সর্বজনীন পেনশনার নিখোঁজ হলে কী হবে?
প্রবাসী, বেসরকারি কর্মচারী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন শ্রেণির বয়স্ক নাগরিকদের জন্য একটি টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকার সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করতে যাচ্ছে।
১৮ বছরের উর্ধ্বে সবাইকে পেনশনের আওতায় আনতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ব্যবস্থায় সরকারি চাকরিজীবী ও স্বায়ত্তশাসিত করপোরেশনে চাকরিরতরা ছাড়া দেশের ১৮ বছরের ঊর্ধ্বের সকল নাগরিক নির্ধারিত হারে চাঁদা দিয়ে ৬০ বছর বয়স থেকে আজীবন মাসিক পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন।
চারটি স্কিম নিয়ে সর্বজনীন পেনশন চালু হচ্ছে। এর মধ্যে প্রবাসীদের জন্য 'প্রবাস', বেসরকারিখাতের চাকরিজীবীদের জন্য 'প্রগতি', অনানুষ্ঠানিকখাতে কর্মরতদের জন্য 'সুরক্ষা' এবং অতি-দরিদ্রদের জন্য 'সমতা' স্কিম। এসব স্কিমে চাঁদাদাতা নিজের ইচ্ছামতো মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বাৎসরিক কিস্তিতে চাঁদা দিয়ে ১২.৩১ গুণ অর্থ পেনশন হিসেবে পাবেন।
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে চাঁদা দেওয়ার পর যদি তিনি নিখোঁজ হয়ে যান, তাহলে কি হবে- এমন প্রশ্নেরও উত্তর রয়েছে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালায়। এতে বলা হয়েছে, চাঁদাদাতা নিখোঁজ হলে তার নমিনি বা উত্তরাধিকারী সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি করে তা পেনশন কর্তৃপক্ষকে জানাবে। এক্ষেত্রে নিখোঁজ ব্যক্তির নমিনি তার পেনশনের চাঁদা জমা দিতে পারবেন।
চাঁদাদাতা নিখোঁজ হওয়ার সাত বছর অতিক্রান্ত হলে এবং নিখোঁজ ব্যক্তি ফিরে না আসলে- তার স্কিম স্থগিতও রাখা যাবে। নিখোঁজ ব্যক্তি পেনশনের প্রাপ্যতা অর্জিত হলে, তাকে 'নিখোঁজ পেনশনার' হিসেবে গণ্য করা হবে।
কোন পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে নিখোঁজ হলে, তার নিখোঁজ হওয়ার কমপক্ষে সাত বছর পর পেনশনারের মাসিক পেনশন বাবদ পাওনা অর্থ তার নমিনি বা উত্তরাধিকারীদের দেওয়া হবে। তবে নিখোঁজ পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তারা পেনশন সুবিধা পাবেন।
যেকোন স্কিমে অন্তর্ভূক্তির পর চাঁদা জমা দেওয়ার নির্ধারিত তারিখের এক মাসের মধ্যে চাঁদা জমা দিতে ব্যর্থ হলে পরবর্তী প্রতিদিনের জন্য ১% হারে জরিমানা দিতে হবে। কোন চাঁদাদাতা পর পর তিন কিস্তির চাঁদা জমা দিতে ব্যর্থ হলে- তার পেনশন হিসাব স্থগিত হয়ে যাবে। বকেয়া কিস্তির পুরোটা পরিশোধ না করা পর্যন্ত, হিসাব সচল করা হবে না।
কেউ শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে স্থায়ী বা সাময়িকভাবে আংশিক বা সম্পূর্ণ কর্মহীন ও উপার্জনে অসমর্থ হলে তার আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে 'অস্বচ্ছল চাঁদাদাতা' হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষ।
এক্ষেত্রে মানসিক ভারসাম্যহীন চাঁদাদাতার নমিনি বা উত্তরাধিকারী তার পেনশন হিসাবে চাঁদা জমা দিয়ে স্কিম চালু রাখতে পারবে এবং স্কিমের মেয়াদ শেষে নমিনি বা উত্তরাধিকারী পেনশন তুলতে পারবেন।
আপাতত, সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ পেনশন স্কিমের আওতা-বহির্ভূত থাকবেন। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের অন্তর্ভুক্ত নাগরিকদের এ ব্যবস্থায় রাখা হবে না। তবে, সর্বজনীন নিরাপত্তা বলয়ের সুবিধাভোগী কেউ তার এসব সুবিধা সমর্পণ করে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী সকল নাগরিক তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় যোগ দিতে পারবেন। তবে, যেসব প্রবাসী বাংলাদেশির এনআইডি নেই, তারা বৈধ পাসপোর্টের ভিত্তিতে ব্যাংকিং চ্যানেল, অনুমোদিত মোবাইল আর্থিক পরিষেবা এবং এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় চাঁদা দিয়ে যোগদান করতে পারবেন।