ফোর্বসের '৩০ অনূর্ধ্ব ৩০ এশিয়া' তালিকায় ৭ বাংলাদেশি
প্রতিবছরই উদীয়মান তরুণ উদ্যোক্তা, সংগঠক ও উদ্ভাবকদের তালিকা প্রকাশ করে থাকে বিশ্বখ্যাত মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস। বৃহস্পতিবার (১৮ মে) প্রকাশিত হয়েছে এবছরের এশীয়দের তালিকা। আর 'ফোর্বস থার্টি আন্ডার থার্টি এশিয়া ২০২৩' শিরোনামের এ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন সাত বাংলাদেশি।
এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ৩০০ তরুণ উদ্যোক্তা, নেতা ও প্রবর্তক জায়গা করে নিয়েছেন এই তালিকায়। তাদের সবার বয়সই ৩০ বছরের নিচে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং একটি চ্যালেঞ্জিং পরিবেশের মধ্যেও তারা ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসছেন এবং নতুন নতুন উদ্ভাবনের পেছনে কাজ করছেন।
ফোর্বসের '৩০ অনূর্ধ্ব ৩০ এশিয়া ২০২৩' তালিকায় ১০টি বিভাগে ৩০ জন করে নির্বাচিত হয়েছেন। এ তালিকায় স্থান পাওয়া বাংলাদেশি তরুণেরা হলেন:
আজিজ আরমান
সহ-প্রতিষ্ঠাতা, যাত্রী
বিভাগ: কনজ্যুমার টেকনোলজি
ঢাকা নগরের বিশৃঙ্খল গণপরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান 'যাত্রী' প্রতিষ্ঠা করেন আজিজ আরমান। ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যের অবসানকল্পে গত বছর ঢাকা বাস মালিক সমিতি রাজধানীতে চলাচলকারী ৫৬৫০টি পাবলিক বাসের জন্য ই-টিকিটিং সিস্টেম ব্যবহার করতে সম্মত হয়েছিল। সেই সিস্টেম তৈরি করে দিয়েছে 'যাত্রী'।
২০২১ সালে কোম্পানিটি রিফ্লেক্ট ভেঞ্চারস, ব্রেইন-টু-ফ্রি ভেঞ্চার এবং এসবিকে টেক ভেঞ্চার-এর মতো বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে প্রাক-সিড পর্যায়ে ১.২ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পায়। সব মিলিয়ে এই স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান প্রায় ৫.২৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে।
রুবাইয়াত ফারহান ও তাসফিয়া তাসবিন
প্রতিষ্ঠাতা, মার্কোপলো.এআই
বিভাগ: মিডিয়া, মার্কেটিং ও বিজ্ঞাপন
মার্কোপলো.এআই হলো এমন একটি স্টার্টআপ যারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডিজিটাল মার্কেটিং সেবা প্রদান করে থাকে, যা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুত বিজ্ঞাপন কন্টেন্ট তৈরি এবং বেশ কয়েকটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে নির্বিঘ্নে ক্রস-পোস্ট করতে সাহায্য করে। সাবস্ক্রিপশন-ভিত্তিক প্রোগ্রামটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা চালিত এবং বিজ্ঞাপনের সফলতা ও সবচেয়ে ভালো পোস্টিং পরিস্থিতির পূর্বাভাস দিতে পারে।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং পরিচালনা এবং এর সর্বোচ্চ কার্যকরী ব্যবহার নিশ্চিত করতে, কন্টেন্ট তৈরি করতে এবং প্রতিক্রিয়াশীল শ্রোতাদের কাছে পৌঁছাতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করার জন্য বিশাল তথ্যভাণ্ডার তৈরি করেছে মার্কোপোলো.এআই। গত বছর, কোম্পানিটি সিঙ্গাপুরের ভিসি ফার্ম এক্সিলারেটিং এশিয়ার নেতৃত্বে ৭০০,০০০ ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে।
