ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধানে জোর দিতে হবে
নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনায় প্রতি ঘণ্টায় অন্তত ৩০ মি.মি. বৃষ্টির পানিধারণের সক্ষমতা হওয়া উচিত কিন্তু গত ২১ সেপ্টেম্বর ঘণ্টায় ২০ মি.মি. পরিমাণের বৃষ্টিও হয়নি। এতেই ঢাকার অধিকাংশ এলাকা কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত পানির নিচে ছিল।
তাদের মতে, ঢাকার জলাবদ্ধতা কমাতে হলে প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধানের মাধ্যমে ড্রেন ও খালগুলোকে আধুনিকায়ন করতে হবে। খালগুলোকে দখল-দূষণ মুক্ত করে নিয়মিত পরিষ্কারের কার্যক্রম যেমন হাতে নিতে হবে, তেমনি ড্রেনগুলোকে সচল রাখতে হবে। ড্রেনের আশেপাশের জায়গা সব কনক্রিট আচ্ছাদিত না করে মাটিতে কিছু পানি যাতে শোষিত হয় সেই ব্যবস্থা রাখতে হবে।
'ঢাকা শহরে বৃষ্টির পানি ব্যবস্থাপনায় রূপান্তরমূলক পরিবর্তন' শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন তারা। ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ তাদের ক্যাম্পাসে মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) এ সেমিনার আয়োজন করে।
ইউআইইউ-এর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মোঃ মুজিবুর রহমান বলেন, "জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা সামলানোর মতো করে ঢাকা গড়ে উঠেনি। এখনও জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা তেমনটা পড়েনি ঢাকাতে। বিগত ৬৬ বছরে ঢাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ পর্যালোচনা করে দেখা যায় এ পরিমাণ সামান্য বেড়েছে। কিন্তু ঢাকায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের যতো ওয়াটার রিজারভার, খাল, পুকুর ছিল তা ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "আমাদের ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা হওয়া উচিত প্রতি ঘণ্টায় ৩০ মি.মি. বৃষ্টি গ্রহণের সক্ষমতার কিন্তু ২১ সেপ্টেম্বর ঘণ্টায় ২০ মি.মি. বৃষ্টিও ধারণ করতে পারেনি।"
"আমাদের হাতিরঝিলের মতো আরও ৫টি হাতিরঝিল দরকার ঢাকায়। আমরা হাতিরঝিলকে বিনোদনের স্থান হিসেবে চিনলেও এটি মূলত আমাদের ড্রেনেজ সল্যুউশন।"
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানি সম্পদ কৌশল বিভাগের অধ্যাপক মোঃ আতাউর রহমান বলেন, "ঢাকার চারিদিকের ৫টি নদী আমাদের জন্য আশীর্বাদ। ঢাকার সকল বৃষ্টির পানি, স্যুয়ারেজের পানি নদীগুলোর মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে চলে যায়। আর এসব নদীতে খালগুলো থেকে পানি যায়। কিন্তু আমাদের খালগুলো আমরা রক্ষা করতে পারছি না। আমরা ঢাকার দুই কোটি মানুষ যদি শুধু বর্জ্য জলাশয় ও খালে ফেলি তবে ঢাকাকে রক্ষা করা যাবে কিভাবে?"
তিনি আরও বলেন, "আমাদের খালগুলোকে প্রবহমান করে এর দুই পাশে হাঁটা, বসা ও বিনোদনের জায়গা হিসেবে তৈরী করতে হবে।"
ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম বলেন, "আমাদের পরিবেশ ঠিক রাখতে এবং খালগুলোকে উদ্ধার করতে সবচেয়ে বেশি যা দরকার সেটি হচ্ছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং নেতৃত্ব। এর বড় উদাহরণ হচ্ছে আমাদের পদ্মাসেতু। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছিল বলেই সেটি সম্ভব হয়েছে। যদি এভাবে ঢাকার খালগুলো উদ্ধারেও সচেষ্ট হয় তবে অনেকটাই ফিরিয়ে আনা সম্ভব।"
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম অনুষ্ঠানে ঢাকার খালগুলো পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।