নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মন্থরতা, এপ্রিলে বৈদেশিক কর্মসংস্থান কমেছে ২৮%
উৎস এবং গন্তব্য উভয় দেশেই নিয়োগ প্রক্রিয়ার জটিলতার ফলে বাংলাদেশি কর্মীদের বৈদেশিক কর্মসংস্থানে মন্থরতা দেখা দিয়েছে।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, গত মাসের তুলনায় চলতি বছরের এপ্রিলে বাংলাদেশ থেকে অভিবাসন প্রায় ২৮% কমেছে। এর আগের পাঁচ মাসে বৈদেশিক কর্মসংস্থান একই গতি ধরে রেখেছে।
এপ্রিলে প্রায় ৭৮,৮৩৩ জন কর্মী বিদেশে গিয়েছিলেন, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪% কম। তবে নিয়োগকারীদের মতে, করোনা পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় এটি বেশি। বিদেশে কর্মসংস্থান কমে গেলেও এ বিষয়ে তারা 'চিন্তিত' নয়; বরং তারা আশা করছেন, আগামী মাসগুলোতে নিয়োগ প্রক্রিয়ার জটিলতাগুলোর সমাধান করা হবে।
মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), ওমান এবং সৌদি আরবে কর্মী নিয়োগ কমে যাওয়ার কর্মসংস্থানের সার্বিক হার কমেছে।
করোনা মহামারির আগে, বাংলাদেশ প্রতি মাসে গড়ে ৬০,০০০-৭০,০০০ কর্মী বিদেশে পাঠাত।
মালয়েশিয়া এই বছরের মার্চে ২৮,০০০ এরও বেশি কর্মী নিয়োগ দেয়, কিন্তু পরের মাসেই এ সংখ্যা ১৮,০০০-তে নেমে আসে।
একইভাবে মার্চের তুলনায় এপ্রিলে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান এবং সৌদি আরবে যাওয়া কর্মীর সংখ্যা যথাক্রমে কমপক্ষে ৭০০০, ৬০০০ এবং ৩০০০ কমেছে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস (বায়রা)-র সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আসলে, ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ কর্মী হ্রাস-বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছু নেই। এই সংখ্যা দেখে বোঝা যায় যে, কোনো কোনো মাসে আমাদের প্রক্রিয়া ধীরগতিতে এগোয়, অন্যান্য মাসে দ্রুতগতিতে। দেখা যাক বছর শেষে কতজন শ্রমিক যায়।"
একটি উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, "এখন সৌদি দূতাবাসে ভিসা প্রক্রিয়া অনেকটাই ধীরগতির হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে সপ্তাহে মাত্র একদিন পাসপোর্ট জমা দেওয়ার সুযোগ থাকে। এক্ষেত্রে, তারা ১০টির বেশি পাসপোর্ট গ্রহণ করতে পারে না। তাই বেশি চাহিদা থাকা সত্ত্বেও অনেক ভিসা দেওয়া হয় না।"
তিনি আরও জানান, সৌদি দূতাবাস ই-ভিসা চালুর ঘোষণা দিয়েছে। একবার বাস্তবায়িত হলে এ প্রক্রিয়ায় অসংখ্য ভিসা ইস্যু করা হতে পারে, তখন কর্মসংস্থানের স্বাভাবিক হার ফিরে আসতে পারে।
বায়রার বর্তমান মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বিদেশি শ্রমিকের চাহিদা কমছে।
"আমরা গত বছর সৌদি আরবে ছয় লাখ লোক পাঠিয়েছিলাম। এ বছরও কি আমরা একই সংখ্যক লোক পাঠাতে পারব? চাহিদা এখন কম," বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, "এমনকি রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে কর্মীদের ডকুমেন্ট যাচাইকরণ প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়। ভারত, পাকিস্তান ও নেপাল থেকে কর্মীদের বিদেশে যেতে ৫-৮ সপ্তাহ সময় লাগে, যেখানে বাংলাদেশিদের লাগে ১০-১২ সপ্তাহ।"
এদিকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, দুবাইতে সরকারি প্রকল্পের নির্মাণ খাতে শ্রমিকের চাহিদা কমেছে।
এ কারণে সেখানে ভিসা প্রক্রিয়া এখন ধীরগতির। কিছু লোক আধা-সরকারি ও বেসরকারি খাতে কাজের জন্য যাচ্ছে, জানান তারা।
এদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহও কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, বাংলাদেশ এপ্রিলে ১.৬৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে, যা এক বছর আগে একই সময়ে ছিল ২.০১ বিলিয়ন ডলার; অর্থাৎ রেমিট্যান্স কমেছে ১৬.২৮%।
মাইগ্র্যামস-এ ত্রুটির ফলে মালয়েশিয়ায় অভিবাসনে ধীরগতি
নিয়োগকারীদের মতে, মাইগ্র্যামস (MiGRAMS) টপ-আপে সমস্যার কারণে মালয়েশিয়ায় অভিবাসন প্রক্রিয়া ধীরগতিতে এগোচ্ছে।
মাইগ্র্যামসের অধীনে থাকা একমাত্র টপ-আপ ই-ওয়ালেটটি গত দুই মাস ধরে অচল পড়ে থাকায় মালয়েশিয়াগামী বাংলাদেশি কর্মীরা দেশটিতে যাওয়ার জন্য নিবন্ধন ফি জমা দিতে পারছেন না।
অনলাইন পোর্টাল মাইগ্র্যামস-এ আগ্রহী কর্মীদেরকে ১০০ রিঙ্গিত রেজিস্ট্রেশন ফি দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করতে হয়।
শ্রমিকের পর্যাপ্ত চাহিদা থাকা সত্ত্বেও, এ ত্রুটির কারণে অনেক রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী পাঠাতে পারছেনা।
মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তারা প্রায় তিন লাখ শ্রমিকের চাহিদার কথা জানালেও, এপ্রিল পর্যন্ত এর অর্ধেক সংখ্যক কর্মী পাঠানো সম্ভব হয়।
এদিকে, বায়রার যুগ্ম সম্পাদক মো. টিপু সুলতান ধীরগতির নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো নিয়োগকারীদের সিন্ডিকেটকে দায়ী করেছেন।
বর্তমানে মাত্র ১০০টি এজেন্সির মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর অনুমতি আছে।