ভোলা থেকে গ্যাস আনতে ১,৩০০ কোটি টাকার পাইপলাইন প্রকল্প প্রস্তাব
ভোলা দ্বীপ থেকে বরিশাল তথা দেশের মূল ভূখণ্ডে গ্যাস আনতে আনুমানিক ১,৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৫ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপনের প্রস্তাব করেছে সরকার-পরিচালিত সংস্থা গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড।
৩০ ইঞ্চি ব্যাসবিশিষ্ট প্রস্তাবিত লাইনটি শাহবাজপুর গ্যাস ফিল্ড এবং ভোলা নর্থ গ্যাস ফিল্ড থেকে বরিশালের লাহারহাটে গ্যাস সরবরাহ করবে। পরবর্তীতে এটি প্রস্তাবিত কুয়াকাটা-বরিশাল-গোপালগঞ্জ-খুলনা গ্যাস লাইনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।
গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুখসানা নাজমা ইসহাক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সরকার দেশের উন্নয়নে ভোলায় আবিষ্কৃত গ্যাসকে কাজে লাগাতে চায়, সেজন্যই ট্রান্সমিশন লাইন বসিয়ে বরিশালে গ্যাস সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।"
প্রকল্পটি চলতি বছরে শুরু হয়ে আগামী ২০২৬ সাল পর্যন্ত চলবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "আমরা সবেমাত্র একটি প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাব তৈরি করেছি এবং অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছি। বাকিটা নির্ভর করবে তহবিলের প্রাপ্যতার ওপর।"
প্রাথমিক প্রস্তাব অনুযায়ী, ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপনে ব্যয় হবে ১২৩.৮১ মিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১,৩০০ কোটি টাকা। এই অর্থের ৫৩.৫৫ মিলিয়ন বা ৪৩ শতাংশের যোগান উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে।
কর্মকর্তারা বলেছেন, পরিকল্পনা কমিশন অনুমোদন দিলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে প্রকল্পের জন্য তহবিল সংগ্রহের অনুরোধ করা হবে।
এদিকে, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা) আবু সাঈদ মাহমুদ টিবিএসকে বলেন, প্রকল্পটি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি।
"গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে একটি গবেষণার কথা ভাবছে। অবশ্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার," যোগ করেন তিনি।
কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিক প্রস্তাবটি সরকারি উচ্চপদস্থদের নির্দেশনা অনুসরণ করে সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষার আগেই প্রস্তুত করা হয়েছে।
এর আগে, সরকার ভোলার গ্যাসকে সিএনজিতে রূপান্তর করে জাতীয় গ্রিডে আনার কথা ভাবলেও তা শেষ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি।
"জাতীয় গ্রিডে পরিবহনের সুবিধার্থে গ্যাসকে সিএনজিতে রূপান্তরের আগের প্রস্তাবটি বাস্তবসম্মত ছিল না। এক্ষেত্রে পাইপলাইনের ব্যবহার যুক্তিসঙ্গত," বলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পেট্রোলিয়াম ও খনিজ সম্পদ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এম তামিম।
টিবিএসকে তিনি আরও বলেন, "এখন পর্যন্ত বরিশালে কোনো জাতীয় গ্রিড সংযোগ নেই; ভোলার গ্যাস বরিশালে পরিবহন করা গেলে তা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হবে।"
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানির (বাপেক্স) তথ্য অনুযায়ী, শাহবাজপুর গ্যাস ফিল্ডে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুদ রয়েছে ৬৩৯.১২ বিলিয়ন ঘনফুট; এরমধ্যে গেল বছরের জুলাই পর্যন্ত প্রায় ১২৪.৫ বিলিয়ন ঘনফুট উত্তোলন করা হয়েছে। ক্ষেত্রটিতে এখনও প্রায় ৫১৫ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ আছে।
বাপেক্সের তথ্য অনুযায়ী, ভোলা নর্থ গ্যাসক্ষেত্রে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের পরিমাণ বর্তমানে ৪৩৫.৩২ বিলিয়ন ঘনফুট। বর্তমানে উভয় গ্যাসক্ষেত্রের উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ১৪০ মিলিয়ন স্ট্যান্ডার্ড কিউবিক ফিট, যার মধ্যে প্রতিদিন ৬৬ মিলিয়ন স্ট্যান্ডার্ড ঘনফুট ভোলা এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে।
প্রকল্পের প্রাথমিক প্রস্তাব প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "২০২৩ অর্থবছরে উৎপাদন ক্ষমতা ২০৩ এমএমসিএফডি হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তাই ভোলার গ্যাসক্ষেত্র থেকে অতিরিক্ত পরিমাণ গ্যাস উত্তোলন করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সরবরাহ করার জন্য প্রস্তাবিত পাইপলাইন নির্মাণ করা যেতে পারে।"
"প্রকল্পটি শেষ পর্যন্ত গ্যাস-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, শিল্প ও বাণিজ্যিক ইউনিট স্থাপন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করবে," উল্লেখ করা হয়েছে প্রস্তাবে।
কর্মকর্তারা জানান, টগবি-১, ভোলা নর্থ-২ ও ইলিশা-১ গ্যাসকূপে খনন কাজ চলছে। কাজ সফলভাবে সমাপ্ত হলে, পুনরুদ্ধারযোগ্য মজুদ গ্যাসের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। সুতরাং, পাইপলাইন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে গ্যাসের ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।