ঈদের আগে জমেনি বঙ্গবাজার-নিউ সুপার মার্কেটের বেচাবিক্রি, ব্যবসায়ীরা দিশেহারা
ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে রাজধানীর অধিকাংশ মার্কেট-শপিংমলে বেচাবিক্রি জমে উঠলেও ভিন্ন চিত্র বঙ্গবাজার ও নিউ সুপার মার্কেটের। আগুনে দোকান পুড়ে যাওয়ায় এখানকার ব্যবসায়ীরা দিশেহারা।
বঙ্গবাজারে পুড়ে যাওয়া মার্কেটের মাঠে খোলা আকাশের নিচে চৌকিতে বঙ্গবাজার পোড়া মার্কেট পুনরায় চালু হলেও ক্রেতা নেই বললেই চলে। ঈদের আগে এই সময়টায় যে মার্কেটে ছিল ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাক, সেই মার্কেট এখন নিষ্প্রাণ, বলা যায় ক্রেতাশূন্যই।
অপরদিকে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত রাজধানীর নিউ মার্কেট সংলগ্ন নিউ সুপার মার্কেটটি বুধবার চালু হয়েছে। একই সঙ্গে মার্কেটটিতে চলছে পোড়া কাপড়সহ পুড়ে যাওয়া নানা সরঞ্জাম সরানোর কাজ।
বুধবার নিউ সুপার মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে দ্বিতীয় তলা ও নিচতলার দোকানগুলো খুলেছে। তৃতীয় তলা বেশি পুড়ে যাওয়ায় সেই দোকানগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে। কোনো দোকানে রং করা হচ্ছে।
নিউ সুপার মার্কেট দোকান মালিক সমিতির আহ্বায়ক মোহাম্মদ মারুফ হোসেন বলেন, 'দুইতলা ও তিনতলার প্রায় ২২৬টি দোকান পুড়েছে। ফার্নিচার ও দোকানের ডেকোরেশন সব মিলে প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আর দোকানের মালামাল ধরলে ১০০ থেকে ১৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'এখানে প্রায় ১২২৫টি দোকান আছে; ঈদের এই সময় অনেক ক্ষতি হলো তাদের। প্রতিটি দোকানে প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার টাকার বিক্রি হলেও ৬ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হতো।'
গত ৪ এপ্রিল আগুনে নিঃস্ব হয়ে যায় বঙ্গবাজারের দোকানিরা। একেবারে মাটির সঙ্গে মিশে যায় যেন এ মার্কেট। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হওয়া সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৮৪৫টি দোকানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, বঙ্গবাজারে সব মিলিয়ে ৩০৩ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে মার্কেটগুলোর কাঠামোগত ক্ষতির পরিমাণ ১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আর মালামালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ২৮৮ কোটি টাকার বেশি।
বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বলেন, 'এখানে মূলত পাইকারি পণ্য বিক্রি হয়। ঈদের এই মৌসুমে ব্যবসায়ীদের পণ্য পুড়ে সব ছাই হয়ে গেছে। খালি মাঠে যারা চৌকিতে বসে বিক্রি করেছে, এই রোদের মধ্যে তাদের তেমন বিক্রিও হয় নি।'
গত রবিবার কথা হয় বঙ্গবাজারের এফএনএফ গার্মেন্টসের মালিক শহিদুল ইসলামের সাথে। আগুনে তার ৪টি দোকান একদম ছাই হয়ে যায়; ২০ লাখ টাকার মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তিনি বলেন, "গত বছর এই সময় এক দিনে ২-৩ লাখ টাকা বিক্রি হতো, অথচ আজকে (বুধবার) সকাল থেকে মাত্র ২০০ টাকা বিক্রি করছি, গতকাল সারাদিনে ৬০০ টাকা বিক্রি করেছি।"
এদিকে রোজার ঈদের আগে নিউ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা নতুন পণ্য তুলেছিলেন দোকানে। রোজার শেষ ১০ দিনে সবে কেনাবেচা জমছিল, মাঝ রাতের ক্রেতারাও আসছিলেন দলবেঁধে; কিন্তু আগুনে পাল্টে গেল নিউ সুপার মার্কেটের চিত্র। আগুন লাগার পর ব্যবসায়ীদের মুখে হাহাকার।
বুধবার দোকান খুললেও ক্রেতা কম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ভি ওয়্যার দোকানের একজন বিক্রয় কর্মী মোহম্মদ শান্ত বলেন, 'গতকালকে (মঙ্গলবার) আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছি। মাল গুছিয়ে দোকান চালু করেছি। ক্রেতা তেমন নেই বললেই চলে। যারাও আসছে দাম কম বলছে। এ দোকানে পাঞ্জাবি বিক্রি হয়। গত ঈদের এই সময় প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ টাকার বিক্রি হয়েছে। এখন ক্রেতাই নেই।'
এ মার্কেটের তৃতীয় তলায় দোকান ছিল আল ইমরানের। দোকানে জিন্সের প্যান্ট বিক্রি করতেন তিনি। মিস্ত্রি দিয়ে পুরে যাওয়া দোকানের সাটার লাগাচ্ছিলেন তিনি।
আল ইমরান বলেন, 'মার্কেট চালু হয়েছে কিন্তু আমাদের দোকানে তো কোন মাল নেই। গত শুক্রবার ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার বিক্রি করেছিলাম। সেই টাকা দোকানেই ছিল। সব পুড়ে গেছে। দোকানে প্রায় ২৫ লাখ টাকার মাল ছিল। একটি সুতাও বের করতে পারি নি, সব পুড়ে গেছে। এখন সরকার যদি দ্রুত আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত দোকানগুলো মেরামত করে দিত… আমাদের মাল কেনার জন্য কিছু পুঁজি দিত। আমাদের তো সব শেষ হয়ে গেছে!'
তিনি বলেন, 'বাবার পেনশনের ৮ লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলাম ২০১৯ সালে। আত্মীয়দের কাছ থেকে এবার ৯ লাখ টাকা ধারে মাল উঠিয়েছিলাম, সব পুড়ে গেছে।'
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, 'বঙ্গবাজার ও নিউ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীদের প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ কিছুটা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। নিউ সুপার মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা করা হচ্ছ। ঈদের পর তাদের নিয়ে বসবো।'