মাঠের নাম নির্ধারণ নিয়ে পুলিশের সাথে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, আহত ২০
রাজধানীর বকশীবাজারের সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া সংলগ্ন মাঠের নাম নির্ধারণকে কেন্দ্র করে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছে প্রায় ২০ জন।
ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের মাদ্রাসার মাঠের নাম পরিবর্তন করে 'বকশীবাজার কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ' নির্ধারণ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মাঠটি দখল করতে চাচ্ছে।
অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বলছে, বকশীবাজার এলাকায় কোনো খেলার মাঠ না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুরোধে প্রায় ৫৩ লাখ টাকা খরচ করে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন ২.০১৯ একর আয়তনের খেলার মাঠটি সংস্কার করে। যেখানে মাদ্রাসার জমি মাত্র ০.৫১ একর। তাই সবার জন্য মাঠটি উন্মুক্ত করে দিতে মাঠটিকে 'বকশীবাজার কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ' নামে উদ্বোধন করে।
বুধবার সকাল থেকে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার নিজস্ব মাঠ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন দখলের চেষ্টা করছে- এমন অভিযোগে বিক্ষোভ করেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১টার দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস মাঠটি উদ্বোধন করতে আসলে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে মাঠটি উদ্বোধন না করেই তিনি ফিরে যান। তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুলিশ শিক্ষার্থীদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, মাদ্রাসার দক্ষিণ পাশের একটি মাঠ উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনাটি ঘটে। সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা মাঠের নাম পরিবর্তনের বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করে। পরবর্তিতে পুলিশ তাদেরকে সরানোর চেষ্টা করলে তারা না মেনে সেখানেই আন্দোলন চালিয়ে যায়।
দুপুরে মেয়র তাপস মাঠের বাইরে লাগানো নাম ফলক উদ্বোধন করতে আসলে শিক্ষার্থীরা মাঠের ভিতর থেকে চেয়ার নিক্ষেপ করতে থাকে। মেয়র পরিস্থিতি অস্বাভাবিক দেখে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন। পরে পুলিশ শিক্ষার্থীদের উপর লাঠিচার্জ করে। কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেলও ছোঁড়ে। এতে প্রায় ১৫ শিক্ষার্থী আহত হন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, আলিয়া মাদ্রাসার নিজস্ব মাঠটির অন্য নামে উদ্বোধন তারা মানেন না। সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার নিজস্ব নামেই খেলার মাঠটি উদ্বোধন করতে হবে।
স্থানীয় ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওমর বিন আব্দুল আজিজ বলেন, মাঠটির মালিকানা দাবি করে আসছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, মাঠটির মালিক তারা। তারা মাঠটি প্যারেড গ্রাউন্ড হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।
মাঠের মালিকানা নিয়ে মাদ্রাসা ও কারা কর্তৃপক্ষের মধ্যে আদালতে মামলা চলছে। এমন প্রেক্ষাপটে ডিএসসিসি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা মাঠটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। কারণ, আইন অনুযায়ী, সিটি করপোরেশন এলাকার মাঠ দেখার দায়িত্ব ডিএসসিসির।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন জানায়, মাঠের নামকরণ নিয়ে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের আপত্তি ছিল। এ কারণেই আজ তারা হামলা চালিয়েছেন। সংস্কারকাজ শেষে মাস দেড়েক আগে মাঠের মূল ফটকে নামফলক বসাতে গিয়েছিলেন ডিএসসিসির কর্মকর্তারা। তখন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ডিএসসিসির কর্মকর্তাদের ওপর চড়াও হয়েছিলেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাসের টিবিএসকে বলেন, "মেয়র যখন মাঠটি উদ্বোধন করতে যায় তখন ২৫/৩০ জনের মতো মাদ্রাসার অনিয়মিত ছাত্র ও বহিরাগতরা বিক্ষোভ করেন। আমাদের সাথে মাদ্রাসারর শিক্ষকরাও ছিলেন। পরিস্থিতি অস্বাভাবিক দেখে মেয়র নামফলক উদ্বোধন শেষেই স্থান ত্যাগ করেন।"
লালবাগ থানার ডিসি মো. জাফর বলেন, "আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেন অবনতি না হয়, সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। মেয়র চলে যাওয়ার সময় বিক্ষোভকারী মাঠের ভেতর থেকে চেয়ার ছুঁড়তে থাকে। এরপর পুলিশ বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিলে তারা দৌঁড়ে মাঠের অপর প্রান্ত দিয়ে বেরিয়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। প্রায় ১০ মিনিট ধরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলতে থাকে।"
ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মো. আবদুর রশিদ বলেন, "এই মাঠ নিয়ে ঢাকা আলিয়া ও কারাগারের সঙ্গে মামলা চলমান। এখনও কোনও সমাধান হয়নি।"