সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’ প্রণয়নের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
সম্প্রতি জারি করা সড়ক পরিবহন বিধিমালা-২০২২ এ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বীকৃত সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ১৬৭টি বিধির মধ্যে মাত্র ৫টি বিধিতে সড়কের নিরাপত্তার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। বাকিগুলোতে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সড়ক সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ের সমন্বয়ে বর্তমান আইনে একটি পৃথক অধ্যায় সংযোজন অথবা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ৫টি পিলার বা 'সেইফ সিস্টেম এপ্রোচ' পদ্ধতিতে একটি পৃথক সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোড সেফটি অ্যান্ড ইনজুরি প্রিভেনশন প্রোগ্রামের ডা. মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া অকাল মৃত্যু রোধে জাতিসংঘের সেকেন্ড ডিকেড অব অ্যাকশন ফর রোড সেফটি ২০২১-২০৩০ এ বর্ণিত পাঁচটি পিলার বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছেন। পাঁচটি পিলারের মধ্যে রয়েছে নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ সড়ক, নিরাপদ মোটরযান, নিরাপদ সড়ক ব্যবহারকারী এবং দুর্ঘটনা পরবর্তী ব্যবস্থাপনা।
সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন এন্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, দেশে বছরে প্রায় ২৩ হাজার ১৬৬ জন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়।
বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোনায়েম হোসেন বলেন, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রমাটোলজি অ্যান্ড অর্থোপেডিক রিহ্যাবিলিটেশনের (নিটোর) ইমার্জেন্সিতে প্রতিদিন ৩০০ রোগী আসে, যাদের মধ্যে ৪০% সড়ক দুর্ঘটনার রোগী। সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের অধিকাংশের বয়স ১৮-৪৫ বছরের মধ্যে এবং দেখা যায় তারাই পরিবারের একমাত্র উপর্জনক্ষম ব্যক্তি হয়। দুর্ঘটনায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে শুধু বিধি করলে হবে না, আইনের বাধ্যবাধকতা জরুরি। আইনের প্রয়োগ বাড়ানো গেলে ৪০% সড়ক দুর্ঘটনার রোগী কমানো যেত, এতে পরিবার ও দেশের আর্থিক ক্ষতি কমানো যাবে, যোগ করেন তিনি।
বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ডেইলি স্টারের শহীদ আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. খন্দকার আবদুল আউয়াল রিজভী বলেন, "সরকার ২০১৮ সালে সড়ক পরিবহন আইন জারি করেন এবং দীর্ঘ চার বছর পরে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সড়ক পরিবহন বিধিমালা প্রণয়ন করেন। কিন্তু এই বিধিমালায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বীকৃত সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। দুর্ঘটনা কমাতে সরকারকে অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে। কোনটি আগে করবে, কোনটি পরে তা নির্ণয় করতে হবে। এই ৫টি পিলারের প্রথমটি ম্যানেজমেন্ট। ম্যানেজমেন্ট ঠিক করতে হবে, এখন যে ট্রাফিক সিস্টেম আছে তা কাজে লাগাতে হবে।"
"সড়ককে নিরাপদ করতে গাড়ির গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ, সঠিকভাবে সিট বেল্ট পরিধান, গুণগত হেলমেটের ব্যবহার নিশ্চিত, দুর্ঘটনা পরবর্তী আহত ব্যক্তির যথাযথ চিকিৎসা এবং পুর্নবাসন সংক্রান্ত ব্যবস্থা করা প্রয়োজন,'' বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আমাদের দেশে রাস্তা ভালো হলে গাড়ির গতি বাড়ে এবং দুর্ঘটনা বাড়ে। কিন্তু অন্যান্য দেশে গতি কমিয়ে দুর্ঘটনা কমানো হয়। বিধিমালায় হেলমেট পরার কথা বলা আছে কিন্তু অনেক পাঠাও ও উবার ড্রাইভার মানহীন হেলমেট দেয় যাত্রীদের। তাই মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা কমানো গেলে অকাল ও প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু কমবে এবং দেশের জিডিপি বৃদ্ধি পাবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বব্যপী মানুষের মৃত্যুর পেছনে দায়ী কারণগুলোর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার অবস্থান ৮ম। দুর্ঘটনার কারণে প্রতিবছর দেশের জিডিপির ৩% ক্ষতি হচ্ছে।