মার্কিন ভিসা নীতির ঘোষণায় দল উজ্জীবিত হয়েছে: বিএনপি
গত কয়েকদিনে বিএনপির সমাবেশ, রোডমার্চ ইত্যাদি কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ও জনসমাগম বেড়েছে। মামলা-হামলায় নিষ্ক্রিয় নেতাকর্মীরাও সক্রিয় হয়েছেন বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা।
বিএনপি নেতারা জানান, মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণার পরই বিএনপি কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়; ইউরোপীয় ইউনিয়ন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি কার্যক্রম শুরু হচ্ছে- সম্প্রতি এমন ঘোষণায় নেতাকর্মীরা আরো বেশি চাঙ্গা হয়েছে।
শনিবার বরিশাল রোডমার্চে নেতাকর্মীদের যেকোন সময়ের তুলনায় উপচেপড়া উপস্থিতি দেখা যায়। গত শুক্রবারও ঢাকার উত্তরা ও যাত্রাবাড়ির সমাবেশ এবং বৃহস্পতিবার সিলেটের রোডমার্চে নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল টিবিএসকে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ ঘোষণা চলমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনকে অনেক বেশি বেগবান করবে। চলমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সম্পৃক্ত আপামর জনগণ ও নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়েছে। তারা আরো সক্রিয় হবে আগামীতে। বর্তমানেও নেতাকর্মীরা সরব উপস্থিতি নিয়ে মাঠে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত।
বিরোধীদলের উপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, সেক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান কী, এর জবাবে আলাল বলেন, "আমরা বিরোধী দল নই, আমরা 'অপোজিশন অন দ্য স্ট্রিট' আর জাতীয় পার্টি 'অপোজিশন অন দ্য পার্লামেন্ট'।"
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ এর ঘোষণায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের উপর কেমন প্রভাব পড়েছে,এমন প্রশ্নে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব জসিম উদ্দীন বলেন, "হামলা-মামলায় নিষ্ক্রিয় কর্মীরাও অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে গেছে- এ ঘোষণায় গত দুইদিনে স্থানীয় নেতাকর্মীরা ব্যাপক উজ্জীবিত হয়েছেন। কুমিল্লা রোডমার্চ উপলক্ষে আমাদের ছোট একটি প্রস্তুতি মিটিং ছিল- সেখানে অন্য যেকোন সময়ের তুলনায় নেতাকর্মীদের বেশি উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।"
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ বলেন, "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঘোষণা চলমান আন্দোলনে জনগণ আশার আলো মনে করছেন। আমরা মনে করি, বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে এটি খুবই কার্যকর হবে। আর বিএনপি সহ যুগপৎ আন্দোলনের দলগুলোর ওপর এটি আরোপ হবে না- কারণ আমাদের আন্দোলন চলছে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিকভাবে।"
হরতাল আসতে পারে
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এবার 'হার্ড লাইনে' যাচ্ছে বিএনপি। হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে যাচ্ছে, যার ইঙ্গিত ইতোমধ্যেই দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দিয়েছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, "আমরা কখনও হরতাল-অবরোধ দেব না, এটি বলিনি। আন্দোলন সার্থক করতে নেতাকর্মী ও জনগণের চাহিদা অনুযায়ী আমরা যেকোনো ধরনের কর্মসূচি দিতে পারি।"
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, "যদি সরকার আমাদের দাবি মেনে না নেয়, সেক্ষেত্রে হরতাল-অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি দিয়েই আমাদের দাবি আদায় করতে হবে।"
খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা
বিএনপি সূত্র বলছে, সম্প্রতি বিদেশি চাপে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে সরকারের সুর এবার একটু নরম মনে হচ্ছে।
শনিবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, "খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে কোনো আবেদন আসেনি। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে। তারপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে মতামত চাইতে পারে।"
এদিকে বিএনপির টানা ১৭ দিনের কর্মসূচিতে ২৪ সেপ্টেম্বর কোন ঘোষিত কর্মসূচি না থাকলেও ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে।