চট্টগ্রামে পরিবহন মহাপরিকল্পনা ও মেট্রোরেলের সম্ভাব্যতা যাচাই কাজের উদ্বোধন
বন্দর নগরী চট্টগ্রামের যানজট সমস্যার নিরসন ও প্রস্তাবিত চট্টগ্রাম মেট্রোরেল প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের হোটেল র্যাডিসন ব্লু বে ভিউতে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে উদ্বোধন ঘোষণা করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, 'বাণিজ্যিক রাজধানী ও বন্দর নগরী চট্টগ্রাম হচ্ছে দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। তাই চট্টগ্রামের যানজট নিরসনে তরুণ প্রজন্মের স্বপ্নের প্রকল্প মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আজকের দিনটি চট্টগ্রামের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে।'
'উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার চট্টগ্রামকে বিশ্ব অর্থনীতির প্রাণ প্রবাহে উত্তরনে অবিরাম প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় পরিবহন মাস্টার প্ল্যান ও মেট্রোরেল নির্মাণে প্রাথমিক সম্ভাবতা যাচাই শীর্ষক প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে'- বলেন ওবায়দুল কাদের।
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মহাসড়ক ও মেরিন ড্রাইভ সড়কের উন্নয়ন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, 'মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত আরও একটি মেরিন ড্রাইভ তৈরির সম্ভাবতা যাচাইয়ের কাজ শেষে ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চলছে। পাশপাশি জাইকার সহযোগিতায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ককে চারলেনে উন্নীত করার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সারাদেশে পণ্য পরিবহন সহজ করার জন্য অ্যাক্সেস রোডটি ছয় লেনে উন্নীত করা হবে।'
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের যানজট সমস্যার নিরসন ও প্রস্তাবিত মেট্রোরেল প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই কাজের পরিকল্পনা নিয়ে পাওয়ার প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন- কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (কোইকা) এর প্রজেক্ট ম্যানেজার টনি ইলহো চুং।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) এর তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭০ কোটি ৬২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। যাতে বাংলাদেশ সরকার অর্থায়ন করবে ১৩ কোটি ৬২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা এবং কোইকা ৫৭ কোটি টাকা অর্থায়ন করবে। প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে জানুয়ারি ২০২৩ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত।
এ প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য একটি পরিবহন মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। একইসঙ্গে পরিবেশবান্ধব নগর মেট্রো ব্যবস্থা নির্মাণের মাধ্যমে, চট্টগ্রামে যানজট কমিয়ে নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা হবে। এছাড়াও এ প্রকল্পের আওতায়, ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (সিসিসি) ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (সিপিএ) সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে।
এর আগে ২০২২ সালের ২২ নভেম্বর একনেক সভায় ডিটিসিএ কর্তৃক প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, 'আমি বারবার প্রধানমন্ত্রীকে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ করেছিলাম। প্রধানমন্ত্রী সেকথা রেখেছেন। পৃথিবীতে মন্দা চলছে। সংকটময় বিশ্ব, এমন পরিস্থিতিতে আমাদের অনেক প্রকল্পের কাজ স্থগিত রাখতে হয়েছে। বিশ্বব্যাপী অনেক প্রকল্প শ্লথ হয়ে গেছে। এরমধ্যেও প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের মানুষের কথা ভেবে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।'
এসময় মন্ত্রী বলেন, 'আমি বারবার প্রধানমন্ত্রীকে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ করেছিলাম। প্রধানমন্ত্রী সেকথা রেখেছেন। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে বলবো, তারা যেন সমীক্ষা কাজে মিরসরাইয়ে বাস্তবায়নাধীন বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও কর্ণফুলী নদীর অপর পাড়ে গড়ে ওঠা নগরকে এ পরিকল্পনায় রাখেন। কেননা এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম শহর আরও নান্দনিক হয়ে যাবে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী, সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, বাংলাদেশে নিযুক্ত কোরিয়ান রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং কিউন। এসময় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।