সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ: ৩০০ ঘরবাড়ি, ১০ কারখানার ৫০ লাখ টাকা ক্ষয়ক্ষতি
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলেছে। স্ক্র্যাপ পণ্যের ব্যবসায়ী গোলাম মওলা সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায় তার বড়ির ড্রইংরুমে বসে টিভি দেখছিলেন। এমন সময় হঠাৎ বিকট শব্দে কেঁপে উঠল তার ঘর। শব্দের ধাক্কায় ভেঙে পড়ে বন্ধ থাকা সব জানালার কাঁচ।
'শব্দের ব্যাপকতা এত বেশি ছিল যে ১৫-২০ সেকেন্ড ধরে কাঁপতে থাকে আমার পুরো ঘর। সংবিৎ হারিয়ে কয়েক মিনিট বসে রইলাম সোফায়। পরে ঘরের ছাদে উঠে দেখতে পাই দূরে একটি কারখানা থেকে কুণ্ডলী পাকিয়ে ধোঁয়া উঠছে। কিছুক্ষণ পর খবর পেলাম আমার ঘর থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ হয়েছে,' দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন গোলাম মওলা।
'শুধু আমার ঘরই নয়, আশেপাশে থাকা আমার ভাই, চাচা ও প্রতিবেশীদের ঘরের প্রায় সব কাচই বিস্ফোরণে সৃষ্ট বিকট শব্দের ধাক্কায় ভেঙে পড়েছে,' তিনি যোগ করেন।
দুর্ঘটনাস্থল সীমা অক্সিজেন কারখানা থেকে প্রায় আধকিলোমিটার দূরে নিজের ঘরে শুয়ে ছিলেন রুবি খন্দকার নামে এক গৃহিণী। হালকা গরম পড়ায় শোবার ঘরের জানালার কাঁচ খোলাই ছিল। যে কারণে বিস্ফোরণের ধাক্কা সোজা এসে লাগে আলমারিতে।
রুবি খন্দকার বলেন, 'বিস্ফোরণের ধাক্কায় জানালার পর্দাগুলো খুলে পড়ে যায়। এরপর আলমারির একটি দরজা খুলে যায়। পাশে থাকা আমার ৫ বছরের মেয়ে ভয়ে অনেকক্ষণ কান্না করে।'
সোনাইছড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন জনান, 'বিএম কনটেইনার ডিপোর বিস্ফোরণের ঘটনায় চারপাশের ২ কিলোমিটার এলাকার পাঁচ শতাধিক ঘর-বাড়ি, মসজিদ-মাদ্রাসা ও ব্যাবসাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। গতকালের বিস্ফোরণে চারপাশের ১ কিলোমিটার এলাকার তিন শতাধিক ঘর-বাড়ি ও ১০টি কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারো ঘরের জানালার কাচ ভেঙে গেছে। কারও ঘরের দেয়ালে ফাটল ধরেছে। আবার কারও চালের টিন উড়ে গেছে।'
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'বিস্ফোরণে গ্রামের সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৫০ লক্ষ টাকার মতো হবে।'
তিনি অভিযোগ করে বলেন, 'বিএম কনটেইনার ডিপোর ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর সাথে ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার নামে প্রতারণা করা হয়েছে। যার ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে, তাকে দেয়া হয়েছে ৫ হাজার টাকা। যার ক্ষতি হয়েছে ২০ হাজার টাকা, তাকে দেয়া হয়েছে ২ হাজার টাকা। আবার অনেক ক্ষতিগ্রস্ত কোনো ক্ষতিপূরণই পাননি। এমনকি বিস্ফোরণে সবচাইতে বেশি ক্ষতির শিকার হওয়া একটি মসজিদকে এক টাকাও দেয়া হয়নি।'
জাতীয় শ্রমিক লীগ, সীতাকুণ্ড উপজেলা শাখার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, লোকালয়ে অপরিকল্পিত শিল্পায়নের ফলে সীতাকুণ্ড উপজেলার বাসিন্দারা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ এলাকার পরিবেশ-প্রতিবেশ প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। নানা রোগশোকে ভুগছে এ জনপদের লাখ লাখ মানুষ।
সীতাকুণ্ডের লোকালয়ে ঘিঞ্জি পরিবেশে স্থাপন করা বিপজ্জনক ও পরিবেশ-বিধ্বংসী কারখানাগুলোকে শিল্প জোনে স্থানান্তরের দাবি জানান তিনি।
শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায় সীমা স্টিলের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান সীমা অক্সিজেন কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে চারপাশের ২ কিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। কারখানাটির পুরো অবকাঠামো দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় আশপাশের বেশ কয়েকটি কারখানা। বিস্ফোরণের পর কারখানাটি থেকে ৪ জনের মরদেহ ও ৩০ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় জনগণ, ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মী ও গাউছিয়া কমিটির স্বেচ্ছাসেবকরা। এছাড়াও কারখানাটি থেকে আধকিলোমিটার দূরে বিস্ফোরণের তোড়ে উড়ে যাওয়া দুটি লোহার পাতের আঘাতে শামসুল আলম ও সালাউদ্দিন নামে দুজন মারা যান।