রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ৮ প্রতিশ্রুতি, এবার কি কার্যকর হবে?
গত সপ্তাহান্তে মিয়ানমারের মংডু শহরে সফর করেছেন রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধি দল। এর ফলে ছয় বছর আগে মিয়ানমারের সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের আশা নতুন করে জেগেছে। তবে সফরকারী প্রতিনিধি দলের কিছু সদস্য বলেছেন, প্রত্যাবাসকারীদের জন্য সেখানকার কর্তৃপক্ষের দেওয়া শর্তগুলো খুবই কঠিন।
বার্মিজ, ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় একটি ১৪ পাতার লিখিত সচিত্র প্রতিবেদনও দেওয়া হয় রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের। যাতে মানবিক সহায়তা প্রদান, পুনর্বাসনের জন্য ঘর নির্মাণ, কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ এবং কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে যাত্রা মাতৃভূমিতে ফিরবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
তবে বুকলেটে উল্লেখিত এসব সুবিধা পেতে হলে, নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে প্রত্যাবাসনকারীদের কাছে থাকতে হবে মিয়ানমারের ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড।
গত শুক্রবার (৫ মে) রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ-পরিস্থিতি সেখানে যাওয়া রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি দলের সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, মিয়ানমার সরকারের গৃহীত উদ্যোগ ও সুযোগ-সুবিধাসমূহ প্রত্যাবাসনের অনুকূল। কিন্তু, অধিকার গোষ্ঠীগুলোর নেতা এবং কূটনীতিকরা এবিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। কারণ, প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আসার সময় অনেক রোহিঙ্গার কাছেই নাগরিকত্ব প্রমাণ করার মতো যথাযথ কাগজপত্র ছিল না, আবার মৌসুমি বৃষ্টির মধ্যে কঠিন এই যাত্রাপথে অনেকের নথি হয় নষ্ট হয়েছে, অথবা হারিয়ে গেছে।
কক্সবাজারের শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের নেতৃত্বাধীন ২৭ জনের ওই প্রতিনিধি দলে তিনজন নারীসহ ২০ রোহিঙ্গা ছিলেন। মিজানুর বলেছেন, 'মংডু শহরে সফরকালে আমরা সেখানকার পরিস্থিতিতে ব্যাপক উন্নতি লক্ষ করেছি। সেখানকার ৮০ শতাংশ অধিবাসীই রোহিঙ্গা, যারা নির্বিঘ্নে চলাচল এবং ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। সেখানে প্রত্যাবাসনের জন্য উপযোগী পরিবেশ দেখা গেছে'।
'মিয়ানমার বলছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন তাদের জন্য নিরাপদ ও লাভজনক হবে। এই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে'- যোগ করেন তিনি।
আরআরআরসি বলেছেন, আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশে আসবে মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল। তখন প্রত্যাবাসনের বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হবে।
এদিকে গত ৫ মে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যাওয়া প্রতিনিধি দলে বাংলাদেশ সরকারের সাত কর্মকর্তা ও তিন নারীসহ ২০ জন রোহিঙ্গা ছিলেন। পরীক্ষামূলকভাবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরুর আগে সেখানকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে যান তারা।
আরআরআরসি কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'সম্প্রতি টেকনাফ থেকে একটি রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল রাখাইন রাজ্য পরিদর্শন করেছে। তাই এটি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক আলোচনা।'
আরআরআরসি কমিশনার অবশ্য রোহিঙ্গাদের জন্য বিপুল আর্থিক সহায়তা প্রদানকারী যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর অংশগ্রহণ ছাড়াই শুধু চীনের মধ্যস্থতায় সংকটের সমাধানের বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক টিবিএসকে বলেন, 'রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়া খুবই ভালো ব্যাপার। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো, মিয়ানমার সেটা দেবে কীভাবে? কতজন রোহিঙ্গা নাগরিকত্ব পাবে এবং কত দ্রুত পাবে?'
অন্যান্য বড় সহায়তা প্রদানকারী দেশের অংশগ্রহণের বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তিনি বলেন, 'এখানে প্রচুর কায়দা-কৌশল নেওয়া হচ্ছে। আমার অভিজ্ঞতা হলো, মিয়ানমার যা বলে তা করে না।'
রোহিঙ্গারা যা বলছেন?
