রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত পেছালো
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা পেছাতে যাচ্ছে। প্রকল্পের সাবস্টেশনের জন্য জার্মান প্রতিষ্ঠান সিমেন্স এজি গ্যাস-ইনসুলেটেড সুইচগিয়ার (জিআইএস) সরবরাহ করতে অস্বীকৃতি জানানোয় বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হতে আরও সময় লাগবে।
ব্যয় এবং বিদেশি বিনিয়োগের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে ২০২৪ সালের জুলাইয়ের আগে উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হবে না।
বৃহস্পতিবার পাবনার ঈশ্বরদীতে রূপপুর সাইট পরিদর্শনকালে প্রকল্প ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে চীনা একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জিআইএস পরিষেবা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
প্রকল্প কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর গণমাধ্যমকে দেওয়া বক্তব্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, প্ল্যান্টের প্রথম ইউনিটের অগ্রগতি প্রায় ৮৭ শতাংশ। পাওয়ার গ্রিডের প্রকল্পও ভালো অবস্থায় রয়েছে বলে জানান তিনি।
'তবে কোভিডের কারণে বিলম্ব হওয়ায় আগামী বছরের পুরোটা প্রয়োজন হবে। আমরা ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হব,' বলেন তিনি।
বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের অগ্রগতি সম্পর্কে নসরুল হামিদ বলেন, 'মহামারির সময় প্রকৌশলীরা কাজ করতে পারেনি। অন্যদিকে টেন্ডার জটিলতার কারণে নদীর অংশের কাজও বিলম্বিত হয়েছে'।
বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হাবিবুর রহমান, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের পরিচালক ড. মোঃ শওকত আকবর ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমানও প্রকল্পস্থল পরিদর্শন করেন।
এর আগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান গত ১৮ অক্টোবর বলেন, নির্ধারিত সময় অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ আগাচ্ছে।
তিনি বলেন, 'প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে শেষ হবে বলে আমরা আশাবাদী'।
সে সময় প্রকল্প পরিচালক শওকত গণমাধ্যমকে আরও জানান, প্রথম ইউনিটের কাজ শুরু করার অবস্থায় আছে, যেটি আগামী অক্টোবরে চালু হবে বলে আশা করছেন তারা।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি ইউরেনিয়াম ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে, বৃহস্পতিবার প্রকল্প পরিচালক দাবি করেন যে ইউনিটটি ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রস্তুত করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, 'যদি অন্যান্য সমস্যার সমাধান হয়, তবে ইউনিটটি ২০২৪ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হবে'।
জিআইএস পরিষেবা দিবে না জার্মান প্রতিষ্ঠান
যে সাবস্টেশনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় পাওয়ার ট্রান্সমিশন লাইনে যুক্ত করা হবে, তার কাজও কেন্দ্র নির্মাণকারী ঠিকাদারই করছে।
তবে জার্মান প্রতিষ্ঠান সিমেন্স এজি সম্প্রতি সাবস্টেশনের জন্য জিআইএস পরিষেবার প্রয়োজনীয় যন্ত্রাদি সরবরাহ করবে না বলে জানিয়েছে।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয়-এক্সপোর্টের ভাইস-প্রেসিডেন্ট অ্যালেক্সি ডেইরি বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রকল্পের অগ্রগতি উপস্থাপনের সময় বলেন, ২০২৩ সালের নভেম্বরে ইনস্টলেশনের শর্তাদি মেনে বিকল্প সরবরাহকারীর কাছ থেকে সরঞ্জামগুলো সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে কর্তৃপক্ষ চীনা প্রতিষ্ঠান সিউয়ান ইলেকট্রিক লিমিটেডের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি কিনবে।
সাম্প্রতিক মিডিয়া প্রতিবেদনের দাবি অনুযায়ী, রূপপুর প্ল্যান্টের জন্য প্রকল্প সামগ্রী বহনকারী একটি রাশিয়ান জাহাজকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, এটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয়। তারা বিষয়টি ভালোভাবে সমাধান করতে পারবে।
এছাড়াও চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এই প্রকল্পে কোনো প্রভাব ফেলছে কি না জানতে চাইলে তিনি রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জুনের মধ্যে বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি
রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প। চালু হলে এটি দেশে সুলভ মূল্য ও পরিবেশবান্ধব বিদ্যুতের একটি ভালো উৎস হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সর্বাধুনিক জেনারেশনের ৩+ রাশিয়ান ভিভিইআর ১২০০ চুল্লি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হবে, যা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়ক যাবতীয় শর্তাদি মেনে চলে।
বিদ্যুতের শুল্ক প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করছি প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম কিলোওয়াটে ৪ টাকা থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করবে।
আমরা ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তির (পিপিএ) খসড়া প্রস্তুত করেছি এবং আশা করছি আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে তা স্বাক্ষরিত হবে।