প্রথমে আমি ঢাকায় একটা রেস্টুরেন্ট করার পরিকল্পনা করেছিলাম কিন্তু সেখানে ভাড়া অনেক বেশি। তাই, প্রায় ১০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে এখানে রেস্তোরাঁটি চালু করেছি।"
রেস্টুরেন্টটি দুপুরে খোলে এবং রাতে বন্ধ হয়। রেস্টুরেন্টে পরিবেশিত থাই, চাইনিজ এবং জাপানিজ খাবারের মধ্যে মোমো, চিকেন উইংস, গার্লিক মাশরুম ইত্যাদি খুবই জনপ্রিয়। চলতি বছরের ১৮ অক্টোবর নতুন বাজার এলাকায় যাত্রা শুরু করে রেস্তোরাঁটি। রেস্তোরাঁটিতে একবারে ৫০ জন লোক বসার ব্যবস্থা রয়েছে।
রেস্তোরাঁর নিয়মিত গ্রাহক শরিফুল ইসলাম বলেন, "আমি প্রায়ই আমার পরিবারের সদস্য ও বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে এখানে আসি। রেস্টুরেন্টের খাবার সুস্বাদু হওয়ায় আমাদের এটি বেশ পছন্দের জায়গা তাছাড়া পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য সার্বিক পরিবেশ খুবই ভালো।"
আরেক ক্রেতা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সিনথিয়া আক্তার জানান, তিনি ও তার বন্ধুরা প্রায়ই এই রেস্টুরেন্টে খেতে আসেন।
"খাবার ছাড়াও, আমরা প্রতি সপ্তাহান্তে এখানে স্থানীয় গায়কদের পরিবেশিত গান শুনতে আসি। সব মিলিয়ে এখানে সময় কাটানো বেশ আনন্দের," তিনি যোগ করেন।
রেস্তোরাঁটি মেনুতেও কিছু পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছে। ঐতিহ্যবাহী মেনু ব্যবহার করার পরিবর্তে তারা মেনু বোর্ড ব্যবহার করে। গ্রাহকরা বসার পর সেই বোর্ড পরিবেশন করা হয়।
মালিক শুস্মিতা জানান, প্রথমদিকে তার জন্য রেস্তোরাঁটি চালু করা এবং এটি পরিচালনা করা খুব কঠিন ছিল। শুধু তাই নয়, শুধুমাত্র একজন নারী হওয়ার জন্য তাকে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে।
"রেস্তোরাঁর জন্য জায়গা খুঁজে পাওয়া আমার জন্য খুব কঠিন ছিল কারণ কেউ একজন মহিলা উদ্যোক্তাকে জায়গা ভাড়া দিতে আগ্রহী ছিল না। তারা আশঙ্কা করেছিল যে আমি ব্যবসা চালাতে এবং নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করতে পারব না," তিনি যোগ করেন।
"আমি রেস্তোরাঁটি চালাতে খুব পরিশ্রম করি। আমি সবসময়ই রেস্টুরেন্টের জন্য তাজা খাদ্য উপকরণ কিনি," বলেন তিনি।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, বরিশালে আরও নারী ভবিষ্যতে উদ্যোক্তা হতে এবং স্বাবলম্বী হতে উদ্বুদ্ধ হবে।