প্রধান বিচারপতির সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা বিএনপিপন্থী ইউএলএফ’র
দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপিপন্থী ও সরকারবিরোধী আইনজীবীদের মোর্চা ইউনাইটেড ল'ইয়ার্স ফ্রন্ট (ইউএলএফ)।
মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। সম্মেলনটির আয়োজন করে ইউনাইটেড ল'ইয়ার্স ফ্রন্ট।
লিখিত বক্তব্যে এ তথ্য জানান ফ্রন্টের কনভেনর ও বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন।
আগামী ৮ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট বার চত্বর বর্জনের সিদ্ধান্তের সমর্থনে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল এবং আইনজীবী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
লিখিত বক্তব্যে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন আরও বলেন, "সুপ্রিম কোর্ট বারের আইনজীবীসহ দেশের সব শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ প্রত্যাশা করেছিল প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বিচারালয়ের সর্বোচ্চ চেয়ারের মর্যাদা, ভাবগাম্ভীর্য এবং দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা বিচারিক প্রথা বজায় রাখবেন। যদিও তার রাজনৈতিক অতীত এবং বারে আইনজীবী থাকাবস্থায় বর্তমান সরকার ও সরকারি দলের সব প্রকার কর্মকাণ্ডের সঙ্গে প্রশ্নাতীতভাবে তার নিয়মিত অংশগ্রহণ আইনজীবী সমাজের জানা আছে।"
তিনি বলেন, "আমরা অত্যন্ত বেদনাহত মন নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছি। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগের পর থেকে ফুলের শুভেচ্ছা নিতে নিতে, এক পর্যায়ে সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা গ্রহণ করেন, যার সচিত্র প্রতিবেদন গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়।"
"সুপ্রিম কোর্টের ৫২ বছরের ইতিহাসে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা এবং প্রবীণ আইনজীবীদের ভাষায় বিচার বিভাগের জন্য চরম বেদনার মুহূর্ত।"
"শুধু তাই নয়। শপথ গ্রহণের দুই দিনের মাথায় একটি জেলা সমিতির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিতর্কিত পুলিশ অফিসার, আইনজীবী নিপীড়নকারী এবং নিয়মিত মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ডিবি হারুনের কাছ থেকে একটি বৃহদাকার 'তলোয়ার' উপহার হিসেবে প্রধান বিচারপতির গ্রহণ করার ছবি গণমাধ্যমে প্রচারের পর বাংলাদেশের আইনজীবী সমাজ হতাশ-বিস্মিত হয়েছে,"
"আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব পালন শুরু করতে না করতেই সংবর্ধনার মেলা এবং নানাবিধ বক্তব্য প্রধান বিচারপতির মতো সর্বোচ্চ সাংবিধানিক বিচারিক পদকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।"
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, "বিশেষ করে গত ১ অক্টোবর নেত্রকোণা স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতির সভাপতিত্বে ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সঞ্চালনায় প্রধান বিচারপতির সম্মানে সংবর্ধনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন- সরকারের প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্যরা, বিচারপতি, স্থানীয় আমলা ও পুলিশের কর্মকর্তা এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ আ.লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।"
"প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান আওয়ামী লীগের দলীয় সংবর্ধনা গ্রহণ করার মধ্যদিয়ে প্রধান বিচারপতির মতো নিরপেক্ষ পদের মর্যাদা ও সম্মানহানি ঘটিয়েছেন। এতে বিচার বিভাগের ওপর সাধারণ মানুষের অনাস্থা আরও গভীরতর হচ্ছে।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা মনে করি, বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে আপনার দায়িত্ব থাকবে নিরপেক্ষ থাকা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখা।"
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- ইউএলএফ-এর কো-কনভেনর সিনিয়র অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সিনিয়র অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ প্রমুখ।