গণতন্ত্রের প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোর অঙ্গীকার আমাদের সাহস দেয়: ফখরুল
তাদের আন্দোলন সঠিক পথে রয়েছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশে এবার ভোটার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না।
রোববার (১৫ অক্টোবর) এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, এটা অনস্বীকার্য যে গণতন্ত্রের প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোর অঙ্গীকার নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য চলমান আন্দোলন পরিচালনায় তাদের দলীয় নেতা-কর্মীদের উৎসাহিত করেছে।
তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী গতকাল (শনিবার) যা বলেছেন, তার মানে এমন — তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই। তার মানে আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাজনৈতিক দলগুলো যা-ই বলুক না কেন, তিনি ক্ষমতায় থাকতে চান।'
তিনি বলেন, ক্ষমতা দখল ও রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে বেআইনিভাবে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একই কায়দায় আগামী নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। 'রাজনৈতিক সংকটের পেছনে এটাই কারণ।'
তিনি বলেন, 'শেখ হাসিনা যদি ভোটার ছাড়া আগামী নির্বাচন করতে চান, তাহলে এবার তা হবে না। আপনি ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন ২০২৪ সালে করতে পারবেন না। এটা এবার সম্ভব হবে না, কারণ জনগণ এবার আপনাকে প্রতিহত করার জন্য ঘুরে দাঁড়িয়েছে।'
রাজধানীর একটি হোটেলে 'বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে স্থানীয়-আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা এবং এখনই আমাদের করণীয়' শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে বিএনপি। সেমিনারে আলোকচিত্রী বাবুল তালুকদারের লেখা 'নো কমেন্টস' বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
ফখরুল বলেন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে যারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, তারাই বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক দেশে পরিণত করতে আবারও আন্দোলন শুরু করেছে। 'একটি দায়িত্বশীল গণতান্ত্রিক দল হিসেবে, আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য সমস্ত গণতান্ত্রিক ও দেশপ্রেমিক শক্তির সঙ্গে এই সংগ্রাম শুরু করেছি।'
তিনি বলেন, সমাজে অনেক হতাশাবাদী মানুষ আছে, কিন্তু বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশার কোনো চিহ্ন তিনি দেখেননি।
তিনি বলেন, 'যারা আমাদের সঙ্গে আছেন এবং একযোগে আন্দোলন করছেন তাদের মধ্যেও কোনো হতাশা নেই। আমরা বিশ্বাস করি যে আমরা এই লড়াইয়ে অবশ্যই জয়ী হব কারণ আমরা সঠিক পথে এবং সত্যের পথে রয়েছি।'
বিএনপির এই নেতা বলেন, সবাইকে মনে রাখতে হবে, একটি গণতান্ত্রিক শক্তির পক্ষে ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করা সহজ কাজ নয়। গত এক বছরে ২২ জন সাধারণ মানুষসহ এই সংগ্রামে আমাদের অনেক নেতা-কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন এবং এক হাজারেরও বেশি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।
তিনি বলেন, সরকারের দমনের পদক্ষেপের অংশ হিসেবে প্রায় ৪৫ লাখ বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীকে 'মিথ্যা' মামলায় জড়ানো হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে এদেশের মানুষ সব ধরনের ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।
তিনি বলেন, 'আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া বন্দি অবস্থায় খুব অসুস্থ হলেও কখনো মাথা নত করেননি। একইভাবে আমাদের সব নেতা-কর্মী তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। সুতরাং, আমি বিশ্বাস করি আমাদের সংগ্রাম অবশ্যই সফল হবে এবং আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হব।'
তিনি বলেন, তাদের দলও একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন চায় যেখানে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে সক্ষম হবে।
ফখরুল পর্যবেক্ষণ করেন, 'আমাদের বিশ্বাস করতে হবে যে পশ্চিমাবিশ্ব গণতন্ত্রের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাদের অঙ্গীকার ও চেতনা আমাদের সাহস দেয় এবং এগিয়ে যেতে সহায়তা করে। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। একই সঙ্গে আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে, আমরা যারা সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি, ভবিষ্যতে আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করার জন্য আরও দৃঢ়সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।'
তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে রাজপথে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য তারা আন্দোলন করছেন।
তিনি বলেন, 'আমরা অবশ্যই চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে সক্ষম হব।'
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শাহজাহান ওমর, বরকতউল্লাহ বুলু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ইউএনবি'র মূল শিরোনাম পরিবর্তন করা হয়েছে।