নিয়ন্ত্রণে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের আগুন
রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিটের সাথে র্যাব ও বিজিবির সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রায় ছয় ঘণ্টা পর সকাল ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।
বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ৩টা ৪০ মিনিটে এ আগুনের সূত্রপাত।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স হেডকোয়ার্টারের ওয়্যারহাউস ইনস্পেক্টর (মিডিয়া সেল) আনোয়ারুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডসকে বলেন, "ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ ভোর ৩টা ৪৩ মিনিটে আগুনের খবর পায়। এরপর ভোর ৩টা ৫২ মিনিটের মধ্যে প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে চলে আসে।"
এখন পর্যন্ত হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক বলেন, "কেউ আহত বা নিহত হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ মধ্যরাতে আগুন লাগায় মার্কেটে মানুষ থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। আর যদিও কেউ মার্কেটে থেকে থাকে তারা নিরাপদে বের হতে পেরেছে বলেই আশা করি।"
এদিকে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ফায়ার সার্ভিসের আগুন নিয়ন্ত্রণে ধীরগতির কারণে অন্তত ৩০০ দোকান পুড়ে গেছে। তারা সঠিকভাবে কাজ করতে না পারায় আগুন পুরো মার্কেটে ছড়িয়ে পড়ে। এতে করে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি সম্মুখীন হতে হয়েছে তাদের।
ব্যবসায়ীরা ধারণা করছেন, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী মার্কেটটিতে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কথা গণমাধ্যমকে জানান।
তিনি বলেন, মার্কেটটিতে একটি প্রাথমিক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রও ছিল না। তারওপর চাপা আর অপ্রশস্ত অলিগলির জন্য আগুন নেভাতে দমকলকর্মীদের বেগ পোহাতে হয়েছে। এতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় বেশি লেগেছে।
এছাড়াও মার্কেটের দোকানগুলো যেভাবে বসানো হয়েছে তা এর আসল নকশার সাথে মেলে না বলেও জানান তিনি।
"আশেপাশে পানীয় উৎস না থাকা এবং ফুটপাত ও রাস্তার ধারের দোকানগুলো আগুন নিয়ন্ত্রণে দেরি হওয়ার প্রাথমিক কারণ ছিল।"
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের সবচেয়ে বড় জুয়েলারি দোকানের মালিক আবু কাওসার জানান, তার দোকানে অন্তত ২ কোটি টাকার গয়না ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র ছিল।
কান্নাভেজা চোখে তিনি বলেন, "মার্কেটের বাইরের দিকে থাকা শতশত বড় দোকানের মধ্যে আমার দোকানটি ছিল অন্যতম। এমনকি ভোর পৌনে পাঁচটা পর্যন্তও তাতে আগুনের আঁচ এসে লাগেনি। খবর পাওয়ার সাথে সাথে আমি মার্কেটে যাই। অসহায় চোখে দেখতে থাকি কীভাবে আমার পরিবারের বেঁচে থাকার অবলম্বন আগুনে পুড়ে যাচ্ছে।"
দুবাই জুয়েলার্সের আমির হোসেন জানান, ভয়াবহ এই আগুনে অন্তত ২০টি অলংকারের দোকান পুড়ে গেছে।
টিবিএসকে আমির বলেন, "আমি নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি যে শেষ পর্যন্ত দোকানের কিছু মালামাল উদ্ধার করতে পেরেছি। ভোর ৪টা পর্যন্ত আমার দোকানটি অক্ষত ছিল আর আমি দ্রুতই পৌঁছে গেছিলাম।"
উল্লেখ্য, চলতি বছরের এপ্রিলে রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডের পর কর্তৃপক্ষ মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটসহ ঢাকার ৫৮টি মার্কেটকে অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে।
গত ৪ এপ্রিল বঙ্গবাজারে সংঘটিত হওয়া অগ্নিকাণ্ড পুরোপুরি নিভতে সময় নেয় তিন দিন; এই আগুন সমগ্র মার্কেটটিকে রীতিমতো ছাইয়ে পরিণত করে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, আগুনে বঙ্গবাজারের ৩ হাজার ৮০০ দোকান পুড়ে গেছে এবং ৩০৩.০৫ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এর মাত্র দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে, ১৬ এপ্রিল তারিখে ঈদ-উল-ফিতরের আগ দিয়ে রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটে আরেকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, যা নিয়ন্ত্রণে প্রায় ২৭ ঘণ্টা লাগে।
মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের আগস্টে সারা দেশে ১,৬৬৭টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এতে ২০ জন আহত এবং আটজন নিহত হয়েছেন; অগ্নিকাণ্ডের ১২৮টি ঘটেছে ঢাকায়।