সিটি নির্বাচনকে সুষ্ঠু নির্বাচনের ‘মডেল’ বলছে আওয়ামী লীগ
সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত গাজীপুর, বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত আওয়ামী লীগ। এসব নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য বলেও মনে করছে।
এবার এই সাফল্যের মুকুটে আরো দুই পালক: রাজশাহী ও সিলেট সিটি নির্বাচনকে যুক্ত করতে চায় সরকারি দল।
দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, এতে তাদের সবচেয়ে বড় অর্জন: বর্তমান সরকারের অধীনেই অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্যভাবে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচন বিএনপি বয়কট করতে পারে, এনিয়ে তাদের দুর্ভাবনা নেই। বরং আ. লীগ মনে করে, নির্বাচনে অংশ না নিলে তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেছেন, আ. লীগ-সহ রাজনৈতিক অন্যান্য দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেবে, যা অংশগ্রহণমূলক, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও গ্রহণযোগ্য হবে।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আগের নির্বাচনগুলোর চেয়ে বেশি হবে বলেও মনে করছেন তারা।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সাথে আলাপকালে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, "এবছরের সিটি নির্বাচনগুলোয় ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, এবং তিন সিটির কোনোটিতেই কোনো অঘটন না ঘটায়, এটি স্পষ্ট যে, আগামী জাতীয় নির্বাচনও প্রভাবমুক্ত, অংশগ্রহণমূলক হবে।"
তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করলেও, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করতে বাধ্য হবে। কারণ হিসেবে মতিয়া চৌধুরী বলেন, "বিএনপি এখন রাজনৈতিক সংকটে ভুগছে। নির্বাচনে না আসলে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যাবে, ফলে তারা নির্বাচনে আসবে।"
২০০৮ সাল থেকেই নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ কমছে, তার কেমন প্রভাব পড়বে জাতীয় নির্বাচনে- এই প্রশ্নের জবাবে মতিয়া চৌধুরী বলেন, "নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে যে কয়টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার সবগুলোই সুষ্ঠু হয়েছে। এর ধারাবাহিকতা আগামী জাতীয় নির্বাচনেও বজায় থাকবে। ফলে কোনো ধরনের চিন্তা ছাড়াই ভোটাররা জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে।"
তার মানে অবশ্য এই নয় যে দলটি ভোটারদের অংশগ্রহণ কমার বিষয়ে উদাসীন।
দুই মহানগরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। তিন সিটিতে নির্বাচিত হয়েছেন দলের মনোনয়ন পাওয়া কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তারপরও ভোটারদের অংশগ্রহণ কম থাকা নিয়েই অস্বস্তিতে দলটি।
তাই বাকি দুটি সিটি নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়াতে কাজ করছে আওয়ামী লীগ।
এজন্য, রাজশাহী ও সিলেটের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণার পাশাপাশি ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আ. লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা টিবিএসকে বলেন, "সিটি নির্বাচনগুলোয় ভোটার অংশগ্রহণ নিয়ে আমরা নিজেরাও গবেষণা করছি। বিষয়টি আমরা তলিয়ে দেখছি। সাম্প্রতিক তিন সিটির নির্বাচনে দলের অনেক নেতা-কর্মীই ভোটকেন্দ্রে যায়নি।"
তিনি বলেন, দলীয় নেতা-কর্মীদের ভোট নিশ্চিত করার কাজ চলছে। একইসঙ্গে সাধারণ ভোটারদের উৎসাহিত করতে প্রচারণা চলছে।
দলটি আশা করে, এবার আর আগের মতো 'পুরোনো কৌশলের আশ্রয়' নেবে না বিএনপি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, গত দুই জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াত অগ্নি-সন্ত্রাস, জ্বালাও -পোড়াও এবং পেট্রোল বোমার যে রাজনীতি করেছে, আগামী নির্বাচন কেন্দ্র করে সেই সুযোগ আর পাবে না। দেশের জনগণ তাদেরকে প্রত্যাখান করেছে। এছাড়াও নির্বাচন প্রতিহত করতে চাইলে, আন্তর্জাতিক মহলের কাছে জবাবদিহি করতে হবে বিএনপিকে।"
তিনি বলেন, বিএনপি'কে রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে থাকতে চাইলে নির্বাচনে আসতে হবে। "আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সকল নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনও সিটি নির্বাচনগুলোর মতো সুষ্ঠু হবে।"