দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে টিকে থাকার লড়াইয়ে কুষ্টিয়ার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা
প্রতিদিন সকালে ৮ থেকে ১০ বস্তা পেঁয়াজ বিক্রি করার দিনগুলো স্মরণ করে এখন দীর্ঘশ্বাস ফেলেন কুষ্টিয়ার পেঁয়াজ বিক্রেতা (ক্ষুদ্র আড়তদার) সেলিম। কিন্তু, এখন সারাদিনে বিক্রি হয় মাত্র ৪ থেকে ৫ বস্তা।
কোনরকমে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন জানিয়ে সেলিম বলেন, 'আগের সাথে এখনকার দিনের বেচাকেনায় রাতদিন পার্থক্য।'
মানুষ আগের চেয়ে রান্নায় পেঁয়াজ কম খেতে পছন্দ করে তা নয়, কিন্তু যেভাবে দাম বেড়েছে, সেটাই কেনাকাটা কমাতে বাধ্য করেছে সাধারণ ভোক্তাদের।
বর্তমানে ৭৫ টাকা কেজিতে ৮০ কেজির বস্তা পাইকারিতে ৬ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ মাস কয়েক আগেও পাইকারিতে প্রতি কেজির দাম ছিল ৬২-৬৪ টাকা।
নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে এভাবেই ধুঁকছে কুষ্টিয়ার একসময়ের প্রাণবন্ত ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলো, টিকে থাকতে প্রাণান্তকর অবস্থা ব্যবসায়ীদের।
আলু আড়তদার বাবলি ভান্ডার এর মালিক বাবলু মোল্লা বলেন, আমরা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আলু নিয়ে এসে কুষ্টিয়াতে বিক্রি করি। কমিশন ভিত্তিতে আমাদের বেচাকেনা, আগের তুলনায় আলু বিক্রি কমেছে, সরকারি ঘোষণায় দাম কমার কথা শুনে অতিরিক্ত আলু কেউ নিচ্ছে না। যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই নিয়ে যাচ্ছে।
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, 'আড়তঘরের ভাড়া, কর্মচারীর বেতন দিয়ে বর্তমান বাজারে আমাদের টিকে থাকা খুবই কষ্টকর। প্রতি বস্তা আলু পাইকারিতে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আগে ৩০ টাকার কমেও বিক্রি করা যেত।
এদিকে কাঁচাবাজারে আলু, পেঁয়াজ, মরিচসহ সকল পণ্যের খুচরা বিক্রেতারা একই রকম উদ্বেগের কথা জানান।
তারা বলেন, সকল পণ্যের দাম অতিরিক্ত হওয়ায় বেচাকেনা অনেকটা কমে গেছে, যে বেচাকেনা হয় তাতে ব্যবসার অস্তিত্ব রক্ষা করা কঠিন, আবার এই ব্যবসার আয়ে সংসার চালানো খুবই কঠিন হয়ে উঠছে।
কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ী মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম, জেড ইসলাম জাহিদ বলেন, 'ছোট ব্যবসা দেশের সম্প্রদায়ের মধ্যে খুব ভালো আর্থিক ভিত্তি তৈরি করে; যদি আমরা এই ছোট ব্যবসাগুলো হারাই তবে আমাদের খুব আলাদা দেখাবে এবং আমরা যে ব্যবসাগুলো হারাব, তা ফিরিয়ে আনতে অনেক সময় লাগবে। তাই এই কঠিন সময় মোকাবিলা করতে পারলেই টিকতে পারবে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যার ওপর দাঁড়িয়ে আছে দেশের বৃহৎ স্বার্থ, সামষ্টিক অর্থনীতি।'
দেশের বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকার মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে আলু, পেঁয়াজ, ডিমের দামেও দেখা দেয় ঊর্ধ্বগতি। সরকার এসব পণ্য দাম বেঁধে দেওয়ার পরেও দেশব্যাপী দোকানিরা তার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে থাকে। এই অবস্থায় কঠোর কিছু পদক্ষেপ নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঘোষণা দেয়, প্রতি কেজি আলু সর্বোচ্চ ৩৫-৩৬ টাকায় বিক্রি করা যাবে, দেশি পেঁয়াজ ৬৪-৬৫ টাকায় এবং ডিম প্রতি পিস ১২ টাকা দরে।