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড ২০ জন রোহিঙ্গা প্রতিনিধির মধ্যে ১৫ জনের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা প্রত্যেকেই স্বীকার করেছেন, যে রাখাইন সফরে তাদের যা দেখানো হয়েছে এবং যা বলা হয়েছে, তা মিয়ানমারে ফেরার জন্য যথেষ্ট সন্তোষজনক।
মিয়ানমার এ-সংক্রান্ত বার্মিজ, ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় লেখা সচিত্র যে বুকলেট রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের দিয়েছে তার একটি কপি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের হাতে এসেছে।
রোহিঙ্গারা টিবিএসকে বলেন, পরিদর্শন সন্তোষজনক হলেও- সেটি তারা প্রকাশ্যে বলতে পারছেন না।
এর কারণ হিসেবে রোহিঙ্গারা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের প্রকাশ্যে প্রত্যাবাসনের পক্ষে কেউ কথা বললে তাকে ক্যাম্পে হত্যা ও নাশকতায় জড়িত সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা টার্গেট করে।
এর আগে প্রত্যাবাসনের পক্ষে কথা বলায় অনেককেই হত্যাও করা হয়েছে বলে টিবিএসকে জানান রোহিঙ্গারা।
শুক্রবার সফরের সময় রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা ছয় বছর আগে সামরিক বাহিনীর নির্যাতনের মধ্যে তারা মংডুর যেসব গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে এসেছিলেন সেগুলোর সন্ধান পাননি।
মংডুর গ্রামগুলোকে ক্যাম্পে পরিণত করা হয়েছে বলে জানান তারা।
প্রতিনিধি দলের ২০ রোহিঙ্গা নেতার একজন আবু সুফিয়ান বলেন, 'আমরা মংডু শহরের আশেপাশের কিছু এলাকায় যাই, কিন্তু, আমাদের গ্রামগুলোকে আর খুঁজে পাইনি। সব বদলে গেছে। এসব এলাকা এখন পুরোপুরি ক্যাম্প হয়ে গেছে'।
সুফিয়ান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ফেরত আসা রোহিঙ্গাদের এসব ক্যাম্পে রাখার পরিকল্পনা করছে মিয়ানমার সরকার।'
প্রতিনিধি দলের আরেক রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ সেলিম বলেন, 'আমরা মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড (এনভিসি) যাচাইয়ের জন্য তারা আমাদের এসব শিবিরে থাকতে দেবে। আমাদের নাগরিকত্ব গ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হবে না, অথচ সেটাই তাদের করা উচিত ছিল'।
এমন শর্তে রোহিঙ্গা সম্প্রদায় প্রত্যাবাসনে রাজি হবে না বলেই মনে করেন তিনি।
নাম না প্রকাশের শর্তে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ছয়জন টিবিএসকে নেতা বলেন, এর আগেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে দুবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। প্রথমে ২০১৮ সালের নভেম্বরে এবং দ্বিতীয়বার ২০১৯ সালের আগস্টে। সে সময় কোনো রোহিঙ্গাই ফিরে যেতে রাজি হয়নি। কিন্তু, এবারের সফরকালে মিয়ানমার তাদের একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদনে মিয়ানমার জানিয়েছে, দুটি গুরুত্বপূর্ণ শর্তসহ আটটি শর্ত মানবে তারা।
এই নথি কোনো লিখিত চুক্তি না হলেও, মিয়ানমার বলেছে তারা বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও জাতিসংঘের মধ্যে প্রত্যাবাসন বিষয়ে স্বাক্ষরিত ত্রিপাক্ষিক সমঝোতার শর্ত মেনে চলবে। আর তাহলেই মিয়ানমারে ফেরার উপযুক্ত পরিবেশ থাকবে বলে মন্তব্য করেন রোহিঙ্গা নেতারা।
এসব রোহিঙ্গা নেতার মতে, মিয়ানমারে পৌঁছানো মাত্র তাদের এনভিসি কার্ড দিলে এবং দ্রুত সেই কার্ডের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব প্রদানের নিশ্চিয়তা থাকলে ফিরতে আগ্রহী হবে রোহিঙ্গারা।
তারা আরো বলেছেন, মিয়ানমারে নিরাপত্তা জোরদার করা নাহলে রোহিঙ্গারা ফিরতে চাইবে না; কারণ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রত্যাবাসন-বিরোধী একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী আছে যারা প্রত্যাবাসনে রাজি হওয়া বা এর পক্ষে মতপ্রকাশ করা রোহিঙ্গাদের হত্যা, নির্যাতন ও অপহরণের সাথে জড়িত।
