দক্ষিণের অর্থনীতি আরও সুগম করতে চালু হতে যাচ্ছে খুলনা-মোংলা রেলপথ
দেশের দিত্বীয় বৃহত্তম মোংলা সমুদ্র বন্দরের পণ্য-পরিবহন পথ সুগম করতে শিগগিরই চালু হচ্ছে খুলনা-মোংলা রেলপথ। এই রেলপথের মাধ্যমে মোংলা বন্দরের পণ্য একদিকে যেমন দেশের মধ্যে কম খরচে পরিবহন করা যাবে, অন্যদিকে ভারত, নেপাল ও ভুটানও এটি ব্যবহার করে পণ্য আমদানি-রপ্তানী করবে। ফলে দক্ষিণের অর্থনীতির অগ্রগতিতে রেলপথটি বেশ ভূমিকা রাখবে।
আগামী ৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনা-মোংলা রেলপথের উদ্বোধন করবেন। তার পরপরই রেলপথটি চালু করা হবে।
রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, 'খুলনা-মোংলা রেলপথ চালু হলে বাংলাদেশের সাথে ভারত, নেপাল ও ভূটান এর সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে কম খরচে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি করার সুযোগ তৈরি হবে। এতে করে সরকারি রাজস্ব বাড়বে, নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং বিকাশ ঘটবে পর্যটন শিল্পের।'
মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী সমন্বয় কমিটির মহাসচিব অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম বলেন, সড়ক পথে কার্গো পরিবহনের যে খরচ হয়, রেলপথে সেই তুলনায় ১০ থেকে ২০ গুণ খরচ কম হয়।
খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি কাজী আমিনুল হক বলেন, 'মোংলা বন্দরের নিকটে খুলনা দেশের তৃতীয় বৃহত্তম শিল্প নগরী। পাশের দুই জেলায় বেনাপোল ও ভোমরা স্থল বন্দর রয়েছে। ধীরে ধীরে যশোরের বেনাপোল থেকে খুলনা হয়ে মোংলা পর্যন্ত একাধারে শিল্পনগরীতে পরিণত হবে। ভৌগলিক দিক থেকে দেশের সবথেকে বড় অর্থনৈতিক হাব হওয়ার সম্ভাবনা ছিল এই অঞ্চলটির। তবে পরিবহন পথ সুগম না হওয়ায় এতদিনেও এই অঞ্চলটিতে তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। গত বছরে পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় রাজধানীর সাথে এই অঞ্চলের বাণিজ্যিক গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার রেল সংযোগ হচ্ছে, ফলে পরিবহন জটিলতা আর থাকছে না। এখন থেকে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক গতি অতি দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।'
উদাহরণ স্বরূপ তিনি বলেন, খুলনার রূপসা নদী মোংলা হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলেছে। এর দুই তীরে খুলনা থেকে মোংলার জয়মনি পর্যন্ত দেশের সব বৃহত্তর শিল্পগ্রুপগুলো জমি কিনে রেখেছে। ইতোমধ্যে সিলিন্ডার গ্যাসের কয়েকটি ফ্যাক্টরি তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। অন্যান্যরা বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণের কাজ শুরু করে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, 'রিকন্ডিশনড গাড়ি এখান দিয়ে বেশি আমদানি হচ্ছে। হিমায়িত মাছ ও পাট বেশি রপ্তানি হচ্ছে। গার্মেন্টস পণ্যও পরিবহন শুরু হয়ে গেছে। মোংলা বন্দর ও খুলনা শহরের মাঝামাঝি বিমান বন্দর নির্মাণ হচ্ছে। এখন গ্যাসের সংযোগ চালু হলে শিল্পের অগ্রগতিতে আর কোন বাধা থাকবে না।'
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী বলেন, মোংলা বন্দরে নৌ, সড়ক ও রেলপথের মাল্টিমোডাল যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। ফলে পণ্য পরিবহন অনেকটা সহজ হবে।'
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ট্রানজিট সুবিধার আওতায় ভারত, নেপাল ও ভুটানে পণ্য পরিবহন সহজ করতে ২০১০ সালে খুলনার ফুলতলা রেলস্টেশন থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ স্থাপন প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর একনেকে অনুমোদন পায় প্রকল্পটি।
ভারত সরকারের ঋণ সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লার্সেন অ্যান্ড টার্বো ও ইরকন ইন্টারন্যাশনাল। আর ট্র্যাক লিংকিং করছে আরেক ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইরকন ইন্টারন্যাশনাল। প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। কয়েক ধাপে মেয়াদ বাড়িয়ে সর্বশেষ প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।
ফুলতলা-মোংলা পর্যন্ত নয়টি প্লাটফর্ম রাখা হয়েছে। এছাড়া শেষ হয়েছে একশত সাতটি ছোট ব্রীজ ও নয়টি আন্ডারপাস নির্মাণ কাজ। এই রেলপথের দৈর্ঘ্য ৯১ কিলোমিটার।
খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ৯ নভেম্বর প্রকল্পের উদ্বোধন হবে। তবে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। প্রকল্পের মেয়াদ আছে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ওই সময়ের মধ্যে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করা হবে।