চাকুরি প্রত্যাশীদের জন্য কি কোনো ভালো খবর আছে?
সরকারি দপ্তরগুলোয় রেকর্ড ৫ লাখ পদ শূন্য থাকার খবরে স্বস্তি পাওয়ার অবকাশ নেই শিক্ষিত তরুণদের। কারণ তাদের সিংহভাগের চূড়ান্ত গন্তব্য বেসরকারি খাত, যেখানে নিয়োগের সুযোগ নিম্নই রয়ে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে যেখানে কর্মী ছাঁটাইও হচ্ছে।
স্বাস্থ্য ও প্রাথমিক শিক্ষার মতোন – জনসেবা-নির্ভর মন্ত্রণালয়ে সবচেয়ে বেশি পদ খালি থাকলেও – সেখানে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে দ্রুত নিয়োগের কোনো কর্মসূচি নেই।
দেশে বছরে প্রায় ২২ লাখ তরুণ কর্মসংস্থান বাজারে প্রবেশ করছে, এদের মধ্যে মাত্র কয়েক হাজার পাচ্ছে বহুল কাঙ্ক্ষিত সরকারি চাকরি। কিন্তু, সে নিয়োগ প্রক্রিয়াও দীর্ঘ। চাকরির বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে নিয়োগ পর্যন্ত, তাতে কয়েক মাস, কখনোবা বছরও লেগে যায়।
করোনা মহামারির প্রভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া আরো মন্থর হয়ে পড়ে। দেখা দেয়, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের প্রধান গেটওয়ে– বিসিএস ক্যাডার নিয়োগে জট। ফলে প্রতিবছর ক্যাডার-ভিত্তিক সামান্য যা নিয়োগ হয়, সেখানেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক স্নাতকের চাকরি লাভের সম্ভাবনা কমেছে।
রুটিরুজির জন্য লাখ লাখ তরুণের শেষ ভরসা বেসরকারি খাতেও করুণ চিত্র।
২০২২ সালের প্রথম প্রান্তিকে চাকরির বাজার মহামারির মন্দদশা থেকে কিছুটা পুনরুদ্ধারের পথে ছিল। কিন্তু, চাকরি সন্ধানের শীর্ষস্থানীয় ওয়েবসাইট- বিডিজবস চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ২০২২ সালের একই সময়ের তুলনায় চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে (সাইট পোস্টিং) পতন লক্ষ করেছে।
২০২০ সালের মার্চে ৩,৪০০ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পোস্ট হয় বিডিজবসে। ২০২২ সালের মার্চে তা ৬,৮০০ তে উন্নীত হলেও, চলতি বছরের মার্চে তা ফের ৬ হাজারের ঘরে নেমে আসে।
বিডিজবস ডটকমের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম ফাহিম মাশরুর জানান, গত অক্টোবর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পোস্টিং কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। এপ্রিলের পর মে মাসে জব পোস্টিংয়ে কিছুটা উন্নতি হলেও, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিণতিতে দেখা দেওয়া উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং ডলার সংকটের কারণে তা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশ কমই রয়ে গেছে।
তিনি বলেন, 'কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই করছে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান নতুন করে জনবল নিয়োগ বন্ধ রেখেছে। এই সময়ে ছোট ছোট এসএমই কোম্পানিগুলোতে বেশি জব কাট চলছে।'
সরকারি বা বেসরকারি কোনও সংস্থা চাকরির খাত-ভিত্তিক তথ্য রেকর্ড করে না। তাছাড়া, নারী ও তরুণদের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণের মাধ্যমে ২০২৬-১৭ সময়ের ৪.২ শতাংশ থেকে বেকারত্বের হার ২০২২ সালে ৩.৬ শতাংশে নেমে আসার যে তথ্য বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো সূত্রে পাওয়া যায় – সেটাও প্রকৃত বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে না।
বিবিএসের হিসাবমতে, বর্তমানে দেশে বেকার মাত্র ২৬.৩০ লাখ জন। যদিও, বিভিন্ন গবেষণা বলছে, প্রতিবছর নতুন করে ২২ লাখের বেশি তরুণ চাকরির বাজারে প্রবেশ করছে, যাদের এক-তৃতীয়াংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট।
গত তিন বছরে প্রায় ৯০ ভাগের বেশি কর্মসংস্থানে অবদান রাখা বেসরকারি খাতও নানাবিধ চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে।
প্রথমে বেসরকারি খাতের কার্যক্রম ব্যাহত করে করোনা মহামারি, তারপরেই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং তার ফলে দেখা দেয় ডলার সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং পশ্চিমা বাজারগুলোতে চাহিদা কমে আসা। এমন পরিস্থিতিতে, অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে হয় কর্মী ছাঁটাই করতে হয়েছে অথবা স্থগিত রাখতে হয়েছে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা।
