মেট্রোরেলের প্রথম দিনেই চাপ, ভোর চারটা থেকে লাইন
মেট্রোরেলের যাত্রী নিয়ে চলাচলের আজ প্রথম দিন। প্রথম দিনেই আগারগাঁওতে ব্যাপক ভীড় দেখা গেছে।
সকাল ৮টায় ট্রেন চলাচল শুরু করে। কিন্তু তার আগেই আগারগাঁও স্টেশনে ঢোকার মুখে প্রায় আধা কিলোমিটার লম্বা লাইন হয়। নিরাপত্তায় নিয়োজিতরা জানান ভোর চারটা থেকে মানুষ আসতে শুরু করে।
তবে আগতদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা যায় প্রয়োজনের চেয়ে তারা ঘুরতেই এসেছেন বেশি। ফলে অফিসগামীরা পড়েছেন বিপাকে।
সোহেল রানা নামে একজন জানান তিনি স্ত্রী, আত্মীয়স্বজন ও বাচ্চাদের নিয়ে সকাল সকালই মেট্রোরেলে চড়ার উদ্দেশ্যে এসেছেন।
তিনি বলেন, 'এর আগে আমি ব্যাংকক, চীন ও কলকাতায় মেট্রোরেলে চলেছি। কিন্তু আমাদের দেশে প্রথমবারের মতো মেট্রোরেল চালু হয়েছে তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে অভিজ্ঞতা নিতে আসলাম। মেট্রোরেল চালু হওয়ার প্রথম দিনের যাত্রী হতে পারাটা একটা দারুণ ব্যাপার, এজন্যই আসা'।
জয়নাল আবেদিন নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, তিনি এসেছেন জায়গাটা ঘুরে দেখতে।
'প্রথম দিন মেট্রোরেলে উঠবো আনন্দটা অন্যরকম। তাই পরিবারের সকল সদস্যদের নিয়ে চলে এসেছি,' বলেন তিনি।
বাচ্চাদের নিয়ে আসা গৃহবধূ মনিরা পারভীন বলেন, 'ঘণ্টাখানেক হলো আমরা এখানে এসেছি। লাইনে আছি। অল্প অল্প করে এগোচ্ছে। প্রথম দিন মেট্রোরেলে উঠব, এটা একটা আনন্দের ব্যাপার। সেজন্যই বাচ্চাদের নিয়ে আসা।
আইসিটি মন্ত্রণালয়ের মজিদ বিশ্বাস বলেন, 'আমি এমআরটি পাস নিতে এসেছি। আজ মেট্রোরেলে চড়তে আসিনি। আগে আগে নিয়ে নিচ্ছি কারণ এখন অনেক সহজ। পড়ে কঠিন হয়ে যেতে পারে।'
সরেজমিনে দেখা যায় নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা যাত্রীদের অল্প অল্প করে স্টেশনের মধ্যে ঢুকতে দিচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জানান, 'এটা কর্তৃপক্ষের নির্দেশ। ভেতরে অতিরিক্ত মানুষ ব্যবস্থাপনার জন্য খুব বেশি লোক নেই। এজন্য আমরা লাইন ধরে অল্প করে লোক ভেতরে নিচ্ছি। একটি ট্রেন আসলে তার ক্যাপাসিটি অনুযায়ী, ভেতরে পাঠানো হয়'।
'কিন্তু সকাল থেকেই প্রচুর লোক আসছে তাই লাইন অনেক বড় হয়ে গেছে। ভোর চারটা থেকে এখানে মানুষ আসা শুরু করে,' বলেন তিনি।
এদিকে অফিসের সময় হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে অনেকেই মেট্রোরেলে উঠতে না পেরে চলে গেছেন।
আশরাফ কবীর নামের একজন অফিসগামী বলেন, 'আমার অফিস উত্তরায়। আটটার আগেই আমি স্টেশনে এসেছি. এসে দেখি আমার আগেই বিশাল লাইন হয়ে আছে। সাড়ে আটটা পর্যন্ত এখানে অপেক্ষা করেছি। লাইন খুব একটা এগোয়নি। সামনে যে পরিমাণ লোক দেখছি আগামী এক ঘণ্টায় ঢুকতে পারব বলে মনে হয় না। এইজন্য বাসে করে অফিসে চলে যাচ্ছি'।
চাকরিজীবী মীর মোশাররফ হোসেন বলেন, 'আমি কাফরুলে থাকি, অফিস উত্তরা। আমার অফিস শুরু ১০টায়। যেহেতু ১০ মিনিটে উত্তরা চলে যাব তাই নয়টার পরে বাসা থেকে বের হয়েছি । কিন্তু এখন এসে দেখি বিশাল লাইন। কখন মেট্রোরেলে উঠতে পারব তার ঠিক নাই। এরকম ভিড় হবে বুঝতে পারিনি। বুঝলে আমিও আগে চলে আসতাম'।
উত্তরা থেকে আগত যাত্রীদের জন্য আগারগাঁও স্টেশনে প্রস্তুত রয়েছে ৩০টি শাটল বাস। প্রতি ১০ মিনিট পর পর ছেড়ে যাচ্ছে এসব বাস।
কল্যাণপুরের বিআরটিসি ডিপোর ব্যবস্থাপক নূরে আলম বলেন, 'সকাল ছয়টায় এখানে ৩০টি বাসই চলে আসে। আটটা থেকে যাত্রা শুরু করে। প্রতি ১০ মিনিট পরপর বাস ছাড়া হয়, তাতে যতজন যাত্রীই হোক'।
'যেহেতু মেট্রোরেল ১২টা পর্যন্ত চলবে, আমরা প্রতিদিন সাড়ে বারোটা পর্যন্ত আগারগাঁও থেকে বাস ছাড়ব। এরপরে যাত্রী পাওয়া যাবে না। তাই সাড়ে বারোটার পরে এই বাসগুলোই মিরপুর-১০ থেকে চলবে,' জানান তিনি।
এদিকে মেট্রোরে উঠতে পারায় অনেকেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। মেট্রোরেলের সার্ভিস নিয়েও তারা বেশ সন্তুষ্ট।
তুরিন আক্তার নামের একজন যাত্রী বলেন, 'খুবই ভালো সার্ভিস মনে হল। সার্ভিস দেখে মনে হলো যেন আমি বিদেশে আছি, এটা বাংলাদেশ নয়। এখানে যাত্রীদের সহযোগিতার জন্য অনেক লোক আছে। খুবই ভালো লেগেছে।'
মেট্রোরেলে প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকার কারণে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে তারাও।
হুইলচেয়ার ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন মো. মোহসিন বলেন, 'আমাদের জন্য গণপরিবহনে খুব বেশি সুবিধা থাকে না। কিন্তু মেট্রোরেলে প্রতিবন্ধীদের জন্য যথেষ্ট সুবিধা রয়েছে। কারো কোন সহযোগিতা ছাড়া আমি উত্তরা থেকে আগারগাঁও আসলাম মেট্রোরেলে করে। আমার অভিজ্ঞতা খুব ভালো। খুব ভালো লাগছে।'