জাহ্নবী রহমান
সহ-প্রতিষ্ঠাতা, রিলাক্সি
বিভাগ: সামাজিক প্রভাব
প্রযুক্তি-ভিত্তিক ওয়েলনেস প্ল্যাটফর্ম 'রিলাক্সি'র সহ-প্রতিষ্ঠাতা জাহ্নবী রহমান 'সোশ্যাল ইমপ্যাক্ট' বা সামাজিক প্রভাব বিভাগে ফোর্বস তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য সেবার সহজলভ্যতা এবং গুণগত মান উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে তার প্রতিষ্ঠানটি। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগতে থাকা তরুণদের ডিজিটাল উপায়ে সেবা প্রদান করে এই প্রতিষ্ঠান।
এছাড়াও, রিলাক্সি মানুষের মুড বা মনের ভাব বুঝতে বিনা মূল্যে চেক-ইন ও মেডিটেশনের সুযোগ দেয় 'রিলাক্সি। কম খরচে ভার্চুয়াল থেরাপি সেশনের ব্যবস্থা করে তারা। মূলত এখান থেকেই তাদের আয় হয়। প্রতিষ্ঠানটি হুয়াওয়ের আইসিটি ইনকিউবেটর ২০২২-এ দ্বিতীয় রানার-আপ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল এবং বর্তমানে ১৫ হাজারের বেশি গ্রাহক রয়েছে তাদের।
দীপ্ত সাহা
সহ-প্রতিষ্ঠাতা, অ্যাগ্রোশিফট টেকনোলজিস
বিভাগ: কনজ্যুমার টেকনোলজি
অ্যাগ্রোশিফট টেকনোলজিস এমন একটি কৃষি সাপ্লাই চেইন প্ল্যাটফর্ম যা ব্যবসায়ীদের সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য কেনার পথ করে দেয় এবং কৃষকদের ন্যায্য দাম পেতে সহায়তা করে। এর পাশাপাশি ভোক্তাদেরও সঠিক দামে কৃষি পণ্য পেতে সহায়তা করা হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলো পেতে একটি মাইক্রো-ফুলফিলমেন্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে, অ্যাগ্রোশিফ্ট কৃষক এবং ডিলারদের সাথে সরাসরি কাজ করে অ্যাগ্রোশিফট এবং আরএমজি কর্মীদের কম দামে উচ্চ-মানের তাজা সবজি কেনার সুযোগ করে দেয়।
সম্প্রতি এ প্রতিষ্ঠানটি এইচ অ্যান্ড-এম 'স্টিচ ফর আরএমজি গ্লোবাল ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ' জিতেছে এবং শরুক পার্টনার্স এবং অ্যাংকরলেস বাংলাদেশের নেতৃত্বে একটি প্রাক্-সিড পর্যায়ে ১.৮ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে।
আনোয়ার সায়েফ ও সারাবন তহুরা
প্রতিষ্ঠাতা, টার্টল ভেঞ্চার স্টুডিও
বিভাগ: সামাজিক প্রভাব
সারাবন তহুরা তুরিন এবং আনোয়ার সায়েফ অনিক প্রতিষ্ঠিত 'টার্টল ভেঞ্চার স্টুডিও'র লক্ষ্য- অর্থায়ন, পরামর্শদান, গ্লোবাল নেটওয়ার্কে অ্যাক্সেস এবং কারিগরি সহায়তার মতো সেবা দিয়ে তরুণ উদ্যোক্তাদের উঠিয়ে আনা। এটি দেশের প্রথম ভেঞ্চার স্টুডিও৷
প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮ সাল থেকে নব্বইয়ের বেশি উদ্যোক্তার সঙ্গে কাজ করেছে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে তাদেরকে ১৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি তহবিল সংগ্রহ করতে সহায়তা করেছে। প্রযুক্তি খাতে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে বিভিন্ন কর্মসূচির পাশাপাশি, প্ল্যাটফর্মটি শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হতে উৎসাহিত করার জন্য 'ইয়ং টার্টল' নামক একটি প্রোগ্রামও চালু করেছে 'টার্টল ভেঞ্চার'।