এদিকে সরকারি চাকরি প্রত্যাশীদেরও স্বস্তির উপায় নেই, কারণ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে শূন্য পদের সংখ্যা বেড়ে রেকর্ড ৫ লাখে দাঁড়িয়েছে। অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী, এসব পদ পূরণে বিভিন্ন দপ্তরের ধীর গতি পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে।
বর্তমান এই পরিস্থিতি, বছরে যে প্রায় ২২ লাখ তরুণ নতুন করে চাকরির বাজারে প্রবেশ করছে, তাদের জন্য ভীষণ চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। কারণ, দিনমজুররা কর্মসংস্থানের কোনো না কোনো উপায় খুঁজে পেলেও, শিক্ষিত যুবকরা যথাযথ ও মর্যাদাসম্পন্ন চাকরি পেতে আরো সমস্যার মুখে পড়ছেন।
পোশাক খাত
প্রস্তুতকারক খাতের মধ্যে দেশের সবচেয়ে বড় নিয়োগদাতা পোশাক শিল্প। গত কয়েক মাস ধরেই এ খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি লক্ষণীয়ভাবে কমেছে। এই শিল্পকে বর্তমানে তাদের সক্ষমতার চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ কম অর্ডারে ব্যবসা পরিচালনা করতে হচ্ছে, যা কর্মসংস্থান সৃষ্টি কম হওয়ার অন্যতম কারণ বলে জানান শিল্পের অভ্যন্তরীণরা। এছাড়া, গ্যাস, বিদ্যুতের মতো ইউটিলিটি সেবার দাম বেড়ে যাওয়াও পণ্য উৎপাদনের গড় খরচ বাড়িয়েছে বলে তারা উল্লেখ করেন।
রপ্তানি কার্যাদেশের মন্দদশার কারণে অনেক কারখানাই একেবারে অপরিহার্য নয়, এমন পদে জনবল কমাতে বাধ্য হয়েছে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে এখাতের নতুন চাকরি সৃষ্টির সক্ষমতা প্রায় থমকে পড়েছে। কাজের চাপ তেমন না থাকায় কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন কর্মরত কর্মীদেরও ছাঁটাই করা হয়েছে।
ইউটিলিটি সেবার দাম বাড়ানোর পরেও গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকটে নির্ধারিত সময়ে চালান পাঠাতে হিমশিম খাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকরা।
নিট পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সমিতি (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, পোশাক শিল্প বর্তমানে কম অর্ডার নিয়েই ব্যবসা পরিচালনা করছে, এতে কর্মী চাহিদাও ন্যূনতম পরিসরে নেমে এসেছে।
কুরবানির ঈদের পর পরিচালন ব্যয় মেটাতে গিয়ে অনেক কারখানাকে কর্মী ছাঁটাই করতে হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, ইস্পাত কারখানা, জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প
পিএইচপি ফ্যামিলির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল হোসেন জানান, করোনা মহামারির সময় কোনোপ্রকার ছাঁটাই ছাড়াই সকল কর্মীকে ধরে রাখতে পেরেছিলেন তারা। এসময় তাদের বেতনভাতাও নিয়মিত হয়েছে। তবে নতুন কর্মী নিয়োগ থেকে বিরত ছিলেন। বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসৃষ্ট সংকট তাদের কার্যক্রমকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
'ফলে সতর্কতার সাথে বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে পিএইচপি ফ্যামিলি, এজন্য ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও স্থগিত রাখা হয়েছে'- দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন তিনি।
মহামারির অভিঘাত সত্ত্বেও এইচএম স্টিল মিলস নামের একটি ইস্পাত কারখানা স্থাপন করে পিএইচপি, যেখানে প্রায় ১,১০০ জনের কর্মসংস্থান হয়। কিন্তু, জ্বালানি ও কাঁচামাল সংকটের কারণে উৎপাদন প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে তাদের।
এইচএম স্টিলের পরিচালক মোহাম্মদ সারওয়ার আলম এই পরিস্থিতিতে অবিলম্বে কোনো উন্নতির আশা করছেন না। লোকসান কমানোর জন্য এরইমধ্যে কোম্পানিটিকে নিয়মিত কর্মী সংখ্যা ১০-১৫ শতাংশ কমাতে হয়েছে।
কেআর স্টিল স্ট্রাকচার লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও সিইও মোহাম্মদ সেকান্দার হোসেন বলেন, বিদ্যুৎ সংকটের কারণে তাদের কারখানার উৎপাদন ৪০ শতাংশ কমে গেছে।
এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে, কারখানাটির কার্যক্রম বন্ধ হতে পারে, এতে ৩০০ কর্মচারী বেকার হয়ে যাবে। এছাড়া, কাঁচামালের সংকট তাদের শিপব্রেকিং এবং অক্সিজেন প্ল্যান্টে কর্মসংস্থান ৩০ শতাংশ কমিয়েছে।
মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের পাশাপাশি কাঁচামাল, ডলার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটের কারণে চট্টগ্রামের জাহাজভাঙা, ইস্পাত এবং অক্সিজেন প্ল্যান্টগুলি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গত সাড়ে তিন বছরে, এই খাতের ৮০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে, যার ফলে প্রায় ৫০,০০০ কর্মী কর্মসংস্থান হারিয়েছে।
বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিএ) মতে, ২০২০ সাল থেকে অন্তত ৭০টি শিপব্রেকিং ইয়ার্ড করোনা, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং অন্যান্য চলমান সংকটের কারণে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করেছে, এতে কর্মসংস্থান হারায় প্রায় ২২,০০০ কর্মী।
চট্টগ্রাম স্টিল রি-রোলিং মিলস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম. মনজুর আলম বলেন, পণ্যের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে উৎপাদন খরচ সমন্বয় করতে না পারায় চট্টগ্রামের ৫০টি স্টিল মিলের মধ্যে ৪৩টি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক।
চট্টগ্রামে প্রায় ১৫টি অক্সিজেন প্ল্যান্ট গড়ে উঠলেও, এর মধ্যে আটটি গত দুই বছরে বন্ধ হয়ে গেছে। কর্মসংস্থান পরিস্থিতিকে যা আরও অবনতির দিকে নিয়ে গেছে।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এসএমই)
করোনা মহামারির শুরু থেকেই এসএমই খাত এক সংকটময় পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে। মহামারির পর এ খাতে কিছুটা পুনরুদ্ধার হলেও, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।
ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব স্মল অ্যান্ড কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ অব বাংলাদেশের (নাসকিব) সভাপতি মির্জা নুরুল গনি শোভন জানিয়েছেন, একারণে এসএমই খাতে নতুন কর্মসংস্থান সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকেই চাকরি হারাচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রতিকূল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে অনেক উদ্যোক্তা বিনিয়োগ করছেন না, যা এ খাতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। "একইসঙ্গে, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকট সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এসএমই খাতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনাও নেই।"
তিনি উল্লেখ করেন যে, নাসকিব- এর সদস্য সংখ্যা ২০,০০০। এরমধ্যে ২৫-৩০ শতাংশ উদ্যোক্তা তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। আরও অনেকের ব্যবসা বন্ধের হবারই উপক্রম।
ব্যাংক
করোনা মহামারির সময়েই অনেক ব্যাংক তাদের শাখাগুলোর কার্যক্রম সীমিত করে এবং ডিজিটালাইজেশনের পথে হাঁটে। এর প্রভাব পড়ে তাদের নতুন কর্মী নিয়োগে। আগে সাধারণত এক ডজনের বেশি কর্মী নিয়ে শাখা খুললেও, এখন মাত্র দুই-তিন জন কর্মী নিয়ে সাব-ব্রাঞ্চ খুলছে অনেক ব্যাংক।
সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মী নিয়োগের দায়িত্ব ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির। বর্তমানে, কমিটির মাধ্যমে, ২০১৯ সালের বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে ৩,৯১৭টি পদে নিয়োগ চলছে।
২০২০ ও ২০২১ সালে, সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ১২,৫১৯টি শূন্য পদ ছিল।
কর্মকর্তারা জানান, ২০১৯ সালের নিয়োগ শেষ হলে, চাহিদাপত্র পাওয়ার পর পরের দুই বছরের জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে চাকরি
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অভ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাত এখন এমন এক অবস্থায় পরিণত হয়েছে, যেখানে মানসম্পন্ন গ্র্যাজুয়েটের চাহিদা একেবারেই অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে।
'এদেশে কেউ সফটওয়্যার তৈরি শিখতে পারলেই তার চাকরি হয়ে যায়। সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি ইতোমধ্যে তিন লাখ গ্র্যাজুয়েটের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করেছে, যা করোনা মহামারির আগের সময়ের চেয়ে এক-তৃতীয়াংশ বেশি,' বলেন তিনি।
দেশকে অনলাইন কর্মীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎস তৈরি করতে তরুণদের একটি বৃহৎ অংশ অনলাইনে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছেন।
