১৫ লাখের ‘রাজাবাবু’ সাড়ে ৬ লাখে, তবে বিক্রি হয়নি ৩৫ মণের ‘ভাইজান’
ঈদুল আজহাকে ঘিরে যশোরে আলোচনায় আসা বিশাল আকারের 'রাজাবাবু' হাঁকানো দামের অর্ধেকে বিক্রি হলেও 'ভাইজান' নামে অন্য গরুটি বিক্রি হয়নি। ৩০ মণের রাজাবাবু ১৫ লাখ হাঁকালেও বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৬ লাখে। এত কম দামে গরুটি বিক্রি করে হতাশ মালিক। সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আর বড় গরু প্রস্তুত না করার। অন্যদিকে ৩৫ মণের 'ভাইজান' ১৮ লাখ টাকা হাঁকালেও ৬ লাখের ওপরে কেউ এর দাম বলেনি। ফলে প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ায় গরুটিকে বিক্রি না করে আগামী কোরবানির জন্য নতুন করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন খামারি।
'রাজাবাবু'র মালিক যশোরের কেশবপুর উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম। আর 'ভাইজানে'র মালিক সদর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের সীতারামপুর উত্তরপাড়া এলাকার মহিদুল জামানের।
যত্নের সাথে ভাইজানকে প্রস্তুত করেছিলেন যশোর সদরের খামারি মহিদুল জামান কাজল। চার বছর ৬ মাস বয়সী ভাইজানের গায়ে সাদার ওপর কালো ছোপ ছোপ দাগ রয়েছে। ৩৫ মণ ওজনের ভাইজানকে প্রতিদিন বিপুল কাঁচা ঘাস, গমের ভুষি, গমের আটা, সয়াবিনের খৈল, ভুট্টা ভাঙা দানা, রাইস পলিশ আর অল্প পরিমাণ ধানের কুঁড়া খেতে দেওয়া হয়। তার পেছনে দিনে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা খরচ হয়।
কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা এই গরুটির দাম হাঁকানো হয়েছিলো ১৮ লাখে। প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ায় গরুটিকে বিক্রি করেননি তার মালিক মহিদুল। বিশাল আকারের গরুটিকে তিনি নিজ গোয়ালে রেখেই বিক্রির চেষ্টা করেছিলেন। 'তেজি' গরুটিকে নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হতে পারে- এমন আশঙ্কায় হাটে তোলেননি তিনি।
রোববার দুপুরে তিনি জানান, ভাইজানের জন্য দাম চেয়েছিলেন ১৮ লাখ টাকা। ক্রেতারা সর্বোচ্চ ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত বলেছেন। তখন কেউ ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা বললেও তিনি বিক্রি করে দিতেন। শেষ পর্যন্ত বিক্রি হয়নি ভাইজান।
তার ভাষ্যে, 'গরুটি ওভারসাইজ। ক্রেতারা দেখেই ভয় পেত। এতো বড় গরু! কষ্ট করে গরুটা বড় করলেও যশোরের বাইরে থেকে তেমন কোন বড় পার্টি আসেনি। প্রতিদিন হাজার টাকার উপরে খাবার তাকে দিতে হচ্ছে। লস হলেও আমার করার কিছু নেই। আগামী কোরবানির জন্য নতুন করে প্রস্তুতি নিচ্ছি। আগামীতে তাকে বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। তাছাড়া এর মধ্যে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে গরুটি যদি কেউ কিনতে চায়; তাহলে তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বিক্রি করে দিবো।'
'ভাইজান' ছাড়াও মহিদুল খামারে কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য আরও ছয়টি গরু প্রস্তুত করেছিলেন। দেড় থেকে দুই লাখ টাকার মধ্যম সাইজের গরু হওয়াতে সবগুলোই বিক্রি করতে পেরেছেন কোনপ্রকার ভোগান্তি ছাড়াই।
অন্যদিকে, কেশবপুরের কৃষক রফিকুল ইসলাম গত দুই বছর যাবত ৩০ মণ ওজনের 'রাজাবাবু'কে লালনপালন করছেন। শান্ত স্বভাবের 'রাজাবাবু' প্রতিদিন ছোলা, ভুট্টা, ভুষির পাশাপাশি পছন্দ করে বিভিন্ন ফলও। আর ফল না পেলেই নাকি মেজাজ খারাপ হয়ে যেত।
কৃষক রফিকুল ইসলামের ছেলে মাহাবুর রহমান বলেন, '৩০ মণের রাজাবাবুর দাম চাওয়া হয়েছিলো ১৫ লাখ টাকা। একপর্যায়ে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকাতে বিক্রির আশা করেছিলাম। পরে গাজীপুর থেকে আসা এক ক্রেতা সাড়ে ৬ লাখ টাকাতে নিয়ে গেছে। আমাদের খামারে মধ্যম সাইজের আরও ৬-৭টি গরু ছিলো। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় গরু ছিলো রাজাবাবু।'
তিনি জানান, রাজাবাবুকে লালন-পালন করতে তার যে খরচ হয়েছে, আর যে দামে তিনি সেটি বিক্রি করেছেন তাতে লোকসান হয়েছে। এক গরুতে এত বেশি লোকসানে তিনি হতাশ। আর বড় কোন গরু প্রস্তুত করবেন না বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, জেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের তথ্যমতে ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে এই দুটি গরু ছাড়াও জেলায় ৩২ হাজার ৬৯২টি গরু এবং ৬৬ হাজার ৫২৭টি ছাগল-ভেড়া প্রস্তুত করা হয়েছিলো। কিন্তু কী পরিমাণ গরু অবিক্রিত রয়ে গেছে সেই তথ্য দিতে পারেননি জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা রাশিদুল হক।