সাপে কামড়ানোর পর ওঝার কাছে যাওয়া রোগীদের মৃত্যুহার বেশি: কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা
যারা সাপের কামড়ের চিকিৎসার জন্য ওঝার কাছে যান, তাদের মধ্যে মৃত্যুহার বেশি বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) খুলনায় এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় এ তথ্য জানান তারা।
কর্মশালায় বণ্যপ্রাণী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মো. আবু সাইদ বলেন, 'সাপে কামড়ানোর পর যারা আগে ওঝার কাছে যান, তাদের মধ্যে মারা যাওয়ার হার বেশি। সময়মতো হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করালে রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে।'
তিনি আরও বলেন, সাপে কামড়ানোর পর ৬১ শতাংশ মানুষ যান ওঝার কাছে। আর ৩৫ শতাংশ মানুষ যান হাসপাতালে।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ খুলনায় বনকর্মীদের জন্য সাপের কামড়, প্রতিকার ও চিকিৎসা বিষয়ক এ কর্মশালার আয়োজন করে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, চলতি বছরের জুন মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে চার লাখ মানুষকে সাপে কামড়ায়। এর মধ্যে সাড়ে সাত হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান।
সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে, খুলনা বিভাগের মানুষ সবচেয়ে বেশি সাপের কামড়ের শিকার হন।
তারা বলেন, বাংলাদেশে সাধারণত গোখরা, কেউটে, রাসেল ভাইপার (চন্দ্রবোড়া), ও সবুজবোড়া — এ চার ধরনের বিষধর সাপের কামড়ে মানুষ বেশি মারা যায়।
সাপের কামড়ের জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আবু সাঈদ বলেন, 'সাপে কামড়ালে আতঙ্কিত না হয়ে শান্ত থাকতে হবে। কামড়ানোর জায়গাটি খুব বেশি নড়াচড়া করানো যাবে না। সাপে কামড়ানোর পর প্রথম ১০০ মিনিট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওই সময়ের মধ্যে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া গেলে রোগী সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।'
'বিষধর সাপে কামড়ানো রোগীর শরীর ধীরে ধীরে নিস্তেজ হতে থাকে। এ কারণে তাকে ঘুমাতে দেওয়া যাবে না। ক্ষতস্থানে দড়ি বেঁধে কোনো লাভ হয় না। ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।'
তিনি আরও জানান, বিশ্বে সাড়ে তিন হাজারের বেশি প্রজাতির সাপ রয়েছে এবং বাংলাদেশে সাপের প্রজাতির সংখ্যা ১১৭। এর মধ্যে ৩৪ প্রজাতির সাপ বিষধর এবং বাকিগুলো নির্বিষ।
প্রতি ১০০টি সর্পদংশনের মধ্যে ৮০টিই অবিষধর সাপের দংশন। আর বিষধর সাপের কামড়ের মধ্যে ৫০ শতাংশই বিষ প্রয়োগ করতে পারে না। সব মিলিয়ে, প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৯০ জনেরই কোনো বিষক্রিয়া হয় না, ফলে তাদের কোনো চিকিৎসারও প্রয়োজন হয় না।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসিন হোসেন।