তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না: আমীর খসরু
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যতীত জাতীয় নির্বাচন সম্ভব নয়।
শনিবার (১০ ডিসেম্বর) ঢাকার সায়েদাবাদের গোলাপবাগ মাঠে দলের ১০ম বিভাগীয় সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগকে বিএনপির দাবিগুলো পুরোপুরি মেনে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে।
একই সুরে দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, "আমরা ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের ঘোষণা দিলে ক্ষমতাসীনরা পাগল হয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও তারা আমাদের সমাবেশ আটকাতে পারেনি।"
বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল বলেন, "আজকে তারা (সমাবেশে যোগদানকারী) সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই। তাদের সরতে হবে। আমাদের নেতাকর্মীদের কারাগারে রেখে তারা আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।"
আজ সকাল ১১টায় বিএনপির ঢাকা মহানগর শাখা আনুষ্ঠানিকভাবে এ সমাবেশের সূচনা করে। এই মুহূর্তে দলের সিনিয়র কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দিচ্ছেন সেখানে।
দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, সমাবেশ থেকে ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ ও খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবি উত্থাপন করবে বিএনপি।
সমাবেশ আয়োজকরা প্রতীকী উপস্থিতি হিসেবে দুর্নীতির অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার জন্য প্রধান সমাবেশের মঞ্চে দুটি চেয়ার ফাঁকা রেখেছেন।
ঢাকা মহানগরের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন বলেন, "এই (আওয়ামী লীগ) সরকার বিজয়ের মাসে আমাদের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গুলি চালিয়ে বর্বরতার সৃষ্টি করেছে।"
"আমরা রাজধানীতে কোটি কোটি মানুষ জমায়েত করে সরকারের পতন ঘটাব। তাদের সকল অপকর্মের বিচার করে কারাগারে প্রেরণ করবো।"
গতকাল শুক্রবার গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অনুমোদন পায় বিএনপি।
সমাবেশে সভাস্থলের কোনো কাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি হলে বিএনপিকে দায় নিতে হবে- এই শর্তে ডিএসসিসি অনুমতি দেয়।
গত কয়েকদিনের দফায় দফায় আলোচনা, বিক্ষোভ-সংঘর্ষ ও দলটির একাধিক শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তারের পর অবশেষে আজ এই বহুল প্রত্যাশিত সমাবেশে যোগ দিচ্ছে বিএনপি; নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কের পরিবর্তে যা অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাজধানীর এক খেলার মাঠে।
একদিন আগেই শুক্রবারে দলীয় অনেক সমর্থক সমাবেশস্থলে পৌঁছে মঞ্চ গোছানো ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সম্পন্ন করতে শুরু করেন।
সমাবেশের জন্য বিএনপিকে যেসব শর্ত মানতে হবে তার মধ্যে রয়েছে- দুপুর ১২টা থেকে সাড়ে ৪টার মধ্যে সমাবেশ শেষ করা, সমাবেশস্থলে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো, সমাবেশস্থলের দিকে কোনো মিছিল না করা, সংলগ্ন সড়কে কোনো জমায়েত না করা এবং লাঠিসোঁটা বা রডের মতো কিছু না আনা।
ভোর হতেই সমাবেশস্থলের বাইরে বিএনপি কর্মীদের সরকার বিরোধী স্লোগানে মুখর হয়ে উঠে পুরো এলাকা।
শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সভাস্থলের আশেপাশের এলাকায় বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি আনসার সদস্যদেরও মোতায়েন করা হয়েছে।
আনসার ভিডিপির পরিচালক (অপারেশনস) মোঃ কামরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, সমাবেশকে সামনে রেখে রাজধানীতে মোট ৪ হাজার আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও প্রায় ৩২ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে বলেন, "নগরীতে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে কড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। কেউ যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য পুলিশ নজরদারি জোরদার করেছে। আশা করি বিএনপির জনসভা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে।"
এদিকে বিএনপির দলীয় কার্যালয় টানা তৃতীয় দিনের মতো ঘেরাও করে রাখা হয়েছে; কার্যালয় সংলগ্ন সড়কে আজকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি দেখা গেছে।
সড়কে বাস, ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন চলাচল করতে তেমন একটা দেখা যায়নি; শুধু কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশা দেখা গেছে।
গোলাপবাগে আজকের চূড়ান্ত বিভাগীয় সমাবেশে যোগ দিতে সরকারের বিরুদ্ধে একযোগে আন্দোলনে প্রস্তুত সব দলকে আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
গতকাল (৯ ডিসেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, 'সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে থাকা বিএনপির সকল নেতাকর্মী ও অন্যান্য দলকে শনিবারের সমাবেশে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
'এটা আর দলীয় সমাবেশ নয়, এটা এখন জনগণের সমাবেশ। আমরা বিশ্বাস করি আগামী সমাবেশ জনগণই সফল করবে।'
শুক্রবার গোলাপবাগ মাঠ পরিদর্শনকালে গতকাল র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব-১০) কমান্ডিং অফিসার ফরিদ উদ্দিন জানান, মাঠের আশেপাশে কিছু উঁচু ভবন ও নির্মাণাধীন ভবন থাকায় মাঠ পরিদর্শন করে নিরাপত্তা সংক্রান্ত কিছু ত্রুটি খুঁজে পেয়েছেন তারা।
'ডিএমপি ও র্যাব এসব ঝুঁকি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করবে,' বলেন তিনি।
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি সহ আরও অন্যান্য দাবি তুলে ধরে গত ১২ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত রাজধানীর বাইরে ৯টি বিভাগীয় সমাবেশ সম্পন্ন করেছে বিএনপি।
নানা প্রতিকূলতা, ভয়ভীতি ও পরিবহন ধর্মঘট উপেক্ষা করে হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মী সেসব সমাবেশে যোগ দেন।
এদিকে আজকের সমাবেশকে সামনে রেখে রংপুর, নওগাঁও, বগুড়া, মুন্সিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ঢাকাগামী যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন; বাসের সংখ্যা কমে গেছে, আবার অনেক বাসই ট্রিপ স্থগিত করেছে।
রাজধানীতে প্রবেশের সময় যানবাহন ও যাত্রীদের তল্লাশি করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।