‘স্যার’ ডাকতে বাধ্য করা: শুধু ভুল বোঝাবুঝি নয়, ডিসিকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান
রংপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. চিত্রলেখা নাজনীনকে 'স্যার' সম্বোধন করতে বাধ্য করার ঘটনা শুধু ভুল বুঝাবুঝি নয়, বরং তিনি অন্যদেরও 'স্যার' বলাতে বাধ্য করেন।
শুক্রবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক উমর ফারুক এই মন্তব্য করেছেন।
এ সময় রংপুরের ডিসিকে স্যার বলতে বাধ্য করার আরও একটি উদাহরণ সামনে এনেছেন উমর ফারুক। বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, 'রংপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাকিয়া সুলতানা চৈতী আপাকে সবার সমানে রংপুর জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন বলেন, আমি আপনার রাজনৈতিক দলের নেত্রী না, আমাকে আপা বলা যাবে না। স্যার বলেন। ডিসি মহোদয় কিংবা ডিসি সাহেব কিছু বলা যাবে না। শুধু স্যার বলতে হবে।'
'চৈতী আপা খুব দুঃখবোধ থেকে কথাগুলো আমাকে বার্তাঘরে লিখে পাঠিয়েছেন। সবার সামনে প্রকাশের অনুমতিও দিয়েছেন। যারা মনে করছেন 'স্যার' বিষয়টি শুধু ভুল বোঝাবুঝি। বার্তাটি তাদের জন্য,' লেখেন উমর ফারুক।
রংপুরের ডিসিকে স্যার সম্বোধনের ঘটনায় আলোচনার মধ্যেই বেরোবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হক শুক্রবার রাতে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে স্যার বলতে বলায় রংপুর ডিসিকে বেরোবিতে গিয়ে তার নিকট ক্ষমা চাইতে হবে। শিক্ষক কেন, কোনো নাগরিককেই তিনি স্যার বলাতে পারেন না। সংবিধান তাকে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর মর্যাদা দিয়েছে। অর্থাৎ কোনো নাগরিক তার অফিসে গেলে ডিসির উচিত চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ওই নাগরিককে স্যার বলে সম্মোধন করা এবং তার সেবা নিশ্চিত করা। কেননা জনগণের চাকর হচ্ছেন ডিসি। জনগণের টাকায় তার বেতন হয়।'
গত ২২ মার্চ সন্ধ্যায় একটি স্কুলের বিষয়ে জেলা প্রশাসক চিত্রলেখা নাজনীনের সাথে দেখা করতে যান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক উমর ফারুক। এসময় জেলা প্রশাসক চিত্রলেখা নাজনীনকে 'স্যার' সম্বোধন না করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান চিত্রলেখা নাজনীন এবং চাপ প্রয়োগ করেন। এর প্রতিবাদে জেলা প্রশাসকের গেটে প্ল্যাকর্ড নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন উমর ফারুক।
উমর ফারুকের অবস্থান কর্মসূচির খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরাও ছুটে এসে কর্মসূচিতে অংশ নেন। এরপর জেলা প্রশাসক নিচে নেমে এলে শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও কয়েকজন শিক্ষক সেখানে উপস্থিত হন। এর প্রায় এক ঘণ্টা পর জেলা প্রশাসক চিত্রলেখা নাজনীন এরকম আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করলে বিষয়টির সমঝোতা হয়।
উমর ফারুককে জনসমক্ষে রংপুরের জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন 'স্যার' সম্বোধন করাতে বাধ্য করার এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। গত বৃহস্পতিবার রাতে শিক্ষক সমিতির সভাপতি শরিফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে নিন্দা জানায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
বিবৃতিতে শিক্ষক নেতারা বলেন, 'উমর ফারুককে জনসমক্ষে রংপুরের জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন 'স্যার' সম্বোধন করাতে বাধ্য করার ঘটনায় বেরোবি শিক্ষক সমাজ অত্যন্ত ব্যথিত, বিব্রত ও ক্ষুব্ধ। বেরোবি শিক্ষক সমিতি শিক্ষক উমর ফারুকের সঙ্গে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।'
শিক্ষক নেতারা আরও বলেন, 'শিক্ষক সমিতি মনে করে, একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সুশাসন নিশ্চিতকরণ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলাদেশ গড়া ও নাগরিক সেবা নিশ্চিত করে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে জেলা প্রশাসকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ন। শিক্ষক সমিতি একজন জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণের ক্ষেত্রে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করে।'
সার্বিক বিষয়গুলো নিয়ে যোগাযোগ করা হলে রংপুরের জেলা প্রশাসক চিত্রলেখা নাজনীন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে আর কিছু হয়েছে বা হচ্ছে কি না, আমি জানি না। না জেনে এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।'