বিভাগীয় শহরে ক্যান্সারের পাশাপাশি মিলবে কিডনি ও হৃদরোগের চিকিৎসা
আট বিভাগীয় শহরে ১০০ বেডের ক্যান্সার হাসপাতালের নকশায় পরিবর্তন আনছে সরকার। প্রস্তাবিত ভবনে এখন কিডনি ও ডায়ালাইসিস সেন্টার এবং হৃদরোগ চিকিৎসা দেওয়া হবে। এ কারণে বেড সংখ্যা ৩৪২% বাড়িয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগীদের জন্য ৩,৫৩৪টি বেডে উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
শুরুতে শুধু ক্যান্সার রোগীদের জন্য আট বিভাগীয় শহরে ৮০০ বেডের হাসপাতালের প্রস্তাব ছিল।
নতুন সংশোধিত প্রস্তাবের কারণে প্রকল্পের ব্যয় ৪৯.৫১% বাড়িয়ে ৩৫৭০.৯১ কোটি টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ।
সংশোধিত প্রস্তাব অনুমোদন জন্য পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
প্রকল্পের শেষের দিকে কেন হৃদরোগ ও কিডনি বিভাগ যোগ করা হলো সে বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং প্রকল্প পরিচালক ডা. এস এম মাসুদ আলম বলেন, "প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কারণে প্রকল্পের নকশার পরিবর্তন করা হয়েছে। কারণ ক্যান্সারের পাশাপাশি কিডনি ও হৃদরোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। এসব রোগীদের যাতে চিকিৎসার জন্য ঢাকা আসতে না হয়, সে কারণে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দিয়েছেন।"
তিনি আরো বলেন, "একটা হাসপাতালের মধ্যে আমাদের তিনটা স্পেশাল নিড কার্ডিয়াক, কিডনি ও ক্যান্সারের সাথে অ্যাড করা হয়েছে। আরেকটা বিল্ডিং করে বা আরো স্ট্রাকচার তৈরি করলে সেটি আরো ব্যয়বহুল হয়ে যাবে। আগে শুধু ক্যান্সারের একটি বিল্ডিংয়ে খরচ ছিলো ২৩০০ কোটি টাকা, এখন আরো দুটি যদি বিল্ডিং করা হয় আরো খরচ বেড়ে যাবে।"
প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, ঢাকা বাদে প্রত্যেক বিভাগীয় শহরে ১৫ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা হবে। এসব হাসপাতালে মোট ৪৫০টি বেডে ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগীরা সেবা পাবে। সাতটি বিভাগীয় মেডিকেল কলেজের ক্যাম্পাসে এসব ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
হাসপাতাল ভবনের ২ থেকে ৭ তলায় ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্র, সেন্টারের বেড সংখ্যা হবে ১৮২টি। ৮ থেকে ১১ তলায় হবে ১৫৬ বেডের নেফ্রোলজি ও কিডনি সেন্টার। এছাড়া ওপরের তিন তলায় থাকবে হৃদরোগ ইউনিট, যেখানে বেড থাকবে ১১২টি।
তবে ঢাকা বিভাগে স্থান সংকুলান না হওয়ায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিবর্তে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগীর জন্য ৩৮৪টি বেড যুক্ত হবে। ঢাকা বিমানবন্দরের কাছে হওয়ায় এখানে ১৫ তলার পরিবর্তে ভবন হবে ১২ তলার। হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে এটির নির্মাণ কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কর্মকর্তারা জানান, চার বছর আগে প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও কোভিডের কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয়েছে।
তারা বলেন, "রেডিয়েশন মেশিন বসানোর জন্য ১০ ফিট চওড়া দেয়াল সহ দুই তলা বাংকার থাকে, সেটির ভার নেয়ার মত সক্ষমতা আমাদের ভূমির নেই। সেটার জন্য নিচে অনেক কাজ করতে হয়েছে পাইলিং করে। তার জন্য সময় লেগেছে।"
এছাড়া এর মধ্যে ক্যান্সারের পাশপাশি কিডনি ও হৃদরোগ সেন্টার নির্মাণের সিদ্ধান্ত হওয়ায় নতুন করে ভবনের নকশা করতে হয়েছে। এ কারণে প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজে গতি ছিল না।
এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ২০%।
ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগের চিকিৎসা রাজধানীকেন্দ্রিক
এক মাস ধরে চেষ্ট করেও জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে কেমোথেরাপির ডেট পাননি ফুসফুস ক্যান্সার আক্রান্ত নীলফামারীর বীরেন্দ্রনাথ রায় (৭০)। ভিসা পেলে চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে বীরেন্দ্রনাথের পরিবার।
বীরেন্দ্রনাথের ছেলে বকুল রায় দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "নীলফামারী ও রংপুরে ক্যান্সারের চিকিৎসা সুবিধা ভালো না হওয়ায় বাবাকে ঢাকায় নিয়ে আসি। এখানে খরচ বেড়েই যাচ্ছে কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও কেমোথেরাপির ডেট পাচ্ছিনা।"
১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত সরকারি মালিকানাধীন দেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ক্যানসার হাসপাতাল জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা সীমিত। অপর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধার কারণে ক্যান্সার চিকিৎসায় বিদেশ যাওয়ার প্রবণতাও ক্রমবর্ধমান।
বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির তথ্য বলছে, দেশে আনুমানিক ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ১৩ থেকে ১৫ লাখ।
গ্লোবোক্যান ২০২০-এর তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিবছর প্রায় ১.৫৬ লাখ নতুন ক্যান্সার রোগী শনাক্ত হয়। এদের মধ্যে ১.০৮ লাখ রোগী ক্যান্সারে মারা যান।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, ৫০০ বেডের ক্যান্সার হাসপাতালে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকে। বেডের অতিরিক্ত কোনো রোগী এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় না। প্রতিদিন আউটডোরে ১,০০০ রোগী চিকিৎসা নেয়। তার মধ্য থেকে প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন রোগী ভর্তি করা হয়। কিন্তু ভর্তি রোগীর চাহিদা থাকে অনেক বেশি।
ক্যান্সারের পাশাপাশি হৃদরোগ ও কিডনি চিকিৎসাও রাজধানী কেন্দ্রিক।
বাংলাদেশে কিডনি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দুই কোটি মানুষ। এসব রোগীর মধ্যে ৪০ হাজার রোগীর কিডনি বিকল হয় প্রতি বছর। এসব বিকল রোগীদের ৭৫ শতাংশই মৃত্যুবরণ করে থাকে ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি সংযোজনের সুযোগের অভাবে। বিভাগীয় পর্যায়ে কিডনি ডায়ালাইসিস সুবিধা থাকলে কিডনি রোগীদের অকাল মৃত্যু কমবে।
ডা. এস এম মাসুদ আলম বলেন, "বিভাগীয় শহরে এই হাসপাতালগুলো চালু হলে ঢাকায় রোগীর চাপ অনেক কমে যাবে। এতে রোগীদের ভোগান্তির পাশাপাশি খরচও অনেক কমে যাবে। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে এনজিওগ্রাম ও এনজিওপ্ল্যাস্টি করার জন্য বর্তমানে ৫টি সেটআপ আছে। ৮টা হাসপাতালে হবে ৩২টা সেটআপ। সারা দেশের মানুষের আর অপেক্ষা করতে হবে না, হাসপাতালে গেলে ইমার্জেন্সি সার্ভিস পাবে, রেগুলার রুটিন সার্ভিস নিতে পারবে।"