গ্রাহকদের জন্য আরেকটি বৈদ্যুতিক শক! খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়লো ৫ শতাংশ
গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। নতুন এই দাম আগামীকাল (১ ফেব্রুয়ারি) থেকেই কার্যকর হবে।
সোমবার (৩০ জানুয়ারি) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
একইদিনে বাংলাদেশের ৪.৫ বিলিয়ন তথা ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, যার সাথে কাকতালীয় সংযোগ রয়েছে এই মূল্যবৃদ্ধির।
ওয়াশিংটনে যখন ঋণ অনুমোদনের জন্য দাতা সংস্থাটি বৈঠকে, বাংলাদেশেও তখন বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির গেজেট জারি হচ্ছে– দুটো খবর প্রায় একই সময়ে জনগণের কাছে পৌঁছেছে।
ঋণ অনুমোদনের জন্য আইএমএফের সংস্কারের অংশ বলেই মনে করা হচ্ছে এই দামবৃদ্ধিকে।
আইএমএফের কাছে ঋণপ্রত্যাশী আরেকটি দেশ, পাকিস্তানও সংস্থাটির স্বার্থে জ্বালানির দাম বাড়ানোর কথা ভাবছে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) গণশুনানিকে পাশ কাটিয়ে (সদ্য মঞ্জুর করা নীতি) এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করলো সরকার।
রেকর্ড মূল্যস্ফীতির মধ্যে এমনিতেই জীবনযাপনের ব্যয় নির্বাহে দুর্ভোগে আছে সর্বস্তরের মানুষ। বিদ্যুতের খুচরা পর্যায়ে দামবৃদ্ধি তাদের জীবন সংগ্রামকে আরও কঠিনতর করে তুলবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও মজুরি বিশেষজ্ঞরা।
নতুন হার অনুযায়ী, গ্রাহক পর্যায়ে দাম ৩.৯৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে বিদ্যুতের দাম ৪.১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে গত ১২ জানুয়ারি খুচরা বা গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট ঘণ্টা) বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়েছিল সরকার।
এখন থেকে প্রতি মাসেই গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয় করা হবে বলে মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
জানুয়ারির প্রথম দিকে গণশুনানিতে বিতরণ কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা তাদের রাজস্ব প্রয়োজনীয়তার দিকটি তুলে ধরে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধিকে খুচরা পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে পুরোপুরি সমন্বয় করার প্রস্তাব দেন। প্রস্তাব পর্যালোচনার পর বিইআরসির কারিগরি কমিটি খুচরা পর্যায়ে ১৫.৪৩ শতাংশ দাম বাড়ানোর সুপারিশ করে।
বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব ও কারিগরি কমিটির সুপারিশের বিরোধিতা করে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল হক তখন বলেন, গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর মাধ্যমে এই কোম্পানিগুলো যেভাবে রাজস্ব বাড়াতে চাইছে, সেটা তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যয় সমন্বয়ের মাধ্যমেই করা সম্ভব।
তিনি বলেন, "নজিরবিহীন এই মূল্যস্ফীতি ও মজুরি ঘাটতির সময়ে, অর্থনীতির সামষ্টিক ও ব্যষ্টিক পর্যায়ের ভোক্তাদের ক্ষতিগ্রস্ত না করেই কোম্পানিগুলো দরকারি রাজস্ব ব্যবস্থাপনা করতে পারবে। যেমন ধরেন ডেসকো উদ্বৃত্ত আয়ের পরিস্থিতিতে রয়েছে। অন্যান্য কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন ও তাদের আয়ের উৎস লক্ষ্য করলেও দেখবেন, তাদের কারোরই বিতরণ মূল্য বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই।"
বিদ্যুতের নতুন মূল্যবৃদ্ধি দেশের কৃষি উৎপাদনকে ব্যাপক নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে, এতে নিত্যপণ্যের দামে আরেকদফা মূল্যস্ফীতির আঘাত আসবে, বেড়ে যাবে জীবনযাত্রার ব্যয়। এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও বিদ্যুৎ, জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট শহীদুল্লাহ আজিমের মত, সরকারের এভাবে হঠাৎ গ্যাস এবং বিদ্যুতের দাম বাড়ানো অনুচিত।
"এমন পদক্ষেপ জনজীবনের উপর চাপ সৃষ্টি করবে। মূল্যবৃদ্ধির ফলে আমাদের উৎপাদন খরচ প্রায় ৪০% পর্যন্ত বাড়তে পারে", বলেন তিনি।
কিউট ড্রেস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ এইচ এম মুস্তাফিজ বলেন, "গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দামবৃদ্ধি, অবশ্যই আমাদের উৎপাদন খরচে আরেকটি চাপ সৃষ্টি করবে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে আমাদের কর্মীদের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বাড়বে। জানি না অতিরিক্ত বিলের ক্ষতিপূরণ দেবে কে, কেননা আমাদের এফওবি (ফ্রি অন বোর্ড) প্রাইসও সংকুচিত হচ্ছে।"
প্রসঙ্গত, গত ১৮ জানুয়ারি আবাসিক, সার ও চা উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাস ছাড়া অন্য খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দামও ১৪% থেকে ১৭৯% পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দেয় সরকার। গ্যাসের এই দামও ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।
নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম বর্তমানের ৫ টাকা ২ পয়সা থেকে বেড়ে ১৪ টাকা হবে (১৭৯% বৃদ্ধি)।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ বলছে, ইউক্রেন-রাশিয়া সঙ্কটের মধ্যে চলমান বৈশ্বিক জ্বালানি পরিস্থিতির ফলে সব ধরনের জ্বালানির দামে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।