দেশের শিল্প ও শিক্ষাখাতের মধ্যে বিশাল পার্থক্যের কারণে তথ্যপ্রযুক্তি ফার্মগুলো বস্তুতপক্ষে যোগ্য মানুষদের খুঁজে পেতে বেগ পাচ্ছে বলে জানান বেসিস সভাপতি। যদি দক্ষ মানবসম্পদের অভাব দূর করা যায়, তাহলে এ খাত আগামী বছরগুলোতে ১০ লাখের বেশি নতুন কর্মসংস্থান করার মতো অবস্থানে রয়েছে।
দেশের অনেক সফটওয়্যার ফার্ম বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টেন্ডারে জেতার পরও যোগ্য কর্মীর অভাবে এসব সুযোগ হাতছাড়া করেছে।
তিনি বলেন, বিশ্বের বড় বড় সফটওয়্যার শিল্প মারাত্মক মানবসম্পদ সংকটে ভুগছে এবং বাংলাদেশ এ সমস্যা সমাধান করে এ সুযোগকে কাজে লাগাতে পারে।
রাসেল টি আহমেদ আরও বলেন, সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে গড়ে অল্প পরিমাণে দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং এটি তিনগুণ বা তারও বেশি হওয়ার দরকার।
সরকারি খাত
আনুষ্ঠানিক তথ্যমতে, ২০২২ সাল শেষে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, দপ্তর, কর্পোরেশন, কমিশন, কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন দপ্তরে শূন্য পদ দাঁড়িয়েছে ৫,০৩,৩৩৩টি।
সে তুলনায়, দেশে ২৬ লাখের বেশি কর্মক্ষম বেকার রয়েছে। কিন্তু, সরকারি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির অভাবে বিপুল সংখ্যক চাকরি প্রত্যাশীদের মধ্যে থেকে এসব পদ পুরণ করা যাচ্ছে না।
মহামারি চলাকালীন যখন নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়, তখনই শূন্য পদের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে।
সম্প্রতি কিছু নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করছে কোনো কোনো মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, অধিদপ্তরসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। কিন্তু, বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেরই একটি নিয়োগ কার্যক্রমে আবেদন চাওয়া থেকে যাচাই-বাছাই, কয়েক ধাপে পরীক্ষা নেওয়াসহ সামগ্রিক কার্যক্রম শেষ করতে প্রায় এক থেকে দেড় বছর লেগে যায়। অবশ্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশ দ্রুতই শেষ হয়ে থাকে।
জনপ্রশাসন সচিব মো. মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, শূন্য পদ পূরণে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম নেওয়ার আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা অন্যান্য সংস্থাকে শূন্যপদ পূরণে নিয়মিত তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে উচ্চ সংখ্যক শূন্যপদের তথ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ, কৃষি উৎপাদনের মত গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে তারা প্রয়োজনীয় সেবা দিতে পারছে না। অন্যান্য সেবাও ব্যাহত হচ্ছে। আইন, নীতিমালা তৈরিতে সময় লাগছে, মনিটরিং যথাযথভাবে হচ্ছে না।
এ বিষয়ে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার টিবিএসকে বলেন, পদ সৃষ্টি করা হয়েছে কাজের বিপরীতে। ফলে পদ শূন্য থাকলে সেই কাজ হবে না, বা একজনকে একাধিক ব্যক্তির কাজ করতে হবে। ১০ জনের কাজ ৪ জন বা কমসংখ্যক জনবল দিয়ে করা হলে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাজের গতি বা সেবার মান যেমন হওয়া উচিত সেটা হবে না। কোনো কারণে পরিচালন ব্যয় বেশি মনে করে পদ পূরণ করা না হলে, সেই অনুসারে পদ কমাতে হবে।
সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির ক্ষেত্রে করোনা মহামারির প্রভাব স্বীকার করে তিনি বলেন, এখন মহামারির প্রকোপ অনেক কমে এসেছে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে শূন্য পদগুলো দ্রুত পূরণের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়েমা হক বিদিশা বলেন, করোনার অভিঘাত, ডলার সংকট, জ্বালানির উচ্চ মূল্যের কারণে শিল্পখাত খুব বেশি সম্প্রসারণ লাভ করেনি। পাশাপাশি, কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে টার্গেট করেও উল্লেখযোগ্য কোনো কাজ করা হয়নি।
তিনি বলেন, কর্মসংস্থান বাড়াতে বাজেটে যেটা দরকার ছিল, ছোট ছোট খাতকে চিন্তা করে আরও প্রণোদনা দিয়ে দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে গুরুত্ব দেওয়া। কিন্তু, সেটা করা হয়নি।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি নিয়ে একটা সরকারের একটি রোডম্যাপ তৈরি করা দরকার বলেও মন্তব্য করেন বিদিশা।