রাজনৈতিক অস্থিরতায় স্থবির মৌলভীবাজারের পর্যটন ব্যবসা
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র মৌলভীবাজারে এবার পর্যটকের আগমন অনেকটাই কমেছে। যদিও শীতকাল এ অঞ্চলে পর্যটনের ভরা মৌসুম হিসেবে পরিচিত।
পর্যটক কমতে থাকায় এ সংশ্লিষ্ট খাতে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মানুষের জীবিকা সংকট দেখা দিয়েছে। সেইসাথে স্থানীয় অর্থিনীতির ৩০ শতাংশ পর্যটনের ওপর নির্ভর থাকায় সেখানেও লেগেছে মন্দা।
মৌলভীবাজারের পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, কোভিড-১৯ মহামারির পর ব্যবসা এখন আরেক সংকটের মুখোমুখি এ অঞ্চলের পর্যটন ব্যবসা।
পর্যটন সেবা সংস্থার শ্রীমঙ্গলের সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক জানান, মৌলভীবাজার জেলায় মোট হোটেল রিসোর্টের সংখ্যা প্রায় দেড়শ। এইসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন প্রায় ৩ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারী। এর বাইরে পর্যটকদের ঘিরে বিভিন্ন ব্যবসা পরিবহন গাইডসহ আনুমানিক আরও ২ হাজার মানুষ আছেন, যাদের আয়ের প্রধান উপায় পর্যটন। কিন্তু বর্তমানে পর্যটক না আসায় ভরা মৌসুমে তারা বিপাকে পড়েছেন।
শামসুল হক বলেন, "নতুন বিনিয়োগকারীসহ সবাই অপেক্ষায় থাকেন শীতের আগমের; কারণ তখন ভরা মৌসুম। এবারও তাই প্রত্যাশা ছিল। আমি নিজেও নতুন করে কিছু বিনিয়োগ করেছি, কিন্তু হরতাল-অবরোধ আর রাজনৈতিক অস্থিরতায় এখন পর্যটক একেবারেই নেই। এভাবে চলতে থাকলে কর্মচারী ছাঁটাই করতে হবে, অনেকে আবার ব্যাংক লোন নিয়ে প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন, তারাও ঋণের জালে বন্দী হবেন।"
শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসনের জরিপ অনুসারে, স্থানীয় অর্থনীতির ৩০ শতাংশ পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল।
কিন্তু গত কয়েকদিনের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এবার ভরা মৌসুমেও নেই পর্যটক। শহরের খাবার হোটেলসহ পর্যটক নির্ভর বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিক্রি কমেছে ২০ থেকে ৮০ শতাংশ।
নির্জন ইকো রিসোর্টের পরিচালক ছোটন হক জানান, "আমরা কয়েক বন্ধু মিলে গত বছর রিসোর্ট করেছি। গত মৌসুমে ছিল আমাদের শুরু এবং নিজেদের গুছানোর সময়। টার্গেট ছিল এই মৌসুম থেকে পুরোদমে শুরু হবে। কিন্তু মৌসুমের শুরুতেই হোঁচট খেয়েছি। এখন যেখানে শতভাগ বুকিং থাকার কথা, সেখানে বুকিং শূন্য।"
বিক্রি কমেছে স্থানীয় হোটেলসহ পর্যটকনির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। গত কয়েক বছরে প্রচুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, যা পর্যটক নির্ভর। তেমনি একটি প্রতিষ্ঠান টি হাউজ।
টি হাউজের পরিচালক হৃদয় শুভ জানান, "আমরা চালু করেছি প্রায় ২ মাস হলো। ভালোই চলছিল সব, কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়াতে ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে বেচা-বিক্রি। চলতি মাসে আমাদের লস গুণতে হবে, কর্মচারীদের বেতন মূলধন থেকে দিতে হবে। শুরুতেই লসের মুখ দেখে আমরা হতাশ।"
শ্রীমঙ্গল পদ্মা টি হাউজের পরিচালক মেঘনাথ হাজরা জানান, "পর্যটকরা আমাদের চায়ের বড় অংশের ক্রেতা। কিন্তু কিছুদিন ধরে পর্যটক না আসায় চা বিক্রিতে ভাটা পড়েছে। আমার নিজের বিক্রি কমেছে অন্তত ৫০ শতাংশ।"
পর্যটন সেবা সংস্থার সাংগঠনিক সম্পাদক এস কে দাস জানান, এভাবে আর কিছুদিন চললে অনেককেই কর্মচারী ছাঁটাই করতে হবে; যা করতে হয়েছিল করোনাকালীন সময়ে।
"আমার নিজের রিসোর্ট এই সময়ে ১৫ দিন থেকে ১ মাস আগেই বুকড হয়ে যায়, কিন্তু এ বছর সব ফাঁকা। দ্রুত অবস্থার উন্নতি হবে এই প্রত্যাশায় আছি," বলেন তিনি।
ট্যুরিজমের সঙ্গে জড়িয়ে আছে স্থানীয় ট্যুর গাইডদের জীবীকা। তারা এখন বেকার সময় কাটাচ্ছেন।
লাউয়াছড়া ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তাপস পাল জানান, "কয়েকটি সংগঠন রয়েছে। এরমধ্যে শুধু আমাদের সংগঠনে আছে ২০ জনের মত, যাদের পরিবার নির্ভরশীল এই ট্যুরিজমের ওপর। ভরা মৌসুমে একটানা এরকম পর্যটক শূন্যতা আমরা দেখিনি। ফলে বেকার সময় কাটাচ্ছি।"
সামগ্রিক বিষয়ে পর্যটক সেবা সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সামছুল হক জানান, "রাজনৈতিক অস্থিরতা ঠিক হলে এবং মানুষ ঘুরতে যাওয়াকে নিরাপদ মনে করলে, দ্রুত সব ঠিক হয়ে যাবে। তখন আবারও পর্যটকদের ভীড় বাড়বে। আমরা সেই অপেক্ষায় আছি।"