এক দফা দাবি: তফসিল ঘোষণার পর চূড়ান্ত আন্দোলনে নামবে বিরোধী দলগুলো
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে বিএনপি, জামায়াত ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলো।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি তার রাজনৈতিক মিত্রদের সঙ্গে এক হয়ে 'শর্ট-টার্ম, ফুল-স্কেল' আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এ চূড়ান্ত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে নির্বাচন কমিশন, সচিবালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করার মতো কর্মসূচি। সারাদেশে থেকে ঢাকায় লোক জড়ো করে ১০ থেকে ১৫টি স্পটে একই দিনে একই সময়ে শুরু হবে এই আন্দোলন।
এরমধ্যে ঢাকার ৪ প্রবেশমুখ অবরোধ করারও পরিকল্পনা রয়েছে। যারা ওই সময় ঢাকায় আসতে পারবেন না, সেসব স্থানীয় নেতাকর্মীরাও সারাদেশের সব জেলাপ্রশাসকের কার্যালয় ঘোরাও করার পরিকল্পনা করছেন।
বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনের অন্যান্য নেতারা জানান, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে নভেম্বর বা অক্টবরের শেষের দিকে তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন। যখনই ঘোষণা করা হবে, তখন থেকেই 'শর্ট-টাইম' বিশেষ মুভমেন্ট নিয়ে মাঠে নামবে বিএনপি-জামায়াত ও যুগপৎ শরিকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক সিনিয়র নেতা জানান, "শুরুতে আমরা আন্দোলনে কোনো ধরনে সংঘাত-উস্কানিতে পা দেবো না। সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবেই কর্মসূচি বাস্তবায়নের চেষ্টা চালাবো। এতে সরকার যদি বাধা দেয় বা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে না দেয়, তাতে যদি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয় তাহলে সে দায় সরকারকে নিতে হবে।"
"কর্মসূচিতে হামলা হলে এতে আমারাই লাভবান হবো। দেশে-বিদেশে আওয়ামী লীগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও বেশি চাপে পড়বে। তবে হামলা হলে আমাদের পক্ষ থেকে পাল্টা প্রতিরোধ-প্রতিহত করার পরিকল্পনাও থাকবে আন্দোলন কৌশলে," যোগ করেন তিনি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, "কর্মসূচিতে এখনও হামলা হচ্ছে, আগামীতে হবে– এ তো নতুন কিছু নয়। তবে নিপীড়িত জনতার পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেলে তাদেরও তখন প্রতিরোধ-প্রতিহত করা ছাড়া উপায় থাকে না, থাকবেও না। তেমনটিই হবে সামনের দিনগুলোতে।"
তিনি বলেন, "যেদিন তফসিল ঘোষণা করা হবে, সেদিনই এই সরকারের বিদায়ের সাইরেন বেজে উঠবে। তাদের রাস্তায় নামাতে দেশের মানুষ অপেক্ষা করছে। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতে ইসলামীর এক সিনিয়র নেতা দ্য বিজনেস স্টাডার্ডকে জানান, ''জামায়াত সবদিক থেকেই এখন আন্দোলনে পূর্ণ মনোযোগী। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত চূড়ান্ত আন্দোলনে নেতাকর্মীদের মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে ইতোমধ্যে। এখন শুধু যথা সময়ে রাস্তায় নামার সর্বদলীয় ডাকের অপেক্ষায় জামায়াত। জামায়াতের মূল টার্গেট তফসিলকে কেন্দ্র করে চূড়ান্ত আন্দোলনকে সফল করা।''
যুগপৎ আন্দোলন সঙ্গী লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, "এখন আমরা সঠিক সময়ে একটি ডাকের অপেক্ষায়, খুব দ্রুত সেই চূড়ান্ত আন্দোলনের ডাকটি শুনতে পাবেন। এই সরকারকে সরাতে আন্দোলনের বিকল্প নেই, এ ব্যাপারে সবদল একমত।"
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সম্প্রতি এক সমাবেশে বলেন, "নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলেই নির্বাচন আর বাস্তবায়ন করতে পারবে না সরকার। মানুষ এবার ভোটাধিকারের সংগ্রাম বাস্তবায়ন করবে। লাখো মানুষ আন্দোলনে নামবে, দেশের প্রতিটি অঞ্চলেই এই আন্দোলন হবে।"
"এই সরকারকে দেশের জনগণ যেমন চায় না, কূটনীতিকরাও চান না। এই সরকার জনগণ ও বিশ্ব থেকে গণবিচ্ছিন্ন," বলেন তিনি।
এছাড়াও বিএনপি-জামায়াত সূত্রে জানা যায়, তফসিল ঘোষণার আগে এই প্রায় দুই মাস বিএনপি-জামায়াত ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে মাঠে-ময়দানে সভা-সেমিনার-আলোচনা সভা ইত্যাদি কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে এ ব্যাপারে দেশে-বিদেশে জনমত গড়ে তুলতে কাজ করবে।
জামায়াত সূত্র জানায়, তারা ড. ইউনূসের ইস্যুতে সরাসরি দলীয় ব্যানারে না আসলেও আইনজীবী-পেশাজীবী ইত্যাদি শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ড. ইউনূসের পাশে থাকবে। ইতোমধ্যে তাদের অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা নামে-বেনামে দেশে-বিদেশে ড. ইউনূসের পক্ষ নিয়েছেন বলে জানায় দলীয় সূত্র।