আবারও বাড়ছে পাহাড়ি ঢলের পানি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় হাওর এলাকার মানুষ
টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের যাদুকাটা, চেলা, সুরমাসহ সবকটি নদ-নদী ও হাওরে পানি আবারও বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।
গত ২৪ ঘন্টায় সুনামগঞ্জে ১৫০.০ মি.মি. এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে ১৩১.০ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে।
আগামী ৭২ ঘন্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন উজানে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফলে সুনামগঞ্জের হাওর ও সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী মানুষ বন্যার আশঙ্কার মধ্যে সময় পার করছেন। ইতোমধ্যেই ডুবে গেছে বেশ কয়েকটি উপজেলার রাস্তাঘাট।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (৩০ জুন) বিকেল পর্যন্ত সুনামগঞ্জ পয়েন্টে পানি শূন্য দশমিক ০.২৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার শূন্য দশমিক ০.৪২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ জেলার ৬টি স্টেশনের মধ্যে ৪টি স্টেশনেই পানি কিছুটা বেড়েছে এবং ২টি স্টেশনে পানি সামান্য কমেছে।
জেলার ছাতক পয়েন্টে পানি বেড়েছে ০.১৭ সেন্টিমিটার। বর্তমানে বিপদসীমার ০.৪৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, অর্থাৎ ৮.৫৭ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে সুরমার পানি। দিরাই উপজেলার পুরাতন সুরমা নদীর পানি শূন্য দশমিক ০.০৩ সেন্টিমিটার বেড়ে ৬ দশমিক ১৬ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে, যা বিপদসীমার শূন্য দশমিক ৩৯ সেন্টিমিটার নিচে। জেলার তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর পানি ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ারখলা পয়েন্টে শূন্য দশমিক ৪৪ সেন্টিমিটার কমে ৬ দশমিক ৫৬ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে, যা বিপদসীমার ১ দশমিক ৪৯ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। এছাড়াও জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার নলজুর নদীর পানি শূন্য দশমিক ০১ সেন্টিমিটার কমে ৬ দশমিক ৫২ সেন্টিমিটার উচ্চতায় এবং তাহিরপুর উপজেলার পাটনাই নদীর পানি শূন্য দশমিক ৩৪ সেন্টিমিটার বেড়ে ৬ দশমিক ৪৮ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সকল নদ-নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহাওয়া সংস্থা সমূহের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৭২ ঘন্টায় দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন উজানে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
ফলে এ সময় এ অঞ্চলের কতিপয় নদ-নদীর (যাদুকাটা,সুরমা,কুশিয়ারা, সারিগোয়াইন,সোমেশ্বরি)পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
এদিকে, বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা সরকারের পক্ষ থেকে মোকাবেলার প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানান সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, "বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিলে, সরকারের তরফ থেকে পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা মজুদ রয়েছে এবং আশ্রয় কেন্দ্রগুলোকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।"