সংকটে আছি, সন্দেহ নেই: সিইসি
রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যবদ্ধতা নিয়ে নির্বাচন কমিশন সংকটে আছে বলে স্বীকার করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। এছাড়া নির্বাচনকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের অডিটরিয়ামে জাতীয় ভোটার দিবসের আলোচনায় সিইসি এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেছেন, "আমরা কিন্তু একটা সংকটে আছি কোন সন্দেহ নেই। কারণ ভোট নিয়ে আমরা এখনও রাজনৈতিক পুরোপুরি ঐক্যবদ্ধতা দেখতে পাচ্ছি না। এই ঐক্যবদ্ধতা খুব বেশি প্রয়োজন। আমরা কখনই চাই না, নির্বাচনের পূর্বে বা নির্বাচনের সময়ে কোনো রাজনৈতিক সংকট উদ্বুদ্ধ হোক।"
তিনি আরো বলেন, "নির্বাচন হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে একটি দেশ ভেঙ্গে গেল... একটা যুদ্ধ হয়েছে।"
"কাজেই নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিকভাবে এটা সকলকে, আমাদেরকেও অনুধাবন করতে হবে। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের এটা অনুধাবন করা প্রয়োজন। আমি মনে করে নির্বাচন এবং ভোটাধিকারকে হালকাভাবে গ্রহণ না করাই ভালো।"
স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৭৩ সালে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, "একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৭৩ সালে। এরপর উলটপালট হয়ে যায় আর ভালোভাবে নির্বাচনটা এগোতে পারেনি। ১৯৭৫ সালের পর সংবিধান অকার্যকর ছিল। এরপর বিভিন্ন নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনগুলো খুব যে আস্থাভাজন হয়েছিল তা না।"
তিনি বলেন, "আমরা আবার নির্বাচনী ব্যবস্থায় ফিরে এসেছি। সামরিক শাসন আমল শেষ হয়ে গেলে, ১৯৯০ সালের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে নির্বাচন হয়েছে। শুধুমাত্র ২০০৭ সালে ১/১১ সরকারকে অসাংবিধানিকভাবে অবস্থান করতে হয়েছিল। এরপর আবার নির্বাচনটা চালু হয়েছে এবং ধারাবাহিকভাবে চালু আছে।"
নির্বাচন ব্যবস্থাটা খুব আস্থাভাজন হয়ে ওঠেনি উল্লেখ করে তিনি আবার বলেন, "জাতীয় পার্টির জিএম কাদের বলেছেন-নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। ...এতে কিছুটা সত্য যদি থেকেও থাকে এটা ভালো কথা নয়। মানুষের আস্থাটা অর্জন করতে হবে। মানুষের আস্থা আনার জন্য আমাদের নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব রয়েছে এবং নির্বাচন কমিশন যেহেতু নির্বাচন আয়োজন করবে ভোটার শিক্ষণ কার্যক্রম খুব গুরুত্বপূর্ণ।"
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, "আমরা ভোটার তালিকা দিয়েছি। প্রায় ১২ কোটি মানুষ ভোটার হয়েছে। ১২ কোটি মানুষ হয়তো ভোট দেবে না। কিন্তু ভোটার এডুকেশন বাড়িয়ে যদি দেখাতে পারি সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ভালো হয়েছে, একটা কথা হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলে এমনিতেই ভোটার উপস্থিতি ভালো হয়।"
তিনি আরও বলেন, "যিনি ভোট দেবেন তার দায়িত্ব কিন্তু শুধু ভোট দেওয়া না, তার দায়িত্ব কিন্তু নিতে হবে মনস্তাত্ত্বিকভাবে যে, কাকে ভোট দেবেন এটাও তার ভেবে দেখা উচিত। এটাও কিন্তু আসবে রাজনৈতিক জ্ঞান থেকে। ভোটারকে যদি আমরা সে বিষয়ে এডুকেটেড করতে পারি, তাহলে কিন্তু যোগ্যজনে ভোটের অর্থ কি তারাও বুঝতে পারবেন।"
এ সময় অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান (অব.) বলেন, "আমরা সবার অংশগ্রহণে একটা সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে চাই। ভোটার, দল, প্রার্থী, এজেন্ট, গণমাধ্যমকর্মী সবার জন্যে নির্বিঘ্ন পরিবেশে তৈরিতে কমিশনের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকবে। এক্ষেত্রে আমরা সবার সহযোগিতাও চাই।"
নির্বাচন কশিমনার রাশেদা সুলতানা জানান, সবার আস্থা অর্জনে কমিশন কাজ করে যাচ্ছে। সব দল ভোটে এসে প্রতিদ্বন্দ্বিপূর্ণ নির্বাচন হবে বলে আশা করেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, "ভোটার তালিকা হালনাগাদ স্পর্শকাতর কাজ। ভোটার যারা হয়েছেন তারা যোগ্যজনে ভোট দেবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।"
নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান দিবসটি নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে এতে সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন অংশীজনদের সম্পৃক্ত করার তাগিদ দেন।