সিলেট সিটি নির্বাচন: প্রার্থী হচ্ছেন না আরিফুল
দীর্ঘ জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বর্তমান মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। শনিবার বিকেলে সিলেট নগরের রেজিস্ট্রারি মাঠে এক নাগরিক সভায় তিনি এ ঘোষণা দেন।
আসন্ন নির্বাচনকে প্রহসনের উল্লেখ করে মেয়র বলেন, 'এই মূহূর্তে সিলেট তথা সারাদেশেই নির্বাচনী কোনো পরিবেশ নেই। আপত্তি সত্ত্বেও সিলেটে ইভিএমে ভোটগ্রহণের আয়োজন করা হয়েছে। অথচ সিলেটের মানুষ ইভিএমের সাথে একেবারে অপরিচিত। এখানে ইভিএম নিয়ে আসাই ভোট ডাকাতির ইঙ্গিত। বর্তমান নির্বাচনও কমিশন সুষ্ঠু ভোট চায় না। তারা ডিজিটাল ভোট ডাকাতি চায়।'
আরিফুল বলেন, 'নির্বাচনে কারচুপির নীলনকশার অংশ হিসেবে পুলিশ প্রশাসনে রদবদল শুরু হয়েছে। একটি প্রহসনের নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। আমার নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হচ্ছে। এরকম অবস্থায় আমি নির্বাচনে যেতে পারি না। আমি বিএনপির সিদ্ধান্তের সাথে সম্পূর্ণ একমত। আমি প্রহসনের নির্বাচনে প্রার্থী হব না।'
বর্তমান মেয়র আরিফুল হক এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কি না, তা নিয়ে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয়েছিল জল্পনা-কল্পনা। আরিফের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নির্বাচন নিয়ে তার আগ্রহও প্রকাশ পায়। তবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে ছিল। এ অবস্থায় দল আর নির্বাচন—এই দুটির মধ্যেই একটিকে বেছে নিতে হতো মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে।
অবশেষে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে দলে থাকার ঘোষণাই দিলেন আরিফ। শনিবারের নাগরিক সভায় তিনি বলেন, 'বিএনপি আমার অস্থিমজ্জায়। ছাত্রজীবনে জিয়াউর রহমানের আর্দশে অনুপ্রাণিত হয়ে বিএনপির সাথে যুক্ত হয়েছিলাম। আজীবন বিএনপিই হবে আমার শেষ ঠিকানা।'
তিনি বলেন, 'যারা মনে মনে আমাকে উকিল আব্দুল সাত্তার বানানোর চেষ্টা করেছিলেন, তারা আজ হতাশ হয়েছেন। আরিফুল হক কখনও উকিল আব্দুস সাত্তার হবে না।'
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মেয়র আরিফ বলেন, 'গত কয়েকদিন ধরে নগরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আমার বাসায় গিয়ে আমাকে প্রার্থী হওয়ার অনুরোধ করছেন। তাদের "এতিম অবস্থায়" ফেলে না যাওয়ার অনুরোধ করছেন। আমি তাদের সবার কাছে, এই নগরবাসীর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আমাকে ক্ষমা করে দিন। তবে মেয়র না থাকলেও এই নগরবাসীর যেকোনো প্রয়োজনে, সব ভালো কাজে এবং অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আমি সবসময়ই থাকব।'
প্রার্থী না হওয়ার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে তিনি বলেন, '২০১৮ সালের নির্বাচনেও নানা ভয়, প্রতিবন্ধকতা ও কারচুপি উপেক্ষা করে এই নগরবাসী আমাকে বিজয়ী করে এনেছেন। তারা ফলাফল ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র ছাড়েননি। কিন্তু এবার প্রেক্ষাট ভিন্ন। এবার আপনারা চাইলেও আমাকে বিজয়ী করতে পারবেন না। কারণ এবারের ভোট হবে ইভিএমে। এবার আপনারা একজায়গায় ভোট দেবেন, কিন্তু তা অন্য বাক্সে জমা হবে।'
নগরবাসীকে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'এই নির্বাচন আসলে নির্বাচন নয়, এটি প্রহসন। তাই আমার দলীয় নেতাকর্মীসহ সব নাগরিককে এই নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানাই। দয়া করে আপনারা কেউ ভোটকেন্দ্রে যাবেন না।'
সিলেট সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে এ পর্যন্ত আটজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে আরিফুল হক প্রার্থী হবেন কি না এ নিয়ে নগরবাসীর কৌতূহল ছিলো সবচেয়ে বেশি। আরিফ আগে থেকেই জানিয়ে রেখেছিলেন, ২০ মে সমাবেশ করে তিনি নিজের অবস্থান স্পষ্ট করবেন। তাই শনিবারের এই সমাবেশ ঘিরে আগ্রহ ছিল সবার।
দুপুরের পর থেকেই সমাবেশস্থল রেজিস্ট্রারি মাঠে জড়ো হতে শুরু করেন নানা শ্রেণির মানুষ। মিছিল নিয়েও আসেন অনেকে। বিএনপির কেন্দ্রীয় অনেক নেতাও এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২৩ মে এই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। মনোনয়নপত্র বাছাই ২৫ মে ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১ জুন। আগামী ২১ জুন ইভিএমে সিলেট সিটি করপোরেশনে ভোট হবে।