বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে মার্কিন প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ
২০২২ সালের ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার ও দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।
দেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সমর্থন ও ধর্মীয় বৈষম্য নিষিদ্ধ হলেও, হামলা এবং জমি দখল থেকে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীদেরকে রক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ রয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে।
বিশেষ করে, হিন্দু, খ্রিস্টান এবং বৌদ্ধ ধর্মের সংগঠনগুলো তাদের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অব্যাহত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার রিপোর্ট করেছে, যার মধ্যে সম্পত্তির বিরোধে একটি মন্দিরের ক্ষতি এবং একজন বৌদ্ধ ভিক্ষুকে হত্যা করার ঘটনাও রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে ধর্মনিন্দার মিথ্যা অভিযোগে সম্প্রদায়ের মানুষকে নির্বিচারে আটক ও মসজিদে সরকারের নজরদারিরও সমালোচনা করেছে সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো।
এছাড়া, কক্সবাজারের মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ শরণার্থী শিবিরে হিন্দু ও খ্রিস্টানদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে উদ্বেগের পাশাপাশি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে উত্তেজনা সৃষ্টিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাবের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধের প্রচেষ্টা বজায় রেখেছে বাংলাদেশ সরকার। সেইসাথে ইমামদের ওয়াজে যাতে 'উস্কানিমূলক' বার্তা না দেওয়া হয় সে সম্পর্কে নির্দেশনা দেওয়াও অব্যাহত রেখেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদসহ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে পরিচালিত মসজিদগুলো ব্যতীত অন্যান্য মসজিদগুলো একটি গভর্নিং কমিটির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। এসব কমিটি মূলত স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিবিদ এবং প্রশাসকদের সমন্বয়ে গঠিত।
মুসলিম নেতারা ইমামদের নিয়োগ ও অপসারণে সরকারের চলমান প্রভাবের পাশাপাশি দেশব্যাপী খুতবা নির্দেশিকা প্রদানের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, উগ্রবাদের নিন্দা করার বিষয়ে ইমামদেরকে আহ্বান জানিয়ে কোরানের নির্দিষ্ট আয়াত এবং মহানবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর উদ্ধৃতি তুলে ধরে লিখিত নির্দেশ জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার।
এর ফলে, দেশের মসজিদগুলোর ইমামরা সাধারণত সরকারী নীতির বিরোধিতাকারী খুতবা দেওয়া থেকে বিরত থাকেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২২ সালে নভেম্বরে কুষ্টিয়া জেলায় স্থানীয় এক মসজিদের ইমামের নেতৃত্বে কিছু স্থানীয় মানুষ বাউল সম্প্রদায়ের সদস্যদের উপর হামলা চালায়। সে হামলায় একজন বাউল শিল্পী আহত হন।
বাউলদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পরে ১৯ জনকে অভিযুক্ত করা হয়, তাদের মধ্যে ১৮ জনকে আদালত জামিন দিয়েছে।
এসব ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং অন্যান্য দূতাবাসের প্রতিনিধিরা সংখ্যালঘু ধর্মীয় গোষ্ঠীর সুরক্ষার জন্য আহ্বান জানান এবং সরকারকে সহনশীল পরিবেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং স্থানীয় স্বাগতিক সম্প্রদায়কে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে মানবিক সহায়তা তহবিলের জন্য ২৬৫ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।