মূল্যস্ফীতির ধাক্কা: একবেলা না খেয়ে থাকছে ৩৭% নিম্ন-আয়ের পরিবার, সানেমের জরিপ
উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে একবেলা না খেয়ে থাকতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে ৩৭% নিম্ন-আয়ের পরিবার। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর জরিপে উঠে এসেছে এ তথ্য।
বুধবার (২৮ মার্চ) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সানেম জরিপটি প্রকাশ করেছে।
জরিপে বলা হয়, প্রয়োজনের তুলনায় খাবার কম খাচ্ছেন বলে মনে করেন ৭১ শতাংশ পরিবার।
'উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে কেমন আছেন নিম্ন আয়ের মানুষ?' এমন প্রশ্ন নিয়ে সারাদেশের ১৬০০ পরিবারের মধ্যে ৯ মার্চ থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত জরিপটি চালায় সানেম।
গত ছয় মাসে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবিকার খরচ ১৩ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী আয় তো বাড়েইনি, বরং কমেছে।
জরিপে বলা হয়েছে, গত ছয় মাসে এই ১৬০০ পরিবারের মাসিক আয় গড়ে ৫ টাকা কমে ১৪,০২৫ টাকা হয়েছে। কিন্তু খরচ ১৩ শতাংশ বেড়ে ১৪,৫৬৯ টাকা হয়েছে।
খাদ্যে এই খরচ বেড়েছে ১৭ শতাংশ।
এর ফলে ৭৪ ভাগ নিম্ন আয়ের পরিবার ধার করে চলছেন।
সানেমের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর সেলিম রায়হান বলেন, "নিম্ন আয়ের মানুষ কেমন আছে তার জন্য জরিপ না করেও বলা যায়। এই জরিপে যা উঠে এসেছে তা হয়তো অনেকের জানা। তবে নীতিনির্ধারকদের কাছে বিষয়গুলো পেশাগত দায়িত্বের মধ্যে দিয়ে তুলে ধরার জন্য এই প্রয়াস।"
সানেমের গবেষণা অনুযায়ী, সরকারি হিসাবের মূল্যস্ফীতির চেয়ে, নিম্ন আয়ের মানুষ এই চাপ বেশি অনুভব করে।
"আমরা জানি বৈশ্বিকভাবে জ্বালানিসহ বিভিন্ন জিনিসের দাম বেড়েছে। এরমধ্যে দেশের বাজার ব্যবস্থার কিছু সমস্যা তো আছেই। এদিকে দেশীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন হয়েছে। সবমিলিয়ে মূল্যস্ফীতির চাপ এখন অনেক বেশি," বলেন সেলিম রায়হান।
তিনি বলেন, "উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য শুধুমাত্র গ্লোবাল সমস্যাই দায়ী নয়। অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনাও দায়ী। আমাদের দেশের বাজার ব্যবস্থাপনায় ইমপারফেকশন রয়েছে।"
"আমরা গত কয়েক মাসে ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য দেখেছি। প্রভাবশালী এই ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কঠোর হতে হবে। ব্যবসায়ী সংগঠনদের সাথে নিয়েই বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে," যোগ করেন তিনি।
সানেমের জরিপে দেখা গেছে, খাদ্য বর্হিভূত পণ্যেও নিম্ন আয়ের মানুষ ব্যাপকভাবে খরচ কমিয়েছে। পোশাক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য।
শহরের পরিবারগুলো খাবারের খরচে বেশি কাটছাঁট করছে। গ্রামের মানুষ খাদ্য বর্হিভূত পণ্যে বেশি কাটছাঁট করছে।
সানেমের রিসার্চ ডিরেক্টর ড. সায়মা হক বলেন, "ঋণ নেওয়াকে অনেকে উদ্ধার পাওয়ার প্রক্রিয়া হিসেবে নিয়েছেন। তবে এসব ঋণে সুদের হার অনেক বেশি। তাতে সুদের দুষ্টচক্রের মধ্যে পড়তে পারে এসব মানুষ।"
"আমাদের দেশে বিমা সুবিধা কম, বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো বিষয়ে এসব মানুষ বিনিয়োগ কম করবে। সার্বিকভাবে এসব বিষয় এসডিজির লক্ষ্য থেকে পিছিয়ে দেবে। আজকের আলোচনা খাদ্য নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে," যোগ করেন তিনি।
জরিপে অংশ নেওয়া পরিবারগুলোর মধ্যে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আছেন ৪০ শতাংশ পরিবার। এরমধ্যে বেশিরভাগ আছেন টিসিবির কার্ডধারী। টিসিবির কার্যক্রম গ্রামের তুলনায় শহরে বেশি।
সরকারি উদ্যোগ যথেষ্ট কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে অধিকাংশ বলেছেন এই উদ্যোগ যথেষ্ট নয়।