তেজগাঁও, পল্লবী, মগবাজার, ইস্কাটন এলাকায় এডিস লার্ভার উপস্থিতি বেশি
তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা উত্তরের পল্লবী এবং দক্ষিণের মগবাজার ও ইস্কাটন এলাকায় এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি অনেক বেশি পরিমাণে পাওয়া গেছে।
২৫ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তর (ডিজিএইএস) দ্বারা পরিচালিত এক জরিপে উঠে এসেছে এ তথ্য। এতে দেখা যায়, ঢাকা উত্তরের ২৩.৫২ শতাংশ এবং ঢাকা দক্ষিণের ১৮.৯০ শতাংশ বাড়িতে এডিস লার্ভার উপস্থিতি রয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণের ১,৮১৫টি এবং উত্তরের ১,৩৩৫টি বাড়িতে এ জরিপ চালানো হয়।
এ বছরের বর্ষা মৌসুমের এডিস জরিপ অনুসারে, ঢাকা দক্ষিণের মগবাজার এবং নিউ ইস্কাটন রোড এলাকায় এডিস লার্ভার ঘনত্ব (ব্রেটো সূচক) ছিল সর্বোচ্চ, ৭৩.৩৩ এবং ঢাকা উত্তরের তেজগাঁও শিল্প এলাকা ও পল্লবীতে ছিল সর্বোচ্চ ৬০।
প্রতি ১০০টি বাড়ি পরিদর্শন করে লার্ভা উপস্থিতির ব্রেটো সূচক তৈরি করা হয়। যদি কোনো এলাকায় এই সূচ ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, তবে কীটতত্ত্ববিদরা একে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেন।
নির্মাণাধীন বাড়ি, বহুতল ভবন, খালি জায়গা, প্লাস্টিকের বালতি এবং ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া টায়ারে এডিস লার্ভার উপস্থিতি রয়েছে বলে উঠে এসেছে জরিপে।
জরিপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডেরকে বলেন, "মনসুন সার্ভেতে আমরা এডিসের ঘনত্ব অনেক বেশি পেয়েছি। এখন বৃষ্টিও হচ্ছে, সে কারণে এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও দীর্ঘ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।"
''মাঠে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি মানুষ একেবারেই সচেতন নয়। এমন সব জায়গায় আমরা মশা পেয়েছি যেখানে সিটি কর্পোরেশন পৌঁছাতে পারবেনা। বাড়ির গ্যারেজে গাড়ি ধোয়া পানি জমে এডিসের লার্ভা জমেছে, কিন্তু সেটি কেউ পরিস্কার করেনা," বলেন তিনি।
নাগরিক সম্পৃক্ততা ছাড়া এডিস নির্মূল করা যাবেনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। প্রতি সপ্তাহে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিযান চালাতে হবে, সিটি কর্পোরেশনকে প্রথমে বোঝাতে হবে, এর দুই-তিন সপ্তাহ পর বাড়িতে এডিসের লার্ভা পেলে জরিমানা করতে হবে।"
এদিকে, মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে আরও ১১ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে এবং ২ হাজার ৯৫৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, এ বছর দেশে মোট ৭৫২ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে এবং ১,৫৪,২২৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ৯১১ জন ঢাকায় এবং ২,০৪৫ জন দেশের বিভিন্ন স্থানে আক্রান্ত হয়েছেন।
ডিজিএইচএসের বলছে, ঢাকায় ৪,২২২ জনসহ মোট ১০,০১৫ ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ৫,৭৯৩ জন এখন সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এদিকে, মঙ্গলবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, "মশা নিধন করা বা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসবে। মশা কমেনি বরং বেড়েছে, দ্বিগুণ বেড়েছে। মশার উৎপত্তিস্থান শনাক্ত করে মশা নিধন না করলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। এজন্য মশা নিধনে যার যে কাজ, সেটি ঠিক মতো পালন করতে হবে।"