ভোগান্তি কমবে নিউ ইস্কাটন রোডে, থাকবে বাস বে আর গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা
রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ততম সড়ক নিউ ইস্কাটন রোডে চলাচলকারী গাড়িসহ পথচারীদের ভোগান্তি কমাতে রাস্তাটি সুপ্রশস্ত করা সহ রাস্তার পাশে গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থাপনা, বাস বে তৈরী, সুপ্রশস্ত ফুটপাত, রাস্তার দুই পাশে ড্রেন ইত্যাদি তৈরীর পদক্ষেপ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। আগামী ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে এ কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছে সিটি কর্পোরেশন।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একটি প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২৩ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বাংলামোটর থেকে মগবাজার মোড় পর্যন্ত চার লেনের রাস্তাটির উন্নয়নকাজ সহ পাশ্ববর্তী কয়েকটি রাস্তার কাজ চলছে। তবে রাস্তাটি অনেক ব্যস্ততম হওয়ায় ভেঙ্গে ভেঙ্গে রাতের একটি অংশে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে বলে জানিয়েছে উত্তর সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। এর ফলে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ হচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের।
নিউ ইস্কাটন রোডের উন্নয়ন কাজের মধ্যে রয়েছে- জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য সুপরিসর পাইপ স্থাপন, রাস্তার লেন ঠিক রেখে রাস্তা উন্নয়ন, লেনের বাইরের অবশিষ্ট অংশে কার পার্কিং ও বৃক্ষরোপণের ব্যবস্থা, ফুটপাত উন্নয়ন, ডাক লাইন, আর সি সি ডিভাইডারের সংস্থান রাখা প্রভৃতি।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) ফারুক হাসান মোঃ আল মাসুদ বলেন, "নিউ ইস্কাটনের প্রায় ১ কিলোমিটারের রাস্তাটির নকশা কয়েকবার পরিবর্তন করে রাস্তার পাশে কার পার্কিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাস্তাটি বেশ ব্যস্ত হওয়ায় রাতে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা কাজ করার সুযোগ পাওয়া যায় তাই কাজ শেষ হতে একটু দেরি হচ্ছে। রাস্তাটির বাংলামোটরের অংশে বাস বে তৈরীসহ আলাদা জায়গা করে গাছ রোপণ করা হয়েছে। মগবাজারের অংশে রয়েছে কার পার্কিং ব্যবস্থা। এ রাস্তার কাজ শেষ হতে আরও ২ থেকে ৩ মাস লাগবে।"
তিনি জানান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ট্রাফিক বিভাগ) এর অনুরোধে ও জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে রাস্তা সচল রেখে পাইপলাইনের কাজ চলমান রাখার ফলে কাজ শেষ করতে বিলম্ব হচ্ছে।
সিটি কর্পোরেশনের তথ্যানুযায়ী, এ পর্যন্ত রাস্তাটির প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। কার্যাদেশ অনুযায়ী, এ রাস্তাটির উন্নয়ন কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এবং কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ সম্পন্নের মেয়াদ ছিল জুলাইয়ের ৩১ তারিখ পর্যন্ত। পরবর্তীতে এ কাজের মেয়াদ ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং সব শেষে আরও একবার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে চলমান রাস্তার উন্নয়ন কাজ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নিউ ইস্কাটন রোডের দুই পাশের ফুটপাত, পাইপলাইন, ডিভাইডারের কাজ অধিকাংশই শেষ হয়েছে। সকাল থেকে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত এ রাস্তাটিতে গাড়ির চাপ থাকায় এবং ফ্লাইওভারের কারণে রাত ১২টার পরে পাইপলাইনের কাজের সুযোগ পায় শ্রমিকরা। তবে রাস্তাটির উত্তর পাশে বেশি জায়গা থাকায় গাড়ি পার্কিং ও বাস বে তৈরীর কাজ শেষ প্রায়।
রাস্তার কাজ সম্পূর্ণ শেষ না হওয়ায় এখনও পার্কিং এর স্থান, বাস বে, গাছ লাগানোর স্থানে অবৈধ পার্কিং ও গাড়ির ওয়ার্কশপের কাজ চলে।
এ রাস্তাটি দিয়ে নিয়মিত চলাচলকারী আবিদা হক টিবিএসকে বলেন, "গত এক বছর ধরে রাস্তাটির উন্নয়ন কাজ চলায় অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এখন সুপ্রশস্ত ফুটপাত হওয়ায় হেঁটে চলা সহজ হয়েছে। তবে গাড়ি মেরামতের দোকানগুলো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। রাস্তাটির কাজ শেষ হলে যেন সকল ধরনের সুবিধা মানুষ পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে সিটি কর্পোরেশনকে।"
প্রাইভেটকার চালক সফিউল ইসলাম বলেন, "রাস্তাটির মগবাজারের অংশে বেশ কয়েকটি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে, বিষয়টি আমাদের জন্য স্বস্তির। নিয়মিতই এই রাস্তায় আসতে হয় অফিসের কাজে তখন রাস্তার উপরেই গাড়ি পার্কিং করে রাখতে হয়।"
বাংলামোটর অংশে রাস্তাটির পাশের আনিস কার ডেকোরেশন এর কাওসার আহমেদ বলেন, "রাস্তা বড় করেছে, ফুটপাত উন্নয়ন করেছে কিন্তু আমাদের ব্যবসা পরিচালনার জন্য কার মেরামতের কোনো স্থান রাখা হয়নি। এখন যতোটুকু না গাছ লাগানো জরুরি, তার থেকে বেশি দরকার আমাদের নির্দিষ্ট স্থান করে দেওয়া। আমরা কোনো জায়গা না পেলে বাধ্য হয়ে রাস্তার মধ্যে গাড়ি দাঁড় করিয়েই মেরামত করবো।"
এ এলাকার কার ডেকোরেশন ব্যবসায়ীদের দাবি রাস্তার পাশেই তাদের জন্য একটি স্থান নির্দিষ্ট করে দিক। ফলে মেইন রাস্তায় ও ফুটপাতে যানজট কিংবা অবৈধ পার্কিংয়ের ভোগান্তি পোহাতে হবে না।
ঢাকা উত্তর সিটির জোনাল এক্সিকিউটিভ (জোন-৩) আবদুল্লাহ আল বাকী বলেন, "রাস্তাটির কাজ শেষ হলে সবগুলো সেবা যাতে নগরবাসী পায় সেটা নিশ্চিত করা হবে। কার ডেকোরেশন এর দোকানগুলো যাতে ভোগান্তি সৃষ্টি করতে না পারে এজন্য আমরা ব্যবস্থা নিবো।"