গৌরীপুরে ১০০ মেগাওয়াটের নতুন সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প পাচ্ছে চীনা কোম্পানি
'নো ইলেক্ট্রিসিটি, নো পেমেন্ট' পদ্ধতিতে বেসরকারিখাতে ১০০ মেগাওয়াটের আরও একটি সৌরভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
ক্যাসিওপিয়া ফ্যাশন লিমিটেড, জিজি ক্লিন এনার্জি ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি এবং ক্যাসিওপিয়া অ্যাপারেলস লিমিটেডের চীনা কনসোর্টিয়াম 'বিল্ড, ঔন অ্যান্ড অপারেট' ভিত্তিতে ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুরে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করবে।
বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে ট্যারিফ প্রস্তাব অনুমোদন করেছে বলে সভা শেষে জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান।
অনুমোদিত ট্যারিফ অনুযায়ী, সরকার আগামী ২০ বছর ধরে কেন্দ্রটি থেকে ডলারপ্রতি ০.১০/কিলোওয়াট ঘণ্টা দরে বিদ্যুৎ ক্রয় করবে, যা বর্তমান এক্সচেঞ্জ রেট অনুযায়ী ১১.০৫ টাকা কিলোওয়াট ঘণ্টা। বর্তমান এক্সচেঞ্জ রেট অনুযায়ী কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ে দুই দশকে সরকারের মোট ব্যয় হবে ৩৫৮০.৮০ কোটি টাকা।
এই কেন্দ্র নির্মাণে ২৪ মাস সময় লাগবে বলে টিবিএসকে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা।
তবে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে বিলকৃত মাসের পরবর্তী মাসটির প্রথম দিনের সোনালী ব্যাংকের ডলার-টাকা এক্সচেঞ্জ রেট বিবেচনা করবে সরকার। অর্থাৎ, টাকার অবমূল্যায়ন হলে বিদ্যুতের দামও বাড়বে।
সর্বজনীন বিদ্যুৎ সেবা প্রদান ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়ন ও প্রসারে গুরুত্ব দিচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির সবচেয়ে বড় উৎস সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সরকার বেসরকারিখাতের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট একজন কমকর্তা টিবিএসকে জানান, স্পন্সর কোম্পানি নিজ ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় জমির সংস্থান, বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য ট্রান্সমিশন লাইন, সাবস্টেশন নির্মাণ সহ সম্পূর্ণ প্রকল্প ব্যয় নির্বাহ করবে।
স্পন্সর কোম্পানি ২৫ বছর মেয়াদে সরকারের সঙ্গে পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট করতে বিদ্যুৎ বিভাগকে প্রস্তাব দিয়েছিল। তাদের প্রস্তাবে ট্যারিফ প্রস্তাব করা হয়েছিল ডলারপ্রতি ০.১৪/কিলোওয়াট ঘণ্টা, যা বর্তমান এক্সচেঞ্জ রেট (১১০.৫০ টাকা) অনুযায়ী ১৫.৪৭ টাকা।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, গত এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত তিনটি সৌরভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ট্যারিফ অনুমোদন করেছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এর মধ্যে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালে ৪৪ মেগাওয়াট ও রামপালে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের ট্যারিফ নির্ধারণ করা হয়েছে ডলারপ্রতি ০.১০/কিলোওয়াট ঘণ্টা এবং নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের ট্যারিফ নির্ধারণ করা হয়েছে ডলারপ্রতি ০.০৯৯৮/কিলোওয়াট ঘণ্টা।
সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের পাঠানো সার-সংক্ষেপে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ ইভাকুয়েশনের জন্য প্রস্তাবিত সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রে একটি ১৩২ কেভি কমন সুইচইয়ার্ড নির্মাণ করতে হবে এবং সেখান থেকে নির্মানাধীন শম্ভুগঞ্জ গ্রিড উপকেন্দ্র প্রান্তে বে-এক্সটেনশনের জন্য প্রায় ৯.৫ কিলোমিটার ১৩২ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণ ও প্রয়োজনীয় জমির সংস্থান করবে স্পন্সর কোম্পানি।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় ১০০ মেগাওয়াটের আরেকটি সৌরভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রস্তাব রয়েছে, যা টোটাল ফ্রেন এসএ লিমিটেড জিসিএইচকিউ আনন্দ এনার্জি পিটিই লিমিটেড গঠিত কনসোর্টিয়াম বাস্তবায়ন করবে। কমন সুইচইয়ার্ডের নির্মাণ ব্যয়, শম্ভুগঞ্জ গ্রিড উপকেন্দ্র প্রান্তে প্রয়োজনীয় জমি কেনা এবং সঞ্চালন লাইনের নির্মাণ ব্যয় উভয় স্পন্সর কোম্পানি আনুপাতিকহারে বহন করবে।
এছাড়া, আশুগঞ্জ ৫৫ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক রেন্টালবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ বৃদ্ধি এবং ট্যারিফ অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। স্পন্সর কোম্পানি প্রিসিশন এনার্জি লিমিটেডের সঙ্গে সরকারের ২য় দফা (৫ বছর) চুক্তির মেয়াদ গত এপ্রিলে শেষ হলে কোম্পানিটি মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করে। 'নো ইলেক্ট্রিসিটি, নো পেমেন্ট' ভিত্তিতে কমিটি প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ৬.২৫৬ টাকা হিসাবে পাঁচ বছরের জন্য চুক্তি নবায়নের অনুমোদন দিয়েছে। এই বর্ধিত মেয়াদে ট্যারিফ বাবদ স্পন্সর কোম্পানিকে ১২০৫ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে।
সভায় স্পট মার্কেট থেকে ৩৩.৬০ লাখ এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। প্রতি এমএমবিটিইউ ১৬.৩৪ ডলার হিসাবে প্রায় ৭১৩ কোটি টাকায় এই এলএনজি সরবরাহ টোটাল এনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড।