সিলেট বোর্ডের এইচএসসির ফল: ‘ইংরেজি ভীতিতে’ কমেছে পাসের হার
এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে সিলেট শিক্ষাবোর্ডে কমেছে পাসের হার। তবে বেড়েছে জিপিএ-৫। সিলেটে এবার পাসের হার ৮১.৪০ শতাংশ আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৮৭১ জন।
বুধবার দুপুরে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলের মাধ্যমে এই ফলাফল ঘোষণা করেন বোর্ড সচিব অধ্যাপক মো. কবির আহমদ। এ সময় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক অরুন চন্দ্র পালসহ শিক্ষা বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গত বছর সিলেট বোর্ডে পাসের হার ছিল ৯৪.৮০ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৪ হাজার ৭১৯ জন।
এবার পাসের হার কমা প্রসঙ্গে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক অরুণ চন্দ্র পাল বলেন, 'আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইংরেজি ভীতি আছে। অকৃতকার্য হওয়া বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই ইংরেজিতে খারাপ করেছে। এবার ইংরেজিতে পাসের পার ৮৫.৫৬ শতাংশ।'
শহরের বাইরের কলেজগুলোতে ইংরেজির ভালো শিক্ষক না থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের ভীতি কাটছে না বলে মনে করেন তিনি।
এছাড়া মানবিকে অধিক শিক্ষার্থীর কারণেও পাসের হার কমেছে জানিয়ে অরুণ চন্দ্র পাল বলেন, এবার বিজ্ঞান বিভাগের ৯০.৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। আর মানবিকে পাস করেছে ৭৯.১৮ শতাংশ। অন্যান্য বোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী বেশি। কিন্তু আমাদের এখানে মানবিকের। এ বছর সিলেটে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১২ হাজার ১৩৩ জন ও মানবিক বিভাগ থেকে ৪৪ হাজার ৬৫১ জন পরীক্ষায় অংশ নেয়।
বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী বাড়াতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমরা ইতোমধ্যে শিক্ষকদের নির্দেশনা দিয়েছি, শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানে পড়ার জন্য উৎসাহ দিতে।'
পাসের হার কমলেও এবার জিপিএ-৫ কিছুটা বেড়েছে। এ প্রসঙ্গে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক অরুণ চন্দ্র পাল, এখন শিক্ষাথী ও অভিভাবকরা পড়াশোনার ব্যাপারে অনেক সচেতন। সবার মধ্যে পড়ালেখা নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে। এসব কারণে জিপিএ-৫ দিন দিন বাড়ছে।
ফলাফল ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ বছর সিলেট শিক্ষা বোর্ড থেকে ৬৬ হাজার ৪৯১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করেছে ৫৪ হাজার ১২২ জন। পাসের হারে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে বিজ্ঞান বিভাগ। এই বিভাগের ৯০.৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। এছাড়া ব্যবসা শিক্ষায় ৮০.২৩ শতাংশ ও মানবিকের ৭৯.১৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক দিয়েও এগিয়ে বিজ্ঞান বিভাগ। বিজ্ঞানের ৩ হাজার ৩৩৩ জন, মানবিকের ১ হাজার ২৬ জন ও ব্যবসায় শিক্ষার ৫১২ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।
জেলাওয়ারি ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে সিলেট জেলা। এই জেলায় পাসের হার ৮৬.৪৮ শতাংশ ও জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ হাজার ৬৯ জন। হবিগঞ্জ জেলায় পাসের হার ৮২.২৭ শতাংশ ও জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৩৪ জন। মৌলভীবাজার জেলায় পাসের হার ৭৪.৯১ শতাংশ ও জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৭৯ জন। সুনামগঞ্জ জেলায় পাসের হার ৮২.৮৫ শতাংশ ও জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৮৯ জন।
পাসের হারে এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা। মেয়েরা ৮২.৬১ শতাংশ ও ছেলেরা ৭৯.৬১ শতাংশ পাস করেছে।
গত বছর থেকে সিলেটে এবার পাসের হার কমেছে। গত বছর পাসের হার ছিল ৯৪.৮০ শতাংশ। তবে বেড়েছে জিপিএ-৫। গতবছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৪ হাজার ৭১৯ জন।
সিলেটে এবার শতভাগ পাস করেছে ১১ টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তবে শতভাগ ফেল একটিও প্রতিষ্ঠান নেই।
তবে এবারের ফলাফলকে সন্তোষজনক উল্লেখ করে সিলেট শিক্ষাবোর্ডের সচিব অধ্যাপক মো. কবির আহমদ বলেন, গত পরীক্ষার আগে সিলেটে ভয়াবহ বন্যা ছিল। এছাড়া করোনার কারণে কলেজে ঠিকমতো ক্লাসও হয়নি। এসব বিবেচনায় এবারের ফলাফল সন্তোষজনক।
তিনি বলেন, 'গত দুইবছরের ফলাফলের সাথে এবারের ফলাফল তুলনা করলে চলবে না। কারণে গত বছর সীমিত কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা হয়েছে। আর তার আগের বছর অটো পাস দেওয়া হয়েছে। তাই ফলাফলের তুলনা করতে হবে ২০১৯ সালের সাথে। ওই বছল পাসের হার ছিল ৬৭.০৫ শতাংশ।'