মানবাধিকার কর্মীরা যা বলছেন…
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক মো. নূর খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, মিয়ানমার সরকারের শর্ত মেনে নেওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া যাবে না। কারণ দেশটি ২০১৭ সালের দমনপীড়নের অনেক আগে থেকেই রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছে।
তিনি বলেন, 'এখন যে ৮ শর্ত দিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম ফেরত আসা রোহিঙ্গাদের ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড (এনভিসি) দেওয়া। এবং এটি যাচাই-বাছাই করে নাগরিকত্ব বিবেচনা করা। যা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক। তাদের নাগরিকত্ব প্রমাণের কিছু নেই'।
'আর এই নাগরিকত্ব প্রমাণ খুব জটিল। কারণ গণহত্যা চলার সময় যখন তারা মিয়ানমার ছেড়ে জীবন বাঁচানোর জন্য বাংলাদেশে এসেছে, সে সময় তারা তাদের পৈত্রিক সম্পত্তির কোনো দলিল বা সেদেশের নাগরিকত্ব-সংক্রান্ত কেনো ডকুমেন্ট সাথে আনতে পারেনি।'
এছাড়া রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ামার জান্তা সরকারের একটি জাতিগত বিদ্বেষও কাজ করে বলে মন্তব্য করেন নূর খান। এ কারণে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে আরো অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হবে।
এই মানবাধিকার কর্মী বলেন, 'বাংলাদেশ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত এই রোহিঙ্গাদের কাস্টডিয়ান। বাংলাদেশের উচিত শুধু চীন ও ভারতের সাথে যৌথভাবে এ বিষয়ে কাজ না করে – আন্তর্জাতিক মহলকে আরও সংযুক্ত করা। কারণ রোহিঙ্গাদের ওপর পরিচালিত গণহত্যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।'
'প্রত্যাবর্তনের নামে এসব মানুষকে (রোহিঙ্গাদের) ব্যারাকের মধ্যে আবদ্ধ রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তাই এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা নাগরিকদের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে'- যোগ করেন তিনি।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর টিবিএসকে বলেন, 'মিয়ানমারের এই শর্তগুলো লোকদেখানো কি-না সেটি আগে বিবেচনা করতে হবে। এর আগেও এরকম নিরাপত্তা বিধানের কথা বলা হয়েছিল। মিয়ানমার যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবী করছে, সেটি তারা করবে কিনা- সেবিষয়ে আমাদের আগে নিশ্চিত হতে হবে'।
মিয়ানমার যেসব প্রস্তাব দিয়েছে
রোহিঙ্গাদের দেওয়া বুকলেট অনুসারে, মিয়ানমার সরকার বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে আটটি সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এগুলো হলো:
মানবিক সহায়তা প্রদান: বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিরা পুনঃপ্রবেশ করলে তাদের নির্ধারিত পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখা হবে। তাদের লিঙ্গ ও বয়সভিত্তিক পোশাক এবং ঘর বরাদ্দ করা হবে। চাহিদা অনুসারে- কম্বল, সাবান, খাবারের ব্যবস্থা করা হবে।
পুনর্বাসনের জন্য ঘর প্রদান: পাইলট প্রকল্প অনুযায়ী, ফিরে আসা রোহিঙ্গাদের অস্থায়ীভাবে ক্যাম্পে ৬০ দিনের বেশি না রাখা হবে না। ক্যাম্পে থাকার পর যখন তারা পুনর্বাসন এলাকায় যেতে প্রস্তুত হবে তখন পুনর্বাসনের জন্য ঘর দেওয়া হবে।
কর্মসংস্থানের সুযোগ: প্রত্যাবর্তনকারীদের যে গ্রামে পুনর্বাসন করা হবে, সেখানে উপযুক্ত কৃষিজমিতে কাজ করার অধিকার প্রদান করা হবে। তাদের চাল দেওয়া হবে। ফসলের জন্য বীজ চারা, সার, কৃষি সরঞ্জাম সরবরাহ এবং কৃষি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।
স্বাস্থ্যসেবা: প্রত্যাবাসনকারীদের প্রবেশের সময় কোভিড-১৯ অ্যান্টিজেন (আরডিটি) পরীক্ষার জন্য কেন্দ্র স্থাপন হয়েছে। যারা ফিরবে, তাদের গ্রাম থেকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দূরত্ব বেশি হলে নতুন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
শিক্ষা ব্যবস্থা: ফেরত আসা শিশুদের জন্য গ্রামের নিকটতম স্কুলগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা: বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ফেরার জন্য ইতোমধ্যে টাউনশিপ থানা এবং সীমান্ত পুলিশ ব্যাটালিয়নকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ধাপে ধাপে জনপদে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হবে। পুরো প্রক্রিয়া ইউএনডিপি এবং ইউএনএইচসিআর-এর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পরিদর্শন করবেন এবং মিয়ানমার সরকারের প্রয়োজনের ওপর নির্ভর করে প্রক্রিয়াটিতে সহায়তা দেবেন।
সিটিজেন ভেরিফিকেশন কার্ড (এনভিসি): এনভিসি পরিচয়পত্র হলো নাগরিকত্ব যাচাইয়ের প্রক্রিয়া। মিয়ানমারের আইন অনুযায়ী এটি চলাফেরার স্বাধীনতা, বৃত্তিমূলক কার্যক্রম, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা গ্রহণের জন্য প্রয়োজন।
২০১৭ সালের নভেম্বরে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে রাখাইন রাজ্য থেকে উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের বিষয়ে স্বাক্ষরিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, ফেরত আসা বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের পুনরায় প্রবেশকেন্দ্রে স্ক্রিনিং ও রেজিস্ট্রেশনের পর একটি পরিচয়পত্র দেওয়া হবে।
এই এনভিসি কার্ড হলো একটি ভেরিফিকেশন কার্ড যা নাগরিকত্ব যাচাইয়ের প্রক্রিয়া চলাকালীন জারি করা হয়, যেখানে ধর্ম এবং জাতিগত নির্দিষ্ট করা নেই।
মূলত এনভিসি কার্ড প্রমাণ করে যে কার্ডধারী মিয়ানমারের বাসিন্দা। এই কার্ড থাকলে রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব যাচাইয়ের জন্য আবেদন করতে পারবে এবং যাচাইয়ের সময় পর্যন্ত কার্ডটি বহন করতে হবে।
নাগরিকত্ব
নাগরিকত্ব সম্পর্কে ১৯৮২ সালের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী ৩টি বিভাগ রয়েছে। এগুলো হলো- নাগরিক, সহযোগী নাগরিক এবং প্রাকৃতিক নাগরিক। যারা এ আইনের বিধানগুলো পূরণ করে তাদের প্রাসঙ্গিক তথ্যসহ নাগরিকত্বের (বা অতিথি নাগরিকত্ব) জন্য আবেদন করার অধিকার থাকবে।
নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী,আবেদনকারীদের তথ্য যাচাই করে তার নাগরিক হওয়ার অধিকার আছে কিনা, সে বিষয়ে একটি কেন্দ্রীয় কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে।
প্রত্যাবাসনের পূর্ব চেষ্টাগুলো
আরআরআরসি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগষ্ট বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ঢল শুরু হওয়ার পর ২০১৮ সালে বাংলাদেশ মিয়ানমারের কাছে প্রত্যাবাসনের জন্য ৮ লাখ ৮২ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা দিয়েছিল। সে তালিকা যাচাই-বাছাই করে মাত্র ৬৮ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা চূড়ান্ত করে তা বাংলাদেশের কাছে ফেরত পাঠিয়েছিল মিয়ানমার।
এর আগে ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটিকে মিয়ানমারে নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি আর বাস্তবে আলোর মুখ দেখেনি।
এরপর ২০১৯ সালে অগাস্টে চীনের তরফ থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর আরেকটি উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু, নাগরিকত্বের বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় যেতে চায়নি। এখন আবার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে চীনের তরফ থেকে এই তৃতীয় দফার উদ্যোগ নেয়া হলো।