প্রান্তিক খামারিদের মত কর্পোরেটদেরও ১২টাকায় ডিম বিক্রির আহ্বান ভোক্তা অধিকারের
প্রান্তিক খামারিদের মত বড় ৫-৬টি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের মালিকেরাও চাইলে সারাদেশে ১২ টাকা করে ডিম বিক্রি করতে পারেন বলে জানিয়েছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তার মতে, এতে করে ডিমের বাজারে অস্থিরতা কমানো সম্ভব হবে।
সোমবার (১৬ অক্টোবর) রাজধানীর কাওরান বাজার টিসিবি চত্বরে ভোক্তাদের কাছে সরাসরি ডিম বিক্রি কার্যক্রমের উদ্বোধনের সময় তিনি কর্পোরেটদের খোলা বাজারে ডিম বিক্রির আহবান জানান।
ভোক্তা অধিদপ্তরের সহযোগীতায় বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) ১২ টাকায় ডিম বিক্রির কার্যক্রম শুরু করে। এ সময় ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান এবং বিপিএ সভাপতি সুমন হাওলাদার উপস্থিত ছিলেন।
যখন প্রান্তিক খামারিদের উদ্যোগে ১২ টাকায় ডিম বিক্রি হচ্ছে, তখন ঢাকার বাজারে ডিমের দাম আবারও বাড়তে শুরু করেছে। ১২ টাকা থেকে বেড়ে খুচরা বাজারগুলোতে ১৩-১৩.৭৫ টাকা (প্রতি হালি ৫২-৫৫ টাকা) দরে বিক্রি হচ্ছে ডিম।
মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, "কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনায় আমাদের সহযোগীতা চাইলে আমরা সেই সহযোগীতা প্রদান করবো।"
বাজারে সিন্ডিকেটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "সিন্ডিকেট কারা করছে এটা সবারই জানা। এই সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে হলে কর্পোরেটদের এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে সম্ভব নয়। ভোক্তা ও সরবরাহকারীদের সহায়তা ছাড়া বাজার তদারকি করে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। কারণ প্রতিটি পণ্য এত এত হাত বদল হয়, যার কারণে দাম বেড়ে যায়।"
তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রী গত ১৪ সেপ্টেম্বর ডিমসহ ৩টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করার পর থেকে তা বাস্তবায়নে ভোক্তা অধিদপ্তর মাঠে নেমেছে। এরমধ্যে আলু ও ডিমের দাম কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসলেও আবার বাড়ছে। এতে সাধারণ মানুষের কষ্ট বেড়েছে।
ঢাকার ২০টি স্পটে ডিম বিক্রির লক্ষ্য থাকলেও উদ্বোধনের দিন শুধুমাত্র টিসিবি চত্তরেই ডিম বিক্রির কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এখনে ১টি থেকে শুরু করে ১২ টাকা মূল্যে সর্বোচ্চ ৩০টি ডিম কিনতে পারেছেন একজন ভোক্তা। এদিন ৪২ হাজার ডিম বিক্রির পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
ডিম কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী ফরিদুল ইসলাম বলেন, "সরকার ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। এখন আর বাজারে এর কমে ডিম পাওয়া যাবে না। তবে ন্যায্য মূল্যের এই উদ্যোগ আমাদের মত সীমিত আয়ের মানুষদের জন্য স্বস্তির।"
অনুষ্ঠানে টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান বলেন, "সরকারের নির্দেশনায় টিসিবি সারাদেশে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি করছে। এরসঙ্গে প্রান্তিক খামারিদের এ উদ্যোগ গরুত্বপূর্ণ।"
"সরকার ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণের আগে সব পক্ষের লাভের হিসাব করেই নির্ধারণ করেছে; এটি যৌক্তিক। কিন্তু সাধারণ মানুষ কিনতে পারছে না। যেজন্য প্রান্তিক খামারিরা নির্ধারিত দামে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছেন। একইভাবে এ খাতে যারা বড় প্রতিষ্ঠান আছে, তারাও এগিয়ে আসতে পারে। প্রান্তিক খামারিরা পারলে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানও পারবে," বলেন তিনি।
বিপিএ সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, "সরকার উৎপদন ও খুচরা পর্যায়ে যে দাম ঠিক করে দিয়েছে তা যৌক্তিক। কিন্তু সেটি বাস্তবায়ন হচ্ছেনা। এ কারণে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি, ভোক্তা ও খামারিদের মধ্যে দূরত্ব কমে আসুক। আমরা চাই ভোক্তা ন্যায্য মূল্যে ডিম খাবে এবং খামারিরা ন্যায্য মূল্য পাবে।"
এসময় তিনি আরও বলেন, "দেশে পর্যাপ্ত ডিম আছে। বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য ডিম আমদানির প্রয়োজন নেই। ভোক্তাদের নিকট নির্ধারিত দামে ডিম পৌঁছাতে পারলে বাজার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।"