চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ৫ মাস ধরে আটকা পণ্য, ছাড় পেতে এনবিআরে প্রবাসীরা
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৫ মাস ধরে প্রবাসীদের পাঠানো ২৫ মেট্রিক টন মালামাল ছাড় বন্ধ রেখে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা হয়রানি করছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রবাসীরা। দ্রুত মালামাল খালাস দিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দিয়েছে ভুক্তভোগীরা।
খোরশেদ আলম, মনছুর আলম, এরশাদুল আলম স্বাক্ষরিত এনবিআর চেয়ারম্যানকে দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত ১৫ বছর ধরে প্রবাসীরা পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় শুল্ক পরিশোধ করে মালামাল শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দেশে পাঠিয়ে আসেছে। পারিবারিক ব্যবহার্য মালামাল নিয়ে আগে এমন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি। প্রবাসীদের কস্টার্জিত টাকায় ক্রয়কৃত মালামাল কোন নোটিশ ছাড়া ওয়্যারহাউজে আটকে রাখা, ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া আর কিছুই নয়।
তারা বলছেন, পণ্য ছাড় করতে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট নিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে অসংখ্যবার গেলেও কাস্টমস কোন সাড়া দিচ্ছে না। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ মালামাল বিমানবন্দরে আটকে রেখে আমাদের সাথে নির্দয়, স্বেচ্ছাচারিতামূলক আচরণ করছে। পণ্য খালাস না দিয়ে সেগুলো নিলামে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। উপায় না পেয়ে আমরা এখন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের দ্বারস্থ হয়েছি।
ভুক্তভোগী প্রবাসীরা জানিয়েছেন ২০১৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে প্রবাসীরা 'আনঅ্যাকম্পানিড ব্যাগেজ' এর আওতায় পণ্য পাঠায়। কিন্তু কোন পূর্বঘোষণা ছাড়া চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের কমিশনারের মৌখিক নির্দেশে মালামাল ডেলিভারি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গত ৫ মাস ধরে প্রবাসীদের পরিবারের জন্য পাঠানো ২৫ টন মালামাল বিমানবন্দরের ওয়্যারহাউজে পড়ে আছে। ইতিমধ্যে অনেক মালামাল নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বসবাসরত বেশিরভাগ প্রবাসী চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট দিয়ে মালামাল পাঠায়। প্রবাসীদের পাঠানো মালগুলোর মধ্যে রয়েছে শিশুর দুধ, ট্যাং, খেজুর, কাপড়-চোপড়সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পচনশীল মালামাল। এসব মালামাল ওয়্যারহাউজে নষ্ট হচ্ছে।
এনবিআর চেয়ারম্যানকে দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, মালামাল খালাস বন্ধ রাখার কারণে গত আট মাস যাবত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো ফ্লাইট অনিয়মিত হয়ে গেছে। এমন সিদ্ধান্তের কারণে শাহ আমানত বিমানবন্দরও কার্গো হ্যান্ডলিং চার্জ, ল্যান্ডিং চার্জ, শুল্কবাবদ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রাজস্ব হারিয়েছে।
কার্গো ফ্লাইট শাহ আমানত না আসার কারণে সবজি, ফলমূল রপ্তানিকারকরা ফিরতি কার্গো ফ্লাইটে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সবজিসহ যেসব পণ্য রপ্তানি করতো, সেটিও তলানিতে পৌঁছেছে। কার্গো ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশের সবজি, ফলমূলের বাজার দখলে নিয়েছে ভিয়েতনাম, চীন, ভারত, পাকিস্তানসহ অন্যান্য প্রতিযোগী দেশগুলো।
চট্টগ্রামের সাতকনিয়া উপজেলার বাসিন্দা তারেক হোসেন বলেন, 'আমার বড় ভাই মোহাম্মদ হোসাইন গত ৬ ফেব্রয়ারি আবুধাবি থেকে দেশে আসার সময় গ্রীন ভ্যালী এয়ার কার্গো নামে একটি প্রতিষ্ঠানে কসমেটিকস, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বুকিং দেয়। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে পণ্যটি আসার পর এখনো খালাস নিতে পারিনি। এর মধ্যে আমার ভাই গত ১৪ জুলাই পুনরায় আবুধাবি চলে গেছে। প্রায় ২ লাখ টাকার মালামাল খালাস নিতে পারবো কিনা দুশ্চিন্তায় আছি।'
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মুখপাত্র ডেপুটি কমিশনার বদরুজ্জামান মুন্সি টিবিএসকে বলেন, 'একজন প্রবাসীর পাসপোর্ট ব্যবহার করে একাধিক ব্যক্তির পণ্য নিয়ে আসা হয়েছে। আমরা এ ধরনের পণ্য ছাড় দিচ্ছি না। আবার অনেক চালানে কমার্শিয়াল মালামাল নিয়ে আসা হয়েছে। এসব আমদানিকারককে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিপি (ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট) জমা দিতে বলা হয়েছে। সার্বিক বিষয়গুলো আমরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অবহিত করেছি।'
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে প্রবাসীদের পণ্য আটকে থাকার বিষয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকায় গত ৮ জুলাই 'Unannounced baggage limit at Ctg airport catches many off guard' এবং ২১ এপ্রিল '25 tonnes of goods sent by expats stuck at Ctg airport' শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।