কার্ডের মাধ্যমে ওএমএস পরিচালনার নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী
খোলা বাজারে বিক্রি (ওএমএস) কার্যক্রম কার্ডের মাধ্যমে পরিচালনা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা। বর্তমানে যেভাবে ওএমএস কার্যক্রম চলছে সেখানে ব্যবস্থাপনার ঘাটতি থাকায় সরকার প্রধান এই নির্দেশনা দিয়েছেন।
সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানানো উপলক্ষ্যে সচিবালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, "প্রধানমন্ত্রীর কাছে তথ্য আছে যে, ওএমএস কার্যক্রমে শৃঙ্খলা, ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে। সেজন্য এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।"
কার্ডের মাধ্যমে কীভাবে ওএমএস কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে, তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে ঠিক করা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। নির্ধারিত আলোচনার বাইরে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ওএমএস কর্মসূচির আওতায় সরকার কম দামে চাল ও আট বিক্রি করে থাকে। যেকোনো ব্যক্তি একবারে ৩০ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ৫ কেজি চাল ও ২৪ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ২ কেজি খোলা আটা কিনতে পারেন।
চলতি অর্থবছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকার সারা দেশে ওএমএসের আওতায় ৪ লাখ ১০ হাজার টন চাল ও ১ লাখ ৩৪ হাজার টন আটা বিক্রি করেছে। আগের অর্থবছরে এই সময়ে ওএমএসের আওতায় ২ লাখ ৭৫ হাজার টন চাল বিক্রি করে সরকার। এ বছর আটার দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়ে যাওয়ায় আটার সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে সরকার। ঢাকা মহানগর, ঢাকা জেলা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদী জেলাতে শুধু আটা বিক্রি করা হয়। আর বাকি ৬০ জেলায় বিক্রি করা হয় শুধু চাল।
চালের দাম বৃদ্ধিসহ মূল্যষ্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার ফলে নিম্নমধ্যবিত্ত জনসাধারণও ওএমএসের ট্রাক বা বিক্রয় কেন্দ্র থেকে চাল, আটা কিনছেন। আবার বাজারের তুলনায় দাম কম হওয়ায় অনেকে এই ব্যবস্থা থেকে পণ্য কিনে নিয়ে ব্যবসাও করছেন।
আরও ৪৪ দেশে নাগরিকত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশিরা দ্বৈত নাগরিকত্ব পাবেন
নতুন করে বিশ্বের ৪৪টি দেশের নাগরিকত্ব পাওয়া বাংলাদেশিদের দ্বৈতনাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়েও সিদ্ধান্ত দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ বিষয়ে শীঘ্রই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করবে। এর আগে ৫৭ দেশের নাগরিকত্ব পাওয়া বাংলাদেশিদের এ ধরনের সুবিধা দিয়েছে সরকার। সবমিলিয়ে এখন ১০১টি দেশের ক্ষেত্রে সরকার এমন সুবিধা দিল।
তবে যেসব দেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য বাংলাদেশিরা দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন, তারা এ সুবিধা পাবেন না।
যেসব দেশের নাগরিকত্ব পাওয়া বাংলাদেশিরা এ সুবিধা পাবেন- আফ্রিকা মহাদেশের মিশর, দক্ষিণ আফ্রিকা, কেনিয়া, আলজেরিয়া, সুদান, মরক্কো, ঘানা, রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি, তিউনিশিয়া, সিয়েরা লিয়ন, লিবিয়া, কঙ্গো, লাইবেরিয়া, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, ইরিত্রিয়া, গাম্বিয়া, বতসোনায়া এবং মরিশাস। দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের ব্রাজিল, বলিভিয়া, কলম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা, সুরিনাম, আর্জেন্টিনা, পেরু, ইকেুয়েডর, চিলি, উরগুয়ে এবং গ্যায়ানা। ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের কিউবা, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, হাইতি, বাহামা, জ্যামাইকা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, ডমিনিকা, সেন্ট লুসিয়া, বার্বাডোস, সেন্ট ভিনসেন্ট, গ্রেনাডাইন, গ্রেনাডা, সেন্ট কিউস ও নেভিস এবং ওশেনিয়া মহাদেশের ফিজি।
সশস্ত্র বাহিনীর ১,১২৯ সদস্য ডেপুটেশনে কাতার যাচ্ছেন
এছাড়া, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর ১,১২৯ জন সদস্য কাতারে ডেপুটেশনে যাবেন বলেও সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। এ বিষয়ে সোমবার বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে চুক্তির খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিপরিষদ।
ডেল্টা প্ল্যান ও স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ডেল্টা প্লান ও স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন এবং এসডিজির লক্ষ্য অর্জনের জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ পরিকল্পনার মূল বিষয় হচ্ছে, আগামীতে সকল মন্ত্রণালয় তাদের কার্যক্রমে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলার প্রভাব বিবেচনা করে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোর উদ্যোগ থাকবে। সরকারের লক্ষ্য বিপদাপন্ন অবস্থা থেকে সহিষ্ণুতা ও উন্নয়নের দিকে যাওয়ার রোডম্যাপ তৈরি করা।
তিনি আরও বলেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ২০৪১ সাল পর্যন্ত ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হবে। পরিকল্পনা ঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে প্রতিবছর জিডিপিতে ৫০ মিলিয়ন ডলার যোগ হবে। অন্যদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যে জিডিপি কমে যাচ্ছে, সেটিও বন্ধ হবে।
আরেক প্রস্তাবে মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা ২০২২-২০৪১-এর খসড়ারও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বৈঠকে।
বিএসএমএমইউ'র উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষের মেয়াদ ৪ বছর
অপর আরেক প্রস্তাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের নিয়োগের মেয়াদ ৩ বছর থেকে বাড়িয়ে ৪ বছর করা হয়েছে। সিন্ডিকেট সদস্য একজন বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩১ জন। এর পাশাপাশি সিন্ডেকেটে স্পিকার যে ৩ জন সংসদ সদস্য মনোনয়ন করেন, তাদের মধ্যে একজন অবশ্যই নারী রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে যুক্ত করা হয়েছে।
সোমবারের মন্ত্রীসভা বৈঠকে মোট ৮টি বিষয়ে আলোচনা হয়। এরমধ্যে বাকি ৪টি বিষয় ছিল তিনজন মন্ত্রীর বিদেশ সফর সম্পর্কে অবহিত করা সংক্রান্ত।