বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ড: ঈদের স্বপ্ন পুড়ে ছাই ব্যবসায়ীদের
করোনাভাইরাস মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং চলমান মূল্যস্ফীতি; একের পর এক বিপদের আঘাতে পঙ্গু হয়ে থাকা ব্যবসায়ীরা যখন ঈদের বাজারে বেচাকেনার মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন, তখনই রাজধানীর বঙ্গবাজারে ঘটে গেল স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ একটি অগ্নিকান্ডের ঘটনা; যা ব্যবসায়ীদের সব স্বপ্ন পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে।
"আমরা আমাদের দোকানের তিন ভাগের একভাগ পণ্যও রক্ষা করতে পারিনি", বিলাপের সুরে বলে ওঠেন বঙ্গবাজারের স্বাধীন গার্মেন্টস ও ইরা গার্মেন্টসের মালিক দুই ভাই মোহাম্মদ বিলু ও সেলিম। মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সকালে বঙ্গবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে আরও হাজারো দোকানের সাথে পুড়ে গেছে তাদের দোকানও।
তারা জানান, তাদের দুটি দোকান মিলিয়ে প্রায় এক কোটি টাকার মালামাল ছিল। তাদের দোকানের একজন কর্মচারী আব্দুল আলীম জানান, সেহরির সময়ে এ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। তিনি বলেন, "আমি নাজিরাবাজার থাকি, আগুন লাগার কথা শুনে ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। শুরুতে ফায়ার সার্ভিস এখানকার অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি ততটা আমলে নেয়নি।"
বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিঁখোজ তৈরি পোশাকের দোকানের মালিক শাফায়েতের ভাই মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, মার্কেটে আগুন লাগার পর থেকেই তার ভাইকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় শাফায়েতের দোকান হাসান গার্মেন্টস আগুনে পুড়ে গিয়েছে। রফিকুল ইসলাম বলেন, "আমার ভাই ঈদকে সামনে রেখে প্রায় দুই কোটি টাকার আরএমজি পণ্য এনেছিল, এখন আমার ভাইকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।"
বঙ্গবাজার দোকান মালিক সমিতির অফিস সেক্রেটারি ডিএম হাবিব দাবি করেন, ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে প্রায় সাড়ে তিন হাজার দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। "আমার নিজেরও দুটি দোকান আছে, সেখানে কোটি কোটি টাকার আরএমজি পণ্য আজ পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে", যোগ করেন তিনি।
অ্যানেক্সকো টাওয়ারের পরিচালকদের একজন, হাবিব আহসান হবি বলেন, অ্যানেক্সকো টাওয়ারের দ্বিতীয়, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তলা- যেগুলো বঙ্গবাজারের ভবনের সাথে সংযুক্ত ছিল তা আগুনে পুড়ে গিয়েছে।
"পঞ্চম তলায় থাকা জুতার দোকানগুলোতে তাৎক্ষণিকভাবে আগুন ধরে যায়", বলেন তিনি।
ঘটনাস্থলে আরেক ব্যবসায়ীকে আহাজারি করতে দেখা যায়, "আল্লাহ যেন আমাদের এই বিপদ থেকে উদ্ধার করেন... মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি আমাদের পুনর্বাসনে সাহায্য করেন, তবেই আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবো, তা নাহলে আমাদের সর্বনাশ হয়ে যাবে।"
এর আগে বঙ্গবাজারে এ ধরনের আগুন লেগেছিল সর্বশেষ ১৯৯৫ সালে। এরপরে এই মার্কেটটি পুনঃনির্মাণ করা হয়।
মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সকাল ছয়টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবাজারে আগুন লাগে এবং দ্রুত তা অ্যানেক্সকো টাওয়ারসহ আশেপাশের ভবনগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। মার্কেটের পাশাপাশি পুলিশ হেডকোয়ার্টারেরও একটি অংশ আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ মুহূর্তে ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নও (র্যাব) আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের একজন বলেন, "আমরা আগুনের খুব কাছে যেতে পারছি না, আগুনের তাপ ও ধোয়ার কারণে এই এলাকায় দমবন্ধ পরিবেশ তৈরি হয়েছে। অক্সিজেনের অভাবে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের কারো কারো